চট্টগ্রামের নেত্রীরা সক্রিয় মহিলা এমপি হতে

হামিদ উল্লাহ, চট্টগ্রাম
২৫ জানুয়ারী ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
চট্টগ্রামের নেত্রীরা সক্রিয় মহিলা এমপি হতে

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের প্রায় সব আসনেই মনোনয়ন চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রীরা। চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি ছাড়া আর কেউ মনোনয়ন পাননি। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেননি তারা। তবে সংরক্ষিত আসনে এমপি হয়ে সংসদে যেতে তারা দৌড়ঝাঁপ করছেন। চেষ্টা-তদবিরে থাকা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ, কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগ ছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রীদের এই তালিকা বেশ দীর্ঘ।

নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ সংসদের সংরক্ষিত ৫০টি আসনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে। চলতি সপ্তাহে সংরক্ষিত নারী আসনের ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২২৩টি, জাতীয় পার্টি ১১টি, জাসদ ১টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ১টি, কল্যাণ পার্টি ১টি, স্বতন্ত্র ৬২টি আসন পেয়েছে।

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে এবার আওয়ামী লীগ ৩৮টি (নৌকা প্রতীকে জয়ী জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির দুজনসহ), জাতীয় পার্টি দুটি, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোটভুক্ত হয়ে ১০টি সংরক্ষিত আসন পেতে পারেন।

একাদশ সংসদে চট্টগ্রাম থেকে দুজন নারী সংরক্ষিত আসনে এমপি ছিলেন। এবার সেই সংখ্যা বেড়ে তিনও হতে পারে। একাদশ সংসদে সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান খান কায়সারের মেয়ে ওয়াসিকা আয়েশা খান এবং আরেক প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। এর মধ্যে ওয়াসিকা ছিলেন টানা ১০ বছর। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে সনি বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। আবার ওয়াসিকা যে কোনো সময় মন্ত্রিপরিষদে স্থান পেতে পারেনÑ এমন কথা রাজনীতিবিদদের মধ্যে আছে। সে ক্ষেত্রে নতুন মুখ আসতে পারেন চট্টগ্রামের আসনগুলোতে।

ওয়াসিকা আয়শা খান বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক। দশম সংসদেও তিনি সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।

জানতে চাইলে ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, গত ১০ বছর নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে জনকল্যাণকর কাজ করেছি। নেত্রীর কৃপায় সুযোগ হলে, আদর্শ সমুন্নত রেখে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাব।

ওয়াসিকার মতো কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক সাজেদা সুরাতও মহিলা এমপি হতে চান। তিনি লোহাগাড়া উপজেলার চুনতির প্রতিষ্ঠিত শাহ সাহেব পরিবারের সদস্য। সাজেদা সুরাত বলেন, নারী উদ্যোক্তা হিসেবে দেশের নারী সমাজকে এগিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছি। চট্টগ্রামে মহিলা আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করা এবং মহিলাদের দলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করাসহ বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। নেত্রী যদি এমপি হিসেবে মনোনীত করেন ভবিষ্যতে আরও বৃহৎ পরিসরে কাজ করতে পারব।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দিলোয়ারা ইউসুফও এবার এমপি হতে চান। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সংরক্ষিত রাউজান, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি ও চসিক (আংশিক) ওয়ার্ডের দায়িত্বে আছেন।

দিলোয়ারা ইউসুফ বলেন, দলের নেতাকর্মীদের ইচ্ছাতে আগেও মনোনয়ন চেয়েছি, এবারও মনোনয়নপ্রত্যাশী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবার আমার বিষয়টি বিবেচনায় রাখবেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাসন্তী প্রভা পালিত দলের মনোনয়ন চান। তিনি বলেন, আমি ৮ বার দলীয় মনোনয়নপত্র নিয়েছি। এবারও হাটহাজারী আসনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। প্রায় চার দশক ধরে আমি দলীয় রাজনীতি করছি।

গত বছর চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমদের মৃত্যুর পর ওই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জাসদ নেতা মইন উদ্দিন খান বাদলের স্ত্রী সেলিনা খান বাদল।

সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়ক জিনাত সোহানা চৌধুরীও দলীয় মনোনয়ন চান। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সদস্য।

প্রয়াত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আবদুল্লাহ আল হারুনের মেয়ে লুবনা হারুন বর্তমানে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনিও এই পদে আগ্রহের কথা জানান।

লুবনা হারুন বলেন, চট্টগ্রাম কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি কঠিন সময়ে। তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে এখন দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক পদে আছি।

চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরী মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য। তিনিও মনোনয়ন পেতে আগ্রহী। রিজিয়া রেজা চৌধুরী বলেন, গত ১০ বছর ধরে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় নৌকাকে জনগণের হৃদয়ে পৌঁছাতে রাত-দিন কাজ করেছি। এখানকার মানুষ এক সময় বলত নৌকায় ভোট দিলে ইমান চলে যাবে। সেই মিনি পাকিস্তানকে আমরা টুঙ্গিপাড়া বানিয়েছি। কিন্তু আওয়ামী লীগের বিভাজনের কারণে এখানে এবার নৌকা হেরে গেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি আমাকে মহিলা সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেন তাহলে স্থানীয় রাজনীতিতে ব্যালেন্স আসবে। আমরা কৃতজ্ঞ থাকব নেত্রীর কাছে।

এ ছাড়াও সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হতে আগ্রহী চট্টগ্রাম নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রয়াত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সহধর্মিণী হাসিনা মহিউদ্দিন, দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চেমন আরা তৈয়ব, প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ডা. আফসারুল আমীনের স্ত্রী ডা. কামরুন্নেছা।