উদ্বোধনের পরও ট্রেন চলার খবর নেই
আখাউড়া-আগরতলা ও খুলনা-মোংলা রেলপথ
বাংলাদেশ রেলওয়ের আখাউড়া-আগরতলা ও খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প দুটির উদ্বোধন করা হয়েছে গত বছরের ১ নভেম্বর। কিন্তু এখনো রেলপথ দুটিতে ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দুটি প্রকল্পের উদ্বোধন হলেও মূলত ট্রেন চলাচলের উপযোগী হয়নি। ভারতীয় ঋণে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প দুটি ছাড়াও কুলাউড়া-শাহবাজপুর এবং ঢাকা-টঙ্গী তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ ও টঙ্গী-জয়দেবপুর ডুয়েলগেজ ডাবললাইন প্রকল্পের অবস্থাও আশাব্যঞ্জক নয়। এ দুটি প্রকল্পের কাজ কবে শেষ হবে তাও নিশ্চিত করে বলা মুশকিল বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হুমায়ুন কবির আমাদের সময়কে জানিয়েছেন, অল্প দিনের মধ্যেই খুলনা-মোংলায় ট্রেন চলাচল শুরু হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে রয়েছে। মোংলা থেকে যশোর পর্যন্ত কমিউটার ট্রেন চলবে। সম্ভাব্য তারিখ পহেলা বৈশাখ। আর আখাউড়া-আগরতলা রুটে আপাতত পণ্যবাহী ট্রেন চলবে। দুই দেশের বন্দরের অবকাঠামোগত বিষয়াদিসহ বাণিজ্যিক চুক্তির কিছু প্রক্রিয়া এখনো বাকি। জানা গেছে, বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ার সঙ্গে ভারতের আগরতলা রেলপথটি যুক্ত করতে প্রকল্প নেওয়া হয় ভারতীয় ঋণে। আখাউড়ার গঙ্গাসাগর স্টেশন থেকে ভারতের আগরতলার নিশ্চিন্তপুর স্টেশন পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রেন পরিচালনার পরিকল্পনা। কিন্তু উদ্বোধনের সাড়ে চার মাস পরও আলোর মুখ দেখেনি। গত বছরের ১ নভেম্বর প্রকল্প উদ্বোধন করা হলেও ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৯৬ শতাংশ। ঢাকা থেকে আখাউড়া পর্যন্ত রেললাইনটি মিটারগেজের। তাই ভারতের সঙ্গে আগরতলা রেললাইন দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন পরিচালনা সম্ভব নয়। পণ্যবাহী ট্রেনও চালু হয়নি প্রস্তুতির অভাবে। এ রেলপথ নির্মাণে ভারত ঋণ দিয়েছে ৪২১ কোটি টাকা। প্রকল্পব্যয় ৪৭৮ কোটি টাকা। প্রকল্পের বাংলাদেশ অংশে ১০ দশমিক ১ কিলোমিটার রেলপথ ঘিরে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল। এ রেলপথে কবে ট্রেন চলবে তা কেউই সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না।
গত বছরের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে উদ্বোধন হওয়া আরেকটি প্রকল্প খুলনা-মোংলা রেলপথ। এ রেলপথের কাজ আজ ১৫ মার্চের মধ্যে বুঝিয়ে দিতে ঠিকাদারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ-সংক্রান্ত নথিতে দেখা যায়, সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা না করে ২০১০ সালে প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়। সে সময়ে ৬৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। দুই দফায় বেড়ে তা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এতে ভারত ঋণ দিচ্ছে ২ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা। ভারতের ঋণে খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প ২০১০ সালের ডিসেম্বরে অনুমোদন পায়। পরিকল্পনা ছিল ৩ বছরে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে। কিন্তু দুবার সংশোধন করে প্রকল্প মেয়াদ ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্প অগ্রগতি ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ।
আরও পড়ুন:
হরতাল-অবরোধে শীতের পোশাক ব্যবসায় মন্দা
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রেল সচিবের সভাপতিত্বে ভারতীয় ঋণের নেওয়া প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানে খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পের ব্যাপারে বলা হয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী, প্রকল্পে মালামালের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব ছিল ভারতীয় ঠিকাদার ইরকনের। প্রকল্পের প্যাকেজ-১-এর ভ্যারিয়েশনের প্রস্তাব রেল মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর্যায়ে রয়েছে। ব্যালান্স ট্র্যাক লিংকিংয়ের কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি। তাই ট্রেন চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
রেল সূত্র জানিয়েছে, দিনাজপুরের পাবর্তীপুর থেকে রংপুরের কাউনিয়া পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ গত ডিসেম্বরে শেষ হয়ছে। তবে ১ শতাংশও অগ্রগতি হয়নি ভারতীয় ঋণের এ প্রকল্পে। অর্থাৎ নির্মাণকাজ শুরু করতেই আরও কয়েক বছর লাগবে। এখনো সমীক্ষা ও নকশা হয়নি। প্রকল্পটি ২০১৮ সালে অনুমোদিত এক হাজার ৬৮৩ কোটি টাকায়। একই অবস্থা তিন হাজার ৫০৬ কোটি টাকার খুলনা-দর্শনা ১২৬ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পেরও। এই দুই প্রকল্পে ভারতের ৪ হাজার ৫৭ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার কথা।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
এদিকে এক যুগ আগে অনুমোদন পায় ঢাকা-টঙ্গী তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ রেললাইন লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর ডুয়েলগেজ ডাবললাইন প্রকল্পটি। অগ্রগতি মাত্র ৩৩ শতাংশ। এ ছাড়া কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয় ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বৈঠকে। ২০১১ সালের জুলাইয়ে অনুমোদিত এ প্রকল্পের ব্যয় ৪৭৭ শতাংশ বেড়েছে। প্রকল্পের অনুমোদনের পর সাড়ে ১২ বছরে কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ। প্রকল্পটিতে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পরামর্শক নেই। তিন দফা সময় বাড়িয়েও পরামর্শক পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল