তরুণ লেখকদের ভাবনা ও প্রত্যাশায় এবারের বইমেলা
বাংলাদেশের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোর মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ অমর একুশে বইমেলা। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে এ মেলা হয়। তরুণ লেখকরাও হাজির হন নতুন নতুন বই নিয়ে। এ বছরও বেশ কজন তরুণ লেখকের বই মেলায় এসেছে। এবারের বইমেলা নিয়ে তরুণ লেখকরা কী ভাবছেন তাদের অভিমত তুলে ধরছেন -খাইরুল আলম জীম
প্রতিবারই প্রত্যাশার পারদ থাকে অনেক ওপরে
শফিক রিয়ান
সারা বছর যত বই প্রকাশ হোক না কেন, একজন লেখক হিসেবে বইমেলার জন্য ব্যাপক আগ্রহ কাজ করে। মেলায় নতুন বই প্রকাশ হয়। নতুন বইকে কেন্দ্র করে বছর ঘোরে। পাঠক ও শুভাকাক্সক্ষীদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়। বইয়ের মাধ্যমে এত সুন্দর যোগাযোগ বইমেলা ছাড়া অন্য কোনোভাবে সম্ভব বলে মনে হয় না। মেলা নিয়ে প্রতিবারই প্রত্যাশার পারদ থাকে অনেক ওপরে। মেলায় পাঠক আসবে। পাঠক-লেখকের ভিড়ে মেলায় তৈরি হবে এক আনন্দমুখর পরিবেশ। লোকারণ্য ধরে হাঁটতে হাঁটতে আমি গল্প খুঁজব। পাতায় উঠাব আর খুব করে চাইব, পাঠকরা আমার বইটা ছুঁয়ে দেখুক। দু-চার পাতা পালটে দেখুক। খানিকটা যত্ন নিয়ে হাত বুলাক। আমার বিশ্বাস, ‘এতটুকু যথেষ্ট পাঠক আকৃষ্ট করার জন্য। প্রতিবছরই মেলায় হাজারটা প্রত্যাশা নিয়ে হাজির হই। আমার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা পাঁচটি। দুটি কাব্যগ্রন্থ, তিনটি উপন্যাস। এবারের বইমেলায় প্রকাশ পেয়েছে ‘বিষাদের ছায়া’ উপন্যাস। এবারও প্রত্যাশা অনেক। তবে বিশেষভাবে একটা প্রত্যাশার কথা জানতে চাইলে বলব, ভালো।
এই বইমেলা নিয়ে আমিও বেশ উচ্ছ্বসিত
কারিশমা ওয়াজেদ শ্রেয়সী
বসন্তের আগমনী হাওয়া বলে যায় বাতাসে বইয়ের গন্ধ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অষ্টাদশী কন্যার মতো গা সাজিয়ে বসেছে বইমেলা। এই বইমেলা বাঙালির মিলনমেলা। প্রতিবছরই বইমেলা আনমনেই বয়ে আনে স্বস্তি। তরুণ লেখক হিসেবে এই বইমেলা নিয়ে আমিও বেশ উচ্ছ্বসিত। এবারের বইমেলায় আমার প্রথম একক কাব্যগ্রন্ত ‘অশ্বমেধ’ আসছে। বন্ধু, সুহৃদ, পাঠকদের সঙ্গে মিলনমেলার বর্ণাঢ্য এ আয়োজন আমাকে বেশ তৃপ্ত করে।
আরও পড়ুন:
বৈষম্য ঘোচানোই সত্যিকার মানবিক অর্জন
স্টল বিন্যাস হওয়া চাই আরও সুসজ্জিত
মোহাম্মদ অংকন
একজন লেখক হিসেবে অমর একুশে বইমেলা নিয়ে কিছু না কিছু প্রত্যাশা থাকে। এবার প্রত্যাশা থাকবেÑ স্টল বিন্যাস হওয়া চাই আরও সুসজ্জিত। যাতে পাঠক প্রচণ্ড ভিড়ের মাঝেও কাক্সিক্ষত বইয়ের স্টলটি খুঁজে পায়। এ ছাড়া বইমেলার প্রত্যেকটি প্রবেশ ও বাহির হওয়ার পথ একই সঙ্গে খোলা রাখা জরুরি। এ ছাড়া মেলায় খাবারের দোকান বসানোটা বাদ দিতে হবে। কেননা বইমেলায় এসে মানুষ বই না কিনে সেসব দোকানে চড়া দামে খাবার কিনে খেয়ে পকেট শূন্য করে বই না কিনে বাসায় ফেরে। বইমেলায় থাকা বাহারি খাবারের দোকান পাঠক-দর্শকদের বইয়ের চেয়ে খাবার কেনার প্রতি বেশি প্রভাবিত করে যা দৃষ্টিকটু মনে হয়।
বইপ্রেমীরা অপেক্ষায় কখন জমবে বইমেলা
নুসরাত জাহান জেরিন
কবি, লেখক, পাঠক এবং সংস্কৃতিমনা মানুষরা অপেক্ষায় থাকেÑ কখন জমবে এই বইমেলা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাঙালির প্রাণের মেলায় আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বেহিসেবি রঙ’ নিয়ে হাজির হয়েছি। আমি আশা করি, পাঠক এবং শুভাকাক্সক্ষীরা কবিতা এবং শব্দের গাঁথুনিতে জীবনের পথ চলায় হাসি, আনন্দ, দুঃখে রঙের হিসাব মেলাতে গিয়ে বেহিসেবি হলেও রঙের হিসাব-নিকাশে অভিজ্ঞতার আলোকে দারুণভাবে ভবিষ্যতে পা ফেলবে।
আরও পড়ুন:
ইবিতে শীতের আগমনী বার্তা
মনেপ্রাণে চাইছি তরুণরা ভালো লেখা নিয়ে আসবেন
জান্নাতুল বাকি
বইমেলাকে কেন্দ্র করে গড়ে প্রতিবছর চার থেকে সাড়ে চার হাজার নতুন বই যুক্ত হয়। আর নতুন লেখকও সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু তাদের আগ্রহ থাকে মূলত দুই ধরনের। প্রথমত, প্রচার, দ্বিতীয়ত, বিনিয়োগ উদ্ধার। সে কারণে তারা নিজেরাই প্রচারমুখী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। অনেকের কাছে এই বিষয়টি দৃষ্টিকটু বা লেখকের সঙ্গে যায় না বলে মনে হলেও অনেক সময় লেখক বইটির প্রচারের দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেন। কিন্তু একজন লেখকের হ্যাংলাপনা শুধু অশোভনই নয় বরং লেখক সমাজকে হেয় করা। স্টলের আশপাশে কাউকে দেখামাত্র বই ধরিয়ে দেওয়া রীতিমতো পাঠকের জন্য ‘বাজেট সন্ত্রাস’।
নতুন লেখকদের উচিত লেখার মান নিয়ে কাজ করা। পাঠকদের মাঝে নিজের লেখার গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করা। মনেপ্রাণে চাইছি তরুণরা ভালো লেখা নিয়ে আসবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, মানহীন বইয়ের ক্রেতার কারণেই এসব লেখক উৎসাহ পেয়ে থাকে।
একমাত্র পাঠকই পারে মানহীন লেখা উপেক্ষা করে বইমেলাকে সার্থক করতে।
আরও পড়ুন:
আগামীর পৃথিবী হবে নিপীড়িত মানুষের
বইয়ের পাঠক বাড়ুক, ছুঁয়ে দেখুক
সালমা জাহান সনিয়া
গুটি গুটি পায়ে বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটা নবীন লেখকের বাড়ছে বইয়ের সংখ্যা। বইকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর চলছে বইমেলা। বইমেলা প্রতিটা লেখক, পাঠকের জন্য একটা আবেগের জায়গা। বই স্পর্শ করা, বইয়ের ঘ্রাণ নেওয়া, অটোগ্রাফ, ফটোগ্রাফসহ মাসব্যাপী চলতে থাকে বইমেলা। বইয়ের প্রতি টান থেকেই যেন ফেব্রুয়ারির মাসজুড়েই থাকে বইয়ের আমেজ। তরুণদের মাঝে যেমন বই প্রভাব ফেলে, তেমনি শিশু কিংবা বয়স্কদের জন্যও বই হয়ে উঠছে বিনোদনের একটা জায়গা। প্রতিবছরের বইমেলাগুলোর তুলনায় এবারের বইমেলায় লেখককরা অনেক বেশি প্রত্যাশী। লেখকদের মূল উদ্দেশ্য লেখা ছড়িয়ে দেওয়া, পাঠকদের উচিত তা সাদরে গ্রহণ করা। এই দুইয়ের মাঝে সুসম্পর্ক স্থাপনের অন্যতম মাধ্যম হলো বইমেলা।
এবার লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছি
রায়হান আহমেদ তামীম
দীর্ঘ এক বছর পর পর বইমেলা আসে সাহিত্যপ্রেমীদের হৃদয়ের খোরাক জোগাতে। লেখক-পাঠক উভয়ই বইমেলার অপেক্ষায় সারা বছর মুখিয়ে থাকে। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। বইমেলার অপেক্ষায় প্রহর গুনতে গুনতে অবশেষে বইমেলা এলো, ইতোমধ্যেই কয়েকদিন পার হয়ে গেছে। বিগত বছরগুলোতে পাঠক হিসেবে মেলায় গেলেও এবার বইমেলায় লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছি। সে হিসেবে এবারের বইমেলা আমার জন্য অনেক বেশি আনন্দের। ‘যাবতীয় তুমি সমাচার’ নামে আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বইটি প্রকাশ করেছে স্বনামধন্য প্রকাশনা কিংবদন্তি পাবলিকেশনের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ‘দূরবীন’। বইটিতে ঠাঁই পেয়েছে গত ৮ বছরের বিভিন্ন সময়ে আমার লেখা প্রায় পঞ্চাশটি ছড়া, কবিতা। যার কিছু কিছু বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, পোর্টালে প্রকাশিত হয়েছে।