ইন্টারনেট ব্যবহারে নারীদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান জরুরি

অনলাইন ডেস্ক
২৪ নভেম্বর ২০২৩, ২২:১৮
শেয়ার :
ইন্টারনেট ব্যবহারে নারীদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান জরুরি

দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়লেও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার খুবেই সীমিত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চতুর্থ শিল্পবের মহাসড়কে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে তথ্যপ্রযুক্তির সবোর্চ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। একই সঙ্গে নারীদের অংশগ্রহণ, সমৃদ্ধ প্রযুক্তিগত জ্ঞান, নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। 

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিআরটিসি) ও বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম (বিআইজিএফ) এর যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশ উইমেন ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম ২০২৩ এর তৃতীয় বাষির্কীর আলোচনায় সেমিনারের বক্তরা এসব কথা বলেন।

ইন্টারনেটের কার্যকর ব্যবহার ও ইন্টারনেট ব্যবহারে জ্ঞান বাড়াতে প্রান্তিক নারীদের অন্তর্ভুক্ত করার আহবান জানান পিআইড’র ডেপুটি ইনফরমেশন অফিসার নাসরিন জাহান লিপি। তিনি বলেন, তথ্য মানে শক্তি। নারীরা যদি ফেসবুক ইউটিউব ব্যবহার করতে পারে তবে ইন্টারনেটের পজেটিভ ব্যবহার কেন নয়?

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক টেলিযোগাযোগ এন্ড আইসিটি বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অপরাজিতা হক, এমপি বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহারে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে এসব কার্যকর যথেষ্ট নয়। বিদেশি ডেটাস্টোর এর ওপর নির্ভরতা কমাতে দেশীয়ভাবে তথ্যের সংরক্ষণে সরকার উদ্যোগ নিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, কদিন পরে যন্ত্রনির্ভর এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রণ করবে সবকিছু এর জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। ইন্টারনেট জগতের বিশাল প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের ক্ষেত্রে নানান চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেগুলি মাথায় রেখেই এখন থেকেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।

তিনি বলেন, বিশাল প্রযুক্তিজগতে প্রবেশের ক্ষেত্রে আমাদের নানা বাধা রয়েছে। এর জন্য শক্তিশালী সাইবার সুরক্ষা গুচ্ছ থাকতে হবে তবে সাইবার ব্যবহারে মানুষদের উদ্দীপ্ত করে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারে ইতিবাচক অর্জন সম্ভব হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বিটিআরসির সিস্টেম এন্ড সার্ভিস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খলিল উর রহমান বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে ডিজিটাল সাক্ষরতা খুবই জরুরি। দেশে ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি আছে কিন্তু ব্যবহার জ্ঞান না জানায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়বে না।

তথ্য প্রযুক্তির সাথে নারীদের সম্পৃক্ততা বাড়িনোর তাগিদ দিয়ে সেমিনারে লিখিত বক্তব্যে নূর ই নুসরাত বলেন, তথ্য প্রযুক্তির নির্ভর কর্মসংস্থান ও নতুন নতুন তথ্য ধারণা দেওয়া গেলে সমৃদ্ধ প্রযুক্তিগত জ্ঞান নির্ভর নারী সমাজ তৈরীতে সহায়ক হবে।


অস্ট্রেলিয়া থেকে অনলাইনে সেমিনারে যুক্ত হন কমিউনিকেশন এন্ড অনলাইন কমিউনিটি এপিনিকের ম্যানেজার সিয়েরা পেরি। তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিতে আরো দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন ফেলোশিপের মাধ্যমে দক্ষ হবার সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধারায় ওই সব ফেলোশিপ পাবার সুযোগ রয়েছে।

অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ উইমেন ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরামের চেয়ারপার্সন শামীমা আক্তার। বাংলাদেশ উইমেন ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরামের ভাইস-চেয়ারপার্সন মিসেস জান্নাতুল বাকেয়া কেকা অংশগ্রহণকারীদের স্বাগত জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নারীরা প্রমাণ করেছেন তারা সমস্ত দায়িত্ব নিতে পারেন এবং সমস্ত উন্নয়ন উদ্যোগে অবদান রাখতে পারেন। তাশমী চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক, বাংলাদেশ উইমেন ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম সভা পরিচালনা করেন।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নূর-ই-নুসরাত জেরিন তার মূল বক্তব্য উপস্থাপনে উল্লেখ করেন যে নারীরা পুরুষদের থেকে পিছিয়ে নেই। নারীরা এখন সব পেশায় নিয়োজিত। ইন্টারনেট শাসনে নারীদের অংশগ্রহণ নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের একটি বড় উদাহরণ। গ্রামীণ নারীদের ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হবে এবং এর ব্যবহার শিখতে হবে।

জনাব সাইফ রহমান, চিফ অপারেশন অফিসার, জেননেক্সট টেকনোলজিস লিমিটেড, উল্লেখ করেন বাংলাদেশ ডিজিটাল এবং ইন্টারনেট খাতে অসাধারণ অগ্রগতি করেছে। অনেক দেশ বাংলাদেশকে অনুসরণ করে। তিনি বলেন, সরকার কারিকুলাম তৈরি করছে, গবেষণা অনুদান দেবে এবং সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করবে। বাংলাদেশ মেঘনা ক্লাউড নামে নিজস্ব ক্লাউড তৈরি করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

শারমিন ইসরাইল তানিয়া, যুগ্ম সম্পাদক, বাংলাদেশ উইমেন ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম গত ৩ বছরের এর অগ্রগতি উপস্থাপন করেন।

জাকিয়া আক্তার, ম্যানেজার এবং টিম লিড কাস্টমার সাপোর্ট, টেকনোলজি, ব্র্যাকনেট বলেন, আমরা সব ধরনের মানুষকে ইন্টারনেট সেবা দিয়ে থাকি। আমরা কর্পোরেট সেক্টরে কোন সমস্যায় পড়ছি না, তবে সাধারণ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহারে মনোযোগী না হওয়ায় সাধারণ মানুষের জন্য আমরা অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হই।

বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের অ্যাডভোকেট সোহানা তাহমিনা তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের তৃণমূল নারীদের ক্ষমতায়ন করতে হবে এবং তাদের ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হবে। নারীরা সুযোগ পেলে সব কিছু করতে পারে। আমাদের উচিত তাদের জন্য সুযোগ তৈরি করা।

সভার সভাপতি শামীমা আক্তার, চেয়ারপারসন, বাংলাদেশ উইমেন ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম সকল অতিথি ও বক্তাদের তাদের মূল্যবান বক্তব্য ও পরামর্শের জন্য এবং সেশনে উপস্থিত থাকার জন্য সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান।


গ্রামীণ বাংলাদেশে ইন্টারনেটের অর্থপূর্ণ সংযোগ

বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) এর কমিশনার ইঞ্জি. শেখ রিয়াজ আহমেদ সেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবং মডারেটর হিসেবে সেশন পরিচালনা করেন বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. মিজানুর রহমান।

খান মোহাম্মদ কায়সার, ডিজিএম, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) এবং জনাব আজহার এইচ চৌধুরী, চিফ অপারেটিং অফিসার, এডিএন টেলিকম লিমিটেড প্যানেল স্পিকার হিসেবে সেশনে বক্তৃতা করেন।

আজহার এইচ. চৌধুরী বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ ইন্টারনেট খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। ৪জি চালু করার পর আমরা অনেক এগিয়েছি। আমাদের গ্রামীণ যোগাযোগের উন্নতি ও সম্প্রসারণ করতে হবে। এখন ৪জির সুবিধা সব এলাকায় সমানভাবে প্রয়োজন।

খান মোহাম্মদ কায়সার, ডিজিএম, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) বলেন, ইন্টারনেটের খরচ শহরাঞ্চলের চেয়ে গ্রামীণ এলাকায় বেশি। বিটিআরসির নেতৃত্বে একটি কমিশন এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।

বিশেষ অতিথি ব্রিগেডিয়ার মো. জেনারেল মোঃ এহসানুল কবির, মহাপরিচালক, প্রকৌশল ও অপারেশন বিভাগ, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন বলেন ৪জি বাংলাদেশের ভৌগোলিক এলাকার ৯৬% কভার করেছে। ৩জি আর বের হবে না। এখন ৪জি আরও উন্নত হবে। বিটিআরসি সারা দেশে স্থিতিশীল ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে আরও প্রচেষ্টা নিচ্ছে। এক দেশ এক রেট এর উদ্যোগ আরও পর্যালোচনা করা হবে।

প্রধান অতিথি ইঞ্জি. বিটিআরসি এর কমিশনার শেখ রিয়াজ আহমেদ তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে বিটিআরসি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট বা ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, ৩০০ প্যাকেজ আমরা কমিয়ে ৪০ প্যাকেজ করেছি। এখন পরিষেবা ব্যবহার করা সহজ।

তিনি বলেন, আমরা ৪জি থেকে ৫জি-তে চলে যাচ্ছি। এখন আমাদের দেশে স্মার্টফোন তৈরি হচ্ছে যা ৬০% এর বেশি চাহিদা পূরণ করে। এখন গ্রামীণ এলাকা থেকে যে কেউ পাসপোর্ট, ভর্তি, অর্থ স্থানান্তর ইত্যাদির মতো অনেক প্রয়োজনীয় পরিষেবার জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে৷ ইন্টারনেটের স্থায়ীত্ব ও উন্নত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের জবাবদিহিতা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস এম শামীম রেজা সভাপতিত্বে মূল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মোঃ মিনহাজ উদ্দিন, সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি বলেন, আমরা এখন দু’টি জগতে বাস করছি একটি বাস্তব জগত এবং আরেকটি ভার্চুয়াল জগত। বাংলাদেশে ১২.৬১ কোটি ইন্টারনেট গ্রাহক এবং ১১.৪০ কোটি মোবাইল ফোন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। ৬ কোটি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করেন। তিনি সত্য সংবাদের চেয়ে ছয় গুণ দ্রæত মিথ্যা সংবাদ ছড়ায় বলে উল্লেখ করেন। আমাদের জানতে হবে কীভাবে ভুয়া খবরের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়।

বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশন (বিএনএনআরসি)-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব এএইচএম বজলুর রহমান গভর্নেন্স অব ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ওপর তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, বিশ্ব প্রেক্ষাপটে শাসন ব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সমস্ত বিশ্ব নেতাদের সমর্থন ছাড়া সামাজিক প্ল্যাটফর্ম নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। আমাদের নিজস্ব নিরাপত্তা ও নিরাপত্তা কৌশল থাকতে হবে। তিনি পরামর্শ দেন যে আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে নিরাপদ করতে বিটিআরসি উদ্যোগ নিতে পারে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খলিল-উর-রহমান, এনডিসি, মহাপরিচালক, সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগ, বিটিআরসি, তিনি বলেন সবার জন্য ইন্টারনেট এবং একটি স্থিতিশীল পরিষেবা দেওয়ারার চেষ্টা করছি আমরা।

প্রধান অতিথি ড. মুসফিক মান্নান চৌধুরী, এফআইডিএম, এফসিআইএম, কমিশনার, বিটিআরসি বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রযুক্তি ব্যবহার করতে জানতে হবে। কয়েক বছর ধওে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচুর গবেষণা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিপণনে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার খুবই জনপ্রিয় এটি এক ধরনের মিডিয়া। ব্যবসার জন্য এর বিপণন। সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের স্বাধীনতা দেয় এবং বিভিন্ন উপায়ে আমাদের প্রভাবিত করে। আমাদের শিখতে হবে কিভাবে আমাদের সুবিধার জন্য ব্যবহার করতে হয়।