প্রজন্ম বাঁচাতে-রুখতেই হবে পরিবেশ দূষণ
বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণ এমন মাত্রায় গিয়ে ঠেকেছে যে, এ পরিবেশ দূষণের কারণেই বিভিন্ন শহরে বসবাসকারী মানুষ বছরের পর বছর নানা ধরনের জটিল রোগে ভুগছে। পরিবেশ সচরাচর গ্রাম থেকে শহরে বেশি দেখা যায়। শহরে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানা এর জন্য অনেকটাই দায়ী বলা চলে। গ্রামে এখনও কিছু কিছু জায়গায় প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ রয়েছে যা অত্যন্ত নির্মল এবং বিশুদ্ধ কিন্তু শহরের হাজারও কলকারখানা এবং অপরিকল্পিত নগরায়ন মানুষকে বেকায়দায় ফেলেছে। প্রকৃতপক্ষে এখন গ্রাম থেকে শহরে, গঞ্জ থেকে নগরে সব খানেই পরিবেশ দূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে। অসংখ্য প্লাস্টিক বোতল, জার, পলিথিন ডোবা নালায় আটকে থেকে শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টিসহ পরিবেশের ক্ষতি সাধন করে চলেছে।
অন্যদিকে পরিবেশ রক্ষায় অতি প্রয়োজনীয় বৃক্ষ, বন, পাহাড় কেটে মানুষ অবিরামভাবে গড়ে তুলছে জনবসতি। এতে দিনের পর দিন পরিবেশ দূষণ বেড়েই চলেছে। পরিবেশের জন্য কোনো দেশে সর্বমোট ২০% বনভূমি সংরক্ষিত থাকার জন্য জরুরি হলেও তা এখনও গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। বরং দেশের পাহাড় খেকো, ভূমি দস্যু আর বন উজাড়কারীদের বদৌলতে দিন দিন কমেই চলেছে পরিবেশ ভারসাম্যের প্রয়োজনীয় এসব উপকরণগুলো।
আমরা এমনই এক জাতি যে শুধু বর্তমানের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের কথা চিন্তা করে জীবনের সবকিছুই বিসর্জন দেই। এমনভাবে নিত্যদিন বনভূমি উজাড় হলে, পাহাড় কেটে জনবসতি গড়ে তুললে সব জায়গায় প্লাস্টিকের জিনিস ব্যবহার করলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যে অন্ধকারে তলিয়ে যাবে তা নিয়ে আমরা কেউ ভেবেও দেখি না। বাংলাদেশে গ্রাম অঞ্চলের চেয়ে শহরে জনসংখ্যার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি কারণ জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে অসংখ্য মানুষ শহরে এসে বসবাসের ফলে শহরে উপচেপড়া মানুষের ভিড় লক্ষ করা যায়। শহর এলাকায় শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে বেশকিছু পরিচ্ছন্ন কর্মচারী এবং কর্মকর্তা দিন-রাত পরিশ্রম করা সত্ত্বেও দেখা যায় বিভিন্ন নালায় অসংখ্য প্লাস্টিকের বোতল এবং পলিথিন জমে আছে আর এর জন্য নালায় ময়লা পানি জমে থাকে মাসের পর মাস এবং সেই নোংরা ময়লা পানিতে জন্ম হয় অসংখ্য মশা। তাছাড়া এসব প্লাস্টিকের জিনিস না পুড়িয়ে নালাতে ফেলে দেয়ায় চারিদিকে পরিবেশ দূষণ ছড়াচ্ছে। অথচ আমরা যারা এসব প্লাস্টিকের জিনিস নালায় ফেলছি তারা যদি একটু সচেতন হয়ে তা নগরীর সংরক্ষিত ডাস্টবিনে ফেলি তাহলে আমাদের এমন পরিবেশ দূষণের শিকার হতে হতো না।
আরও পড়ুন:
বৈষম্যের ছোবলে নারীর শ্রমবাজার
পলিথিনের জিনিস ব্যবহার করে তা নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা কিংবা পুড়িয়ে ফেলা এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা যদি এই দায়িত্ব সবাই সঠিকভাবে পালন করি তাহলে শহরের নালাগুলো পরিষ্কার থাকবে তাতে পানি আটকে থাকতে পারবে না এবং পরিবেশ দূষণও হবে না।
বন উজাড়ের ফলে আমাদের পরিবেশে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিয়ে পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড বেড়ে যাবে এবং দেখা দেবে পরিবেশ বিপর্যয়। প্রকৃতপক্ষে পরিবেশ দূষণ বা এর বিপর্যয় রুখতে সরকারের পাশাপাশি আমাদেরও কিছু করণীয় রয়েছে। আমরা যদি একটু সচেতন হই তাহলে পরিবেশ দূষণ অনেকটাই কমে যাবে। যেমন- বন, পাহাড়, বৃক্ষাদির প্রতি যদি আমরা একটু সদয় হই, সব মানুষকে বুঝিয়ে বলি যে বন, পাহাড়, বৃক্ষ নিধন করলে প্রকৃতি তার ভারসাম্য হারাবে এবং এক সময় রুষ্ট হয়ে প্রতিশোধ নেবে তাহলে হয়তো এর সুফল পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন:
ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন মানবজাতি
আসুন আমরা নিজেরাই সচেতন হই, পরিবেশের দূষণ রোধ করতে সবাই সচেতন হই, দেশকে বাঁচাই, নিজেরা বাঁচি এবং প্রজন্মকে বাঁচাই।
রতন কুমার তুরী : কলেজ শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক
আরও পড়ুন:
রহস্যে ঘেরা এক অসম যুদ্ধ!