রাতের পাখি

নিজস্ব প্রতিবেদক
১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শেয়ার :
রাতের পাখি

পাখিটিকে দিনের বেলায় খুব একটা দেখা যায় না। থাকে গাছের গুহায়, পোড়োবাড়ির ভেতরে। জানালার কার্নিশেও ঘাপটি মেরে থাকে। যখন সন্ধ্যা হয়, তখনই লুকানো জায়গা থেকে একটি একটি করে বের হয়ে আসে। বের হয় শিকারের সন্ধানে। পাখি এখন আর তেমন দেখা যায় না। কিন্তু নামটি সবার কাছে খুব পরিচিত। পেঁচা।

পেঁচা অনেক ধরনের। একেকটি একেক নামে পরিচিত। যেমনÑ হুঁতুম পেঁচা, লক্ষ্মী পেঁচা, ঈগল পেঁচা, রেখাযুক্ত মেছো পেঁচা, রাফাস মেছো পেঁচা, পেল মেছো পেঁচা, ছোট শিং পেঁচা, বড় শিং পেঁচা, তুষার পেঁচা ইত্যাদি। পেঁচা ইঁদুর, ব্যাঙ, পাখির ডিম খেয়ে জীবন ধারণ করে। তবে পোকামাকড়, মাছও খায়। এ পাখিটি সাধারণত একা একা বাস করে। বেশি কোলাহল পছন্দ করে না। পৃথিবীর সব প্রাণী যখন পাখা মেলে উড়ে বেড়ায়, তখন পাখা ঝাপটানোর এক ধরনের শব্দ হয়। মজার ব্যাপার হলো, পেঁচা যখন উড়ে বেড়ায়, তখন পাখা ঝাপটানোর কোনো শব্দ হয় না। নিঃশব্দে চোরের মতো গিয়ে শিকার ধরে ফেলে। পেঁচা পৃথিবীর সব দেশেই দেখতে পাওয়া যায়। পেঁচা আলো সহ্য করতে পারে না। এগুলো মাটির আশপাশেই শিকার খোঁজে। সাধারণত পুরুষের তুলনায় নারী পেঁচা আকারে বড়। পেঁচা মূলত চোখে দেখে বাইনোকিউলার ভিউয়ের মাধ্যমে। এ পদ্ধতিতে কোনো কিছু দেখতে হলে দুটি চোখই ব্যবহার করতে হয়। এতে দৃষ্টিসীমা বর্ধিত হয় বটে, তবে দৃষ্টি বদলাতে হলে প্রাণীটিকে পুরো মাথাটাই ঘুরিয়ে নিতে হয়। পেঁচারা সাধারণত ২৭০ ডিগ্রি পর্যন্ত মাথা ঘোরাতে পারে। এ প্রাণীটি নিয়ে বিশে^র বিভিন্ন দেশে প্রচলিত আছে নানা লোকগাথা। কোনো কোনো দেশে এ প্রাণী দিয়ে অক্ষরও বোঝানো হতো। যেমন প্রাচীন মিসরীয় হাইরোগ্লিফিক্সে ‘এম’ শব্দ বোঝানো হতো এই পেঁচা দিয়ে। প্রাচীন আজটেক ও মায়াদের কাছে পেঁচা ছিল মৃত্যু আর ধ্বংসের প্রতীক। গ্রিক পুরাণে পেঁচা এক দেবী, যিনি ছিলেন এথেনার সঙ্গী। এই পুরাণে পেঁচা বর্ণিত হয়েছে জ্ঞানশিল্প আর দক্ষতার প্রতীক হিসেবে। এদের কান এমনভাবে তৈরি, যেভাবেই শব্দ হোক না কেন, ঠিকই প্রাণীটির কানে পৌঁছে যায়।

আরও পড়ুন:

ঘুড়ির খেলা

পেঁচা কবে থেকে পৃথিবীতে বসবাস করছে, তা নিয়ে চলছে গবেষণা। কোনো কোনো গবেষকের মতে, মানুষের পৃথিবীতে আগমনের অনেক আগেই পেঁচা এই পৃথিবীতে এসেছে। এই আগে ঠিক কত বছর আগে, তাও সঠিকভাবে জানা যায় না। তবে ধারণা করা হয়, ডাইনোসরদের পৃথিবীতে আসার ৩ হাজার ৫০০ বছর আগেই পেঁচার জন্ম হয়েছে এই পৃথিবীতে। পেঁচার জীবাষ্ম গবেষণা করে গবেষকরা অনুমান করেন, আজ থেকে প্রায় ৬ কোটি বছর আগে পেঁচার জন্ম হয়েছে!

আরও পড়ুন:

ব্যাঙ্গারু