কুল চাষেই কূল পেয়েছেন রাঙামাটির তরুণ সুশান্ত
আর্থিক সংকট, দারিদ্র্যের পীড়ন আর হতাশায় অনেকটা কূলকিনারাহীন সুশান্ত কুল চাষেই যেন কূল পেয়েছেন সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যার। বল সুন্দরী, ভারতসুন্দরী ও কাশ্মীরি কুলের সঙ্গে মিশ্র ফল বাগান গড়ে এখন তিনি স্বাবলম্বী।
রাঙামাটি সদর উপজেলার সোনারাম কারবারিপাড়ার বাসিন্দা সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা আমাদের সময়কে জানান, একসময় কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার করে অভাব-অনটনে দিন কাটত তার। সেই পেশা থেকে বের হয়ে অনেকটা প্রাণ পেয়েছেন কুল চাষে। এক হাজার কুলগাছ থেকে গত বছর তিনি বিক্রি করেছেন ১০ টন কুল (বরই)। যার বাজারমূল্য ছিল ১০ লাখ টাকা। রাঙামাটি শহরের তবলছড়ি বাজারসহ স্থানীয় হাট-বাজারগুলোতে তিনি ফল বিক্রি করেন বলে জানান।
রাঙামাটি সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের সোনারাম কারবারিপাড়ায় তিনি এ বাগান গড়ে তোলেন। স্থানীয়দের কাছে এখন তিনি সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। কৃষিতে জাতীয় পুরস্কার লাভের আশা ও সম্ভাবনা রয়েছে সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যার। তার এই সফলতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সূর্যতিষ্য ভিক্ষু, মঙ্গলধন চাকমাসহ বেশ কয়েকজন মানুষ মিশ্র ফল বাগান গড়ে তুলেছেন।
২০১৬ সালে ১০ একর জমিতে মিশ্র ফলের বাগান শুরু করেন সুশান্ত। বর্তমানে তার বাগানে ১ হাজার কুলগাছ, ১ হাজারটি পিলারে ৪ হাজার ড্রাগন ফলের চারা গাছ, ৫০০ কাঁঠালি কলার চারা, ৩০০ মাল্টার চারা, ৭০০ কফি চারা, ৫০০ সুপারিগাছ, ১০০ লটকানগাছ, ৫০টি লিচুগাছ ও ৫০টি রাম বুটানগাছসহ ২০ ধরনের ফলের গাছ রয়েছে।
সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যার বাগানে কাজ করা শ্রমিক সুকুমার চাকমা বলেন, এই বাগানে আমরা ১০-১২ জন শ্রমিক হিসেবে কাজ করি। সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা বাগান করায় আমাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তার সফলতা দেখে আমরা উদ্বুদ্ধ হয়েছি। আমিও ভবিষ্যতে এ ধরনের বাগান করার পরিকল্পনা নিয়েছি।
সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা আরও জানান, বাগানে ১২ জন শ্রমিক কাজ করেন। শ্রমিকের বেতন, গোবর, সার, ওষুধ প্রয়োগ ও বাগান পরিচর্যায় খরচ হয় ১২ লাখ টাকা। বছরে তার জমা থাকে তিন লাখ। কৃষি বিভাগ থেকে মাল্টা চারা ৪২০টি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড থেকে ৩৩০টি কফি চারা নেওয়া হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত পরামর্শ দেন।
রাঙামাটি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু মো. মনিরুজ্জামান আমাদের সময়কে বলেন, সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যার মিশ্র ফলদ বাগান স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তাদের মধ্যে বেশ আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। তিনি এখন স্বাবলম্বী বলা যায়। তার বাগানে স্থানীয় কয়েকজনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তবে সুশান্তকে তার নিজের বাগানের দিকে আরও বেশি নজর দিতে হবে। ফলের বাগানের প্রয়োজনীয় যত্ন নিতে হবে।