সড়কে পার্কিংয়ের পরিধি বাড়াবে ঢাকা উত্তর সিটি

শাহজাহান মোল্লা
২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শেয়ার :
সড়কে পার্কিংয়ের পরিধি বাড়াবে ঢাকা উত্তর সিটি

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ‘অন স্ট্রিট পার্কিং’ চালু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। পাইলট প্রকল্প হিসেবে রাজধানীর গুলশানের আটটি সড়কের ২০২টি স্থানে এ সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। ডিএনসিসি বলছে, সফলতা পাওয়ায় আরও কিছু সড়কে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছে তারা। পুরো সিটিতে বিভিন্ন সড়কে এ পদ্ধতি চালু হলে যত্রতত্র পার্কিং বন্ধের পাশাপাশি রাজস্বও বাড়বে। তবে নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, করপোরেশনের এ সিদ্ধান্ত অযৌক্তি। এমনিতেই সড়কে গাড়ি সরানো যায় না। তার ওপর এভাবে রাস্তায় পার্র্কিং চালু হলে অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি রেখে যাবে। তাতে সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হতে পারে।

নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, উন্নত দেশে অন স্ট্রিট কার পার্কিং ব্যবস্থা রয়েছে। তবে সেটি এমন সব সড়কে রাখা হয়েছে, যেন যানজট সৃষ্টি না হয়। তা ছাড়া উন্নত দেশগুলো ব্যক্তিগত গাড়িকে নিরুসাহিত করতে কার পার্কিং কম রাখাসহ উচ্চ হারে চার্জ নেয়; কিন্তু আমাদের দেশে যে পরিমাণ চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে, তাতে অনেকেই গাড়ি বের করার উৎসাহ পাবেন। তাই কাজটি করার আগে আরও গবেষণার প্রয়োজন।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান আমাদের সময়কে বলেন, রাজস্ব বাড়ানো মুখ্য বিষয় নয়। অন স্ট্রিট পার্কিং চালুর পর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় কতটা সুফল এসেছে, সেটি দেখতে হবে। পাশাপাশি কোনোভাবেই যেন ব্যক্তিগত গাড়িকে উৎসাহিত করা না হয়। রাজধানীতে কার পার্কিং ব্যবস্থা স্বল্পতা থাকায় অন স্ট্রিট কার পারর্কিং প্রয়োজন রয়েছে। তবে সেটি গবেষণা করেই করা উচিত।

ডিএনসিসির সিইও মো. সেলিম রেজা আমাদের সময়কে বলেন, আমাদের পরীক্ষামূলক কার পার্কিং চলছে। এর সফলতার ভিত্তিতে আরও বাড়াব। রাজস্ব আদায় নয়, যত্রতত্র পার্কিং বন্ধ করে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোই উদ্দেশ্য। এখন যেসব সড়কে চালু হয়েছে সেগুলোতে সুফল পাওয়া যাচ্ছে। এটা বেশি জায়গায় করতে পারলে যত্রতত্র পার্কিং বন্ধ হবে। তখন এর সুফল পাব। তাই আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছি।

পার্কিং সুবিধা নিশ্চিত করতে ‘ডিএনসিসি স্মার্ট পার্কিং অ্যাপ’ নামে একটি নতুন অ্যাপও চালু করেছে ডিএনসিসি। এর মাধ্যমে পরিবহন মালিকরা কাছাকাছি অবস্থিত পার্কিং স্থানগুলো চিহ্নিতসহ আগাম বুকিং দিতে পারবেন এবং তাদের অ্যাপের মাধ্যমেই পেমেন্ট করা যাবে। অ্যাপের বিকল্প হিসেবে ব্যবহারকারীরা ‘স্মার্ট পার্কিং কার্ড’-এর সুবিধাও নিতে পারেন। এই কার্ডগুলো রাস্তায় থাকা ওয়ার্ডেন বা ইসলামী ব্যাংকের গুলশান, বনানী শাখা থেকে সংগ্রহ করা যাবে। পাশাপাশি পার্কিংয়ের জায়গায় দায়িত্বরত ব্যক্তিদের কাছেও ফি দেওয়া যাবে। অন স্ট্রিট পার্কিং চালু হওয়ার পর প্রতিদিন ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার বেশি রাজস্ব আদায় হচ্ছে ডিএনসিসির।

পার্কিংয়ের ক্ষেত্রে প্রাইভেটকার, জিপ ও মাইক্রোবাসের জন্য প্রথম ২ ঘণ্টা ৫০ টাকা, তৃতীয় ঘণ্টা ৫০ টাকা এবং চতুর্থ ঘণ্টা থেকে ১০০ টাকা করে নেওয়া হবে। মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে প্রথম ২ ঘণ্টা ১৫ টাকা, তৃতীয় ঘণ্টা ১৫ টাকা এবং চতুর্থ ঘণ্টা থেকে ৩০ টাকা করে দিতে হবে।

প্রাথমিক পর্যায়ে গুলশানের ৫২, ৫৮, ৬২, ৬৩, ৬৪ ও ১০৩ নম্বর সড়ক, ডিআইটি সার্কুলার রোড এবং গুলশান-২ ইনার সার্কুলার রোডের ২০২টি স্থানে পার্কিং করা যাবে। যেখানে-সেখানে অবৈধ পার্কিং বন্ধ এবং নিরাপদ পার্কিং নিশ্চিত করতে পরীক্ষামূলকভাবে এই পদ্ধতি চালু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। গত ৮ নভেম্বর এই সেবার উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন।