মিতুল ও ম্যাজিক সাইকেল

প্রতিভা রানী কর্মকার
১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শেয়ার :
মিতুল ও ম্যাজিক সাইকেল

সোনার মতো ঝকঝকে রোদ। চারপাশে সবুজ গাছ। এ সময় গ্রামের মাঠে অকারণে কেউ যায় না। কিন্তু মিতুল! সেই ভোর হতে না হতেই ছুটে বেড়ায় গ্রামের মাঠেঘাটে। মাঝে মধ্যে একটু দাঁড়ায় বা কোথাও বসে। মিতুলের সঙ্গে সঙ্গে সেও একটু জিরোয়। গাছের গায়ে যেন এলিয়ে পড়ে গল্প জুড়ে দেয়। গল্প শেষ না হতেই মিতুলের ডাকে আবার চলতে থাকে। সে আর কেউ নয়, সে মিতুলের ম্যাজিক সাইকেল। লাল রঙের সাইকেলটির চাকা দুটো, প্যাডেল, চেইন, হ্যান্ডেল আর সিট সবই যেন ম্যাজিক! চাকা ঘুরলেই মিতুল পাশের গ্রামে বন্ধুর বাড়ি পৌঁছে যায়। ছোটবেলায় মিতুল ভাবত, রাস্তায় ওই বড় গাড়িগুলোর মধ্যে না জানি কত বড় বড় অদৃশ্য মানুষ বসে আছে আর গাড়িগুলো চালাচ্ছে! মাঝে মধ্যে এটাও ভাবত, হয়তো এই গাড়িগুলো চালাতে অনেক বড় বড় ব্যাটারি লাগে! তবে রাঙা দাদুর দেওয়া মিতুলের এই ম্যাজিক সাইকেলটি চালাতে ব্যাটারি বা অদৃশ্য মানুষ কিছুই লাগে না, শুধু মনোযোগ আর ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন হয়। মিতুল এখন একাই এটি চালাতে পারে। ম্যাজিক সাইকেলটির বেলের ওই রিং রিং শব্দও মিতুল খুব পছন্দ করে। তবে অকারণে বেল বাজিয়ে শব্দ করে না। সাইকেলটি দেখতেও অনেক সুন্দর, একদম আলাদাভাবে সাজানো। আজ কয়েকদিন হলো মিতুলদের গ্রামের আসমা চাচির জ্বর। চাচি একা থাকেন। মিতুল সাইকেল নিয়ে মাঝে মধ্যে চাচিকে বাজার থেকে এটা-ওটা এনে দেয়। আজ চাচির জন্য ফল কিনতে মিতুল বাজারে গিয়ে দেখে অনেক লোকের ভিড়। মিতুল একটু দূরে একটি বন্ধ ওষুধের দোকানের সামনে সাইকেল রেখে বাজারের ভেতর যায়। কিন্তু একটু পরেই মিতুল ফিরে এসে দেখে ম্যাজিক সাইকেলটি আর সেখানে নেই। এদিক-সেদিক অনেক তাকিয়েও ওর সাইকেলটি আর দেখতে পায় না। মিতুলের খুব কান্না পায় কিন্তু সে কাঁদে না। আসমা চাচিকে ফলগুলো দিয়ে হেঁটে ওদের বাড়ির সামনে একটু দাঁড়ায়। এ কী! মিতুলদের বাড়ির সামনে আমগাছের গায়ে হেলান দিয়ে ম্যাজিক সাইকেলটি দাঁড়িয়ে আছে, যেন বিশ্রাম নিচ্ছে। মিতুল নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে না পেরে বেল চেপে একটু শব্দ করে। শব্দ শুনে ওর বড় ভাই হাসিমুখে মিতুলের কাছে এসে দাঁড়ায় এবং বলতে থাকে, ‘ছোটু, আজ তোর এই ম্যাজিক সাইকেলের জন্য আমি বাজার থেকে ঠিক সময় স্কুলে পৌঁছেছি। আজ স্কুলে যে আমার ফরমফিলাপের শেষ দিন ছিল ভুলেই গিয়েছিলাম। বাজারে গিয়ে যখন খবরটি শুনতে পাই, আশপাশে কোনো গাড়ি ছিল না। হঠাৎ চোখে আসে তোর এই ম্যাজিক সাইকেলটি আর তাই এটি নিয়েই স্কুলে যাই। কাজ শেষ করে এইমাত্র বাড়ি আসি। তোর এই সাইকেলটি আসলেই ম্যাজিক সাইকেল। এর পর মিতুল হেসে ম্যাজিক সাইকেলটির গায়ে হাত বুলায় আর তখন ম্যাজিক সাইকেলটিও যেন খুশিতে একটু নড়েচড়ে ওঠে।

আরও পড়ুন:

ঘুড়ির খেলা