দক্ষ চালক তৈরির কাঠামো নিয়ে বসে আছে বিআরটিসি
দেশে মোট নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৫৯ লাখ ৫২ হাজার ৯২০। এর মধ্যে কেবল ঢাকায় রয়েছে ২০ লাখ ৮১ হাজার ২৬০টি। সে তুলনায় চালক রয়েছেন এক-তৃতীয়াংশ। আবার যারা চালক হিসেবে লাইসেন্স নিয়েছেন, তাদের অনেকের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। ফলে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। এর প্রধান কারণ, দেশে দক্ষ চালক তৈরির ব্যবস্থাপনায়ই ঘাটতি রয়েছে। বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দিলেও সুযোগ-সুবিধা একেবারেই নগণ্য। অথচ ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান বিআরটিসির সব সুযোগ-সুবিধা থাকলেও প্রচারের অভাবে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণার্থী পাচ্ছে না সংস্থাটি।
দেশে গাড়িচালক হওয়ার সনাতন পদ্ধতি হলো বাস-ট্রাকের হেল্পার বা কন্ডাক্টর থেকে চালক হওয়া। সাধারণত তারা ওস্তাদের (চালক) মাধ্যমে গাড়ি চালনায় হাতে খড়ি নেন। ডিউটিকালে সুযোগ বুঝে গাড়ি চালানো শেখেন তারা। এ কারণে গাড়ি চালাতে জানলেও ট্রাফিক আইন-কানুন কমই জানেন তারা। এই প্রক্রিয়ায় চালক তৈরি হওয়ায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে দেশে। বেসরকারিভাবে কিছু প্রতিষ্ঠান থাকলেও সেখানে অবকাঠামোগত ব্যবস্থাপনা কম।
এ অবস্থায় সরকারিভাবে প্রশিক্ষণে নজর দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) হতে পারত এর অন্যতম মাধ্যম। নিজস্ব প্রশিক্ষণ যান, ইনস্ট্রাক্টর, পর্যাপ্ত জায়গা ও সুযোগ-সুবিধা
আরও পড়ুন:
হরতাল-অবরোধে শীতের পোশাক ব্যবসায় মন্দা
সত্ত্বেও এখনো সর্বসাধারণের কাছাকাছি যেতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। এর বিপরীতে বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানে লক্কড়ঝক্কড়মার্কা গাড়ি দিয়ে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে নেই প্রশিক্ষণ দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত জায়গা বা অবকাঠামো।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চালক তৈরি হলে দেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতে পারে বিপুল জনগোষ্ঠীর। প্রশিক্ষিত হয়ে দেশের বাইরে গেলেও বেশি পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হতো। অথচ দক্ষ চালক ও কারিগর তৈরির ব্যবস্থা কাক্সিক্ষত ব্যবস্থা রয়েছে বিআরটিসির। সিমুলেটর সংযোজন করে এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণের সুযোগ রয়েছে সংস্থাটিতে। মডেল ও প্রকৃত যন্ত্রাংশের সাহায্যে যানবাহনের পরিচিতি ও ব্যবহারের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
বিআরটিসি সূত্র জানায়, ২০২৩ সালে ২৫ হাজার ২৬ জনকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ চালক তৈরির কথা জানিয়েছে সংস্থাটি। বিশ^ব্যাংকের প্রকল্পের সহায়তায় আগামী তিন বছরে ৬০ হাজার জনকে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের আওতায় আনার কথা রয়েছে। দক্ষ চালক তৈরির উদ্দেশ্যে বিআরটিসি দুটি নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ ৯৭ হাজার ৯২০ জনকে ভারী যানবাহন চালনার জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। আরেকটি প্রকল্পের আওতায় ৯ হাজার ৬০০ জনকে ভারী যানচালক এবং ৮৬৪০ জনকে হালক যানচালক হিসেবে তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বিআরটিসি।
এ বিষয়ে বিআরটিসির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, প্রশিক্ষণ প্রধানকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে নারী ও পুরুষকে বিভিন্ন যানবাহনের প্রশিক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। এর মাধ্যমে সারাদেশে দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরির কাজ করছে করপোরেশন। নিজস্ব প্রশিক্ষণ যানবাহন ও অবকাঠামো সুবিধা রয়েছে। আছেন দক্ষ প্রশিক্ষক।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
জানা গেছে, বেপরোয়া গাড়ি চালনায় প্রতিনিয়ত ঝরছে প্রাণ। এমন অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনারোধে দক্ষ চালক তৈরি অত্যন্ত জরুরি। সে কারণে বিআরটিসির ব্যবস্থাপনাকে কাজে লাগানো যায়। কিন্তু এ নিয়ে পর্যাপ্ত প্রচারণা নেই। ব্যক্তিগতভাবে গাড়ি চালনা শিখতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ক্ষেত্রবিশেষে গুনতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ। অথচ বিআরটিসিতে প্রশিক্ষণের জন্য রয়েছে বিপুল পরিমাণ জায়গা ও দক্ষ ইনস্ট্রাক্টর। আছে প্রশিক্ষণ যান। নেই শুধু প্রচার-প্রচারণা। এর জেরে দেশের একটি বড় জনগোষ্ঠী প্রশিক্ষিত হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নিরাপদ হচ্ছে না সড়ক।