নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে
যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রয়াত শিল্পপতি নুরুল ইসলামের কন্যা মনিকা নাজনীন ইসলাম। বর্তমানে তিনি যমুনা গ্রুপের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অস্ট্রেলিয়ায় পড়ালেখা শেষে বাবার হাত ধরে যমুনা গ্রুপের ব্যবসায় আসেন তিনি। তার নেতৃত্বেই স্বল্প সময়ের মধ্যে যমুনা ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড অটোমোবাইলস লি. দেশের স্বনামধন্য ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড হিসেবে রূপ নিয়েছে। দেশের স্বনামখ্যাত এই প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনে একজন তরুণ নারী হিসেবে তার অভিজ্ঞতা, নারীদের কর্মপরিবেশ, কর্মক্ষেত্রে নারীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি নানা বিষয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। আলাপচারিতায় ছিলেন লাবণ্য লিপি
একজন তরুণ বয়সী নারী হিসেবে যমুনা গ্রুপের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কী কী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে?
নারী হিসেবে অনেক চ্যালেঞ্জই আসে। এসব মোকাবিলা করতে আমি আমার বাবার কথা স্মরণ করি। আমার বাবা প্রয়াত চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম তার সারা জীবনের অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা, অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধার বিনিময়ে যমুনা গ্রুপকে যে আকাশসম উচ্চতায় রেখে গেছেন, আমি সন্তান হিসেবে তার আদর্শ ও নীতিকে সমুন্নত রেখে এই গ্রুপের চলমান অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টায় নিজেকে সর্বতোভাবে নিয়োজিত করেছি।
বাবা বছরের পর বছর আমাদের হাতে-কলমে শিখিয়ে গেছেন, এত বড় প্রতিষ্ঠান কীভাবে চালাতে হয়। তাই বাবার শিক্ষা, আদর্শ ও নীতিকে ধারণ করেই আমি কোম্পানির ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছি।
আপনার কোম্পানিতে অনেক নারী কর্মরত আছেন এবং আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীদের কর্মপরিবেশ কেমন বলে মনে হয়?
আমাদের কোম্পানিতে যেসব নারীকর্মী আছেন তারা স্বচ্ছন্দে ও নিরাপদেই এখানে কাজ করেন। আমরা নারীদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করি। তা ছাড়া আমি নিজেও একজন নারী। তাই সহজেই বুঝতে পারি তাদের কিসে সমস্যা আর কিসে সুবিধা। এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত ও পরামর্শ গ্রহণে আমরা সব সময় নারীদের অনুক‚ল পরিবেশের কথাটাই মাথায় রাখি। আমরা বিশবা স করি, পরিবেশ যত অনুক‚ল থাকবে, নারীরা তত বেশি প্রডাক্টিভ কাজে নিয়োজিত করতে পারবেন।
আমাদের দেশে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়লেও ক্ষমতায়ন সেই হারে বাড়েনি। এর কারণ কী?
আরও পড়ুন:
বৈষম্যের ছোবলে নারীর শ্রমবাজার
এ কথা ঠিক যে, কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। কিন্তু প্রান্তিক নারীরা এখনো অবহেলিত। দেশের একেক অঞ্চলের নারীদের জীবন সংগ্রামের ধরন একেক রকম। উপক‚লীয় অঞ্চল, উত্তরাঞ্চল- এমনকি পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষের জীবনাচরণ অঞ্চলভেদে ভিন্ন। আমি মনে করি নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। গ্রামীণ নারীরা গৃহশ্রম, কৃষি-শিল্প খাতে কাজ করলেও তারা প্রত্যাশিত মর্যাদা ও স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত। প্রান্তিক নারীদের শ্রম, মর্যাদা এবং অধিকার প্রতিষ্ঠা না করা গেলে তাদের জীবনমান উন্নত হবে না। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও একজন নারী এবং সফল নেতা। উনাকে অনুসরণ করলেও নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হতে পারে সহজেই।
একজন নারীকে সফল হতে হলে তার কোন বিষয়গুলো গুরুত্ব দিতে হবে?
একজন নারী সফল হওয়ার জন্য অনেক কিছু করতে পারেন। এটি তার নির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং আকাক্সক্ষার ওপর নির্ভর করে। তিনি কী অর্জন করতে চান তা শনাক্ত করতে হবে আগে। তার পর সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। কাজের প্রতি ধারাবাহিকতা, অবিচল এবং নিবেদিত থাকা খুব জরুরি। জীবনকে সংগঠিত রাখুন, যা আপনাকে আপনার কাজ এবং দায়িত্বের শীর্ষে থাকতে সাহায্য করবে। ব্যর্থতা জীবনের একটি অনিবার্য অংশ, আপনার ভুলগুলো থেকে শিখুন এবং তা উন্নতি করতে ব্যবহার করুন। আপনার ক্ষেত্রে অন্য লোকদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলুন, তা পেশাদার প্রতিষ্ঠানে যোগদানের মাধ্যমে, নেটওয়ার্কিং ইভেন্টে যোগদানের মাধ্যমে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে হোক। আপনার কাছে সুযোগ আসার জন্য অপেক্ষা করবেন না, সেগুলো তৈরি করুন। নিজেকে এমন লোকদের সঙ্গে ঘিরে রাখুন যারা সাফল্য অর্জন করেছে এবং আপনাকে আপনার যাত্রায় গাইড করতে পারে।
এখন যারা তরুণ, তাদের সম্পর্কে কিছু বলুন। তাদের ভবিষ্যতের ক্যারিয়ারের জন্য প্রস্তুতি কেমন হতে হবে?
আধুনিক সময়ে ক্যারিয়ারবিষয়ক বিভিন্ন সেমিনার, বই এবং বিশেষজ্ঞ মতামত থেকে আমরা সব সময় শুনে থাকিÑ ‘ঋড়ষষড়ি ুড়ঁৎ ঢ়ধংংরড়হ’ অর্থাৎ আপনার যে বিষয়ে আগ্রহ বেশি, যা নিয়ে জানতে, শিখতে এবং কাজ করতে ভালো লাগে সেটা নিয়েই আপনি কাজ করুন। নিজের আগ্রহের বিষয় নিয়ে কাজ করলে একজন মানুষ সে বিষয়ে বেশি মনোসংযোগ করতে পারেন। এতে শেখার কাজটি দ্রæত হয়। নিজের আগ্রহের বিষয়ে কাজ করলে মানুষের মধ্যে কাজে একঘেয়েমি আসে না। এ ছাড়া সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলে সে যে কোনো বিষয়ে সফল হবেই। তরুণ নেতৃত্বকেই দায়িত্ব নিতে হবে।
দেশের বাজারে ব্যবসা সম্প্রসারণে কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে এই মুহূর্তে?
আরও পড়ুন:
ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন মানবজাতি
যমুনা গ্রুপ বিশ্বাস করে সরকারের শিল্পবান্ধব নীতি-সহায়তা, কাঁচামাল আমদানি সহজীকরণে এ শিল্পকে আরও এগিয়ে নেবে এবং দেশের উন্নয়নে ও কর্মসংস্থানে ব্যাপক ভ‚মিকা রাখবে। স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমদানিনির্ভর ব্যবসা না চালিয়ে উৎপাদনশীল ব্যবসায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যার কারণে আমরা এখন রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এয়ার কন্ডিশনার ও গ্যাস স্টোভ উৎপাদন করছি। ভবিষ্যতে সব ধরনের হোম অ্যাপ্লায়েন্স তৈরি করার উদ্যোগ নিচ্ছি।
যমুনা ইলেকট্রনিক্স এবং অটোমোবাইলস লিমিটেড ভোক্তাদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে কী কী পণ্য এখন বাজারে সরবরাহ করছে?
প্রফিটের চেয়ে কোয়ালিটি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। যমুনা গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান যমুনা ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড অটোমোবাইলস লি. ২০১৪ সালে বৃহৎ পরিসরে ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদন শুরু করে। আধুনিক যন্ত্রপাতি, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, দক্ষ জনবল, উন্নত কাঁচামাল ও প্রতিনিয়ত উদ্ভাবনী ও উৎকর্ষ সাধনের ফলে যমুনা মানুষের আস্থা অর্জন করেছে।
আমাদের রয়েছে রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার, ডিপ ফ্রিজ, গ্যাসের চুলা, মোটরসাইকেল, ওয়াশিং মেশিন, এলইডি টিভি, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, রাইস কুকার, ফ্যান, বেøন্ডারসহ যাবতীয় হোম ও কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য! আমরা খুব শিগগিরই বাজারে নতুন কিছু পণ্য ভোক্তাদের জন্য উন্মুক্ত করে দেব।
বেস্ট কুলিং পারফরম্যান্সে সবার কাছে সুপরিচিত ব্র্যান্ড যমুনা রেফ্রিজারেটর নিয়ে আপনার মুখে কিছু শুনতে চাই?
মানুষের ক্রমবর্ধমান চাহিদা, সতেজ খাবার ও সুস্থতার কথা মাথায় রেখে যমুনা ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড অটোমোবাইলস লি. এখন বাংলাদেশের রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার ক্যাটাগরিতে নাম্বার ওয়ান ব্র্যান্ড হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। দেশব্যাপী ছড়িয়ে আছে যমুনা ইলেকট্রনিক্সের সার্ভিস সেন্টার। প্রতি ৫ বছরে ক¤েপ্রসার পরিবর্তনের হার প্রায় ১%-এর নিচে যা বাজারে প্রচলিত রেফ্রিজারেটরের তুলনায় অনেক কম। সাধারণত রেফ্রিজারেটর বা হোম অ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ৭-১০% ত্রুটি থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের একমাত্র রেফ্রিজারেটর ব্র্যান্ড যমুনা যার উৎপাদন Production Error ১%-এর নিচে।
আরও পড়ুন:
রহস্যে ঘেরা এক অসম যুদ্ধ!
আপনাকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা।
বিশ্বের সব নারীর প্রতি আমারও শুভেচ্ছা রইল। নারী শুধু নারী হিসেবে নয়, মানুষের মর্যাদায় বেঁচে থাকুক। পুরুষের সমান্তরালে দাঁড়িয়ে কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাক- এই প্রত্যাশা।