দুর্ভোগ কমল দোয়ারাবাজারবাসীর
‘সুরমা নদীতে ব্রিজ (সেতু) হবে, জীবনেও কল্পনা করি নাই। ব্রিজের অভাবে কত কষ্ট ছিল আমাদের। রোগী নিয়ে সিলেটে যাওয়া, নদীর দক্ষিণ পাড়ে বিয়েশাদিতে যাওয়া নৌকা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। ব্রিজ হওয়ায় দুই মাস আগে আমরা গাড়িতে করে ছাতকে বিয়েতে গিয়েছি। শুধু বিয়েশাদিই নয়, রোগী নিয়ে সিলেটে যাওয়া, দেশের যে কোনো জায়াগায় আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে এখন সহজেই যাওয়া যাচ্ছে ব্রিজ হওয়ার কারণে। শেখ হাসিনার সরকারের কারণে আমরা এই উপকার পাইছি।’
এভাবে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার বড়কাপন এলাকায় সুরমা নদীতে সেতু নির্মাণের উপকারিতার কথা বলছিলেন দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্ত এলাকার চাইরগাঁও গ্রামের বৃদ্ধ মতিউর রহমান (৭২)।
শুধু মতিউর রহমানই নন, ছাতকের সুরমা নদীতে সেতু নির্মাণের ফলে খুশি দোয়ারাবাজার উপজেলার ছয়টি ও ছাতকের দুটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ।
জানা যায়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত উপজেলা সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের দেড় লাখের অধিক জনগোষ্ঠীর বসবাস ও উপজেলা সদর সুরমা নদীর উত্তরপাড়ে। যার কারণে এলাকাটি সারাদেশ থেকে ছিল বিচ্ছিন্ন। মুক্তিযুদ্ধের ৫নং নম্বর সেক্টরের চেলা সাব-সেক্টরের সদর দপ্তর বাঁশতলা ও টেংরা টিলা গ্যাস কূপটিও সুরমা নদীর উত্তরপাড়ে। যে কোনো অঞ্চলে যেতে সুরমা নদী পারাপারে নৌকা ও ফেরিই ছিল ভরসা। সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতায় ২০১৬ সালে সুরমা নদীতে সেতুর কাজ শুরু হলেও বরাদ্দ সংকট ও করোনার কারণে সেতুর কাজ বন্ধ ছিল প্রায় দেড় বছর। ১২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪০২ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে গত বছরে।
গত ১৯ অক্টোবর ভার্চুয়ালি এই সেতুর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সেতু নির্মাণে দুর্ভোগ কমেছে এবং হাসি ফুটেছে স্থানীয়দের মুখে।
সিএনজিচালক রফিক মিয়া বলেন, ‘বিরিজ হওয়ার আগে আমরা ফেরি দিয়া ছাতক, সিলেট যাইতাম। খুব কষ্ট অইত আমরার। ফেরি ও যানজটের কারণে ঘণ্টা-দেড় ঘণ্টা সময় লাগত। বিরিজ হওয়ায় আমরা খুউব শান্তিতে চলাফেরা করতাম পারতাছি। ’
ছাতকের নোয়ারাই ইউনিয়নের বাড়কাপন গ্রামের রাজু তালুকদার বলেন, ‘শুধু দোয়ারাবাজার উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও উপজেলা সদরই নয়, এই সেতুতে ছাতকের ইসলামপুর ও নোয়ারাই ইউনিয়নের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে। সড়ক যোগাযোগ চালু হওয়ায় মুমূর্ষু রোগী স্থানাস্তর, পণ্য পরিবহন ও যাতায়াত সহজ হয়েছে।’
দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরের পাশর্^বর্তী নৈনগাঁও গ্রামের বাসিন্দা জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুল খালেক বলেন, ‘সেতু নির্মাণে এমপি মুহিবুর রহমান মানিকের অনেক অবদান রয়েছে। তবে উপজেলা সদরের পাশে আরও একটি সেতু নির্মাণের প্রয়োজন।’
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামানিক বলেন, ‘এই সেতু চালুর ফলে দোয়ারাবাজার ও ছাতকের লোকজন অনেক উপকৃত হচ্ছে।’
দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান আল তানভির আশরাফী চৌধুরী বলেন, ‘সেতু নির্মাণ করে আমাদের দুর্ভোগ থেকে বের করে এনেছেন প্রধানমন্ত্রী। যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে পর্যটন এলাকা বাঁশতলায় পর্যটকরা আসত না। সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের প্রচেষ্টায় এখন সেতু হওয়ায় সারাদেশ থেকে পর্যটকরা সরাসরি বাঁশতলায় যেতে পারছে।’
স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, ‘সুরমা নদীতে সেতু নির্মাণ হওয়ায় সুরমা নদীর উত্তরপাড়ের বিভাজন দূর হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। দোয়ারাবাজারের মানুষ এখন সহজে ছাতক, সিলেটসহ সারাদেশে সহজে যাতায়াত করতে পারছেন। উপজেলা সদরের পাশে আরও সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়া চলমান আছে। আমরা আশাবাদী বর্তমান সরকারের মেয়াদেই সেতুটি নির্মাণ হবে।’