যাত্রীর ‘ভরসা’ হয়ে ওঠা বিআরটিসি সেবা অব্যাহত থাকবে?
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান- বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) বহরে সারাদেশে বাস আছে প্রায় এক হাজার ৩৫০টি। এর মধ্যে ২৬৫টি বাসের মেয়াদ আছে আগামী বছর পর্যন্ত। বহরে নতুন বাস কবে যোগ হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। ফলে হরতাল-ধর্মঘটসহ যে কোনো সংকটে যাত্রীদের ‘ভরসা’ হয়ে ওঠা বিআরটিসি তাদের সেবা অব্যাহত রাখতে পারবে কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। আবার বেসরকারি বাসের ওপর অতিনির্ভরতা যাত্রীদের দুর্ভোগ ও ভোগান্তির একটা কারণ। এ ক্ষেত্রে সরকার বিআরটিসির বাসে নজর দিলে জিম্মি দশা থেকেও যাত্রীরা রেহাই পেতেন বলে মনে করেন অনেকে।
১৯৬১ সালে যাত্রা শুরু হলেও বিআরটিসি এখনো লাভজনক হয়নি। বেতন দিতে না পারায় প্রায়ই আন্দোলনে নামতে হয় শ্রমিকদের। অর্থাভাবে গাড়ি মেরামত ও জ¦ালানি খরচ মেটাতেও হিমশিম খেতে হয়। এখন সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। ২০২১ সালের পর বকেয়াসহ বেতন পরিশোধ করা যাচ্ছে। দেরিতে হলেও লাভের মুখ দেখছে করপোরেশনটি। কিন্তু বহরে থাকা অপ্রতুল বাস দিয়ে কাক্সিক্ষত যাত্রীসেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
বিআরটিসির বহরে ভারতের টাটা কোম্পানির আছে ২৩০টি, অশোক লিল্যান্ডের ৮৭২টি, চীনের ফাও কোম্পানির একটি, ডংফেং ইয়াংশির ১০৭টি ও দক্ষিণ কোরিয়ার দাইয়্যু থেকে আনা ১৪০টি বাস রয়েছে। দ্বিতল বাস রয়েছে ৫৬৫টি। এর মধ্যে চলাচল করছে ৫৪৫টি। বাকি ২০টির মেরামত চলছে। ৫৬৫টি বাসের মধ্যে ২৬৫টির মেয়াদ আগামী বছর শেষ হবে।
বিআরটিসির কর্মকর্তারা জানান, গণপরিবহনের চাহিদা মেটাতে ইলেকট্রিক বাস আমদানি করা হবে। এর মধ্যে অগ্রাধিকারে রয়েছে ১০০টি একতলা এসি বাস। সঙ্গে স্পেয়ার পার্টস ১৫ শতাংশ, ইলেকট্রিক চার্জিং স্টেশন থাকবে ২৫টি, চার্জিং স্টেশন অবকাঠামো থাকবে ২০টি এবং রেকার আনা হবে ২৫টি।
আরও পড়ুন:
হরতাল-অবরোধে শীতের পোশাক ব্যবসায় মন্দা
বিআরটিসির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, করপোরেশনকে গণপরিবহনবান্ধব করা হয়েছে। যাত্রীদের চাহিদা পূরণকে প্রাধান্য দিয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে বিআরটিসি। আয় বৃদ্ধি, ব্যয় সংকোচন ও সেবার মান উন্নয়ন- এটি হচ্ছে স্লোগান। ইতোমধ্যে লাভের মুখ দেখতে পেরেছে, যা ছিল অচিন্তনীয়। আমরা চেষ্টা করছি যাত্রীচাহিদা পূরণে পদক্ষেপ নিতে। তিনি আরও জানান, গত তিন বছরে বিআরটিসির ৪০০ অচল গাড়ি নিজস্ব জনবল দিয়ে সচল করা হয়েছে। এগুলো আগামী ৫ বছর চলবে। এসব বাস অকেজো ছিল। আবার যেসব বাস আগামী বছর মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে আরও ৫ বছর সচল রাখা সম্ভব।
জানা গেছে, সারাদেশে ২২টি বাস ডিপো ও ২টি ট্রাক ডিপোর মাধ্যমে গণপরিবহনের সেবা দিয়ে যাচ্ছে বিআরটিসি। ২০১৪ সালে বহরে থাকা ১৫৪৬টি বাসের মধ্যে ১১৫০টি সচল (অনরুট) ছিল। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ১৫৩৮টি বাসের মধ্যে সচল ছিল ১০৪৩টি। ২০১৭ সালে সচল ছিল ৯৬৬টি বাস। এরপর ২০১৮ সালে মোট বাস ছিল ১৪৩৫টি। এর মধ্যে সচলের সংখ্যা ৯৩৭টি। ২০১৯ সালে ১৮৫৪টি বাসের মধ্যে ১০২৯টি এবং ২০২০ সালে ১৮২৫টির মধ্যে ৮৮৫টি সচল ছিল। ২০২১ সালে ১৭৬২টি বাসের মধ্যে ১১০৬টি, ২০২২ সালে ১৩৫০টির মধ্যে ১২৩৩টি এবং ২০২৩ সালে ১৩৫০টি বাসের মধ্যে ১২৫৩টি সচল রয়েছে।
দেশে বিআরটিসির বাস রুট ২০৮টি। আর আন্তর্জাতিক রুট রয়েছে ৫টি। রুটগুলো হচ্ছে- ঢাকা- কোলকাতা-ঢাকা, ঢাকা-আগরতলা-ঢাকা, কোলকাতা-ঢাকা-আগরতলা, ঢাকা-খুলনা-কোলকাতা এবং ঢাকা-শিলং-গৌহাটি। আরও তিনটি আন্তর্জাতিক রুটে শিগগির বাস সার্ভিস চালু হচ্ছে। সেগুলো হচ্ছে- ঢাকা-শিলিগুড়ি-ঢাকা, ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা-কোলকাতা এবং কক্সবাজার-চট্টগ্রাম-আগরতলা। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক এসব রুটে বাস সার্ভিসে চাহিদা অনুযায়ী বাস নেই। যেসব বাস রয়েছে তার একটি অংশের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে আগামী দুই বছরে।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
বিআরটিসির কর্মকর্তারা জানান, গণপরিবহনের চাহিদা পূরণে নতুন নতুন বাস আমদানিতে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ভারতীয় ১০০টি একতলা এসি বাস ও চার্জিং স্টেশন, কোরিয়ান ১০০টি একতলা এসি বাস ও ২৫টি চার্জিং স্টেশন, কোরিয়ান ৮টি চার্জিং স্টেশন স্থাপন, ভারতীয় ২০০টি ইলেকট্রিক ও ২০০টি ডিজেল একতলা এসি বাস ও ৫০টি ট্রাকসহ কিছু রেকার আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিআরটিসির ট্রাকের সংখ্যা ৫৮৫টি। এর মধ্যে সচল আছে ৫০০টি। চাহিদা অনুযায়ী ট্রাক আনার পরিকল্পনা রয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।