এই শীতে সুস্থ থাকার উপায়গুলো
শীতের কারণে রক্তনালিগুলো সংকুচিত হয় (ঠধংড়পড়হংঃৎরপঃরড়হ), শ্বাস-প্রশ্বাস ঘন ঘন হয় এবং গভীর শ্বাস নিতে অনেক সময় কষ্ট হয়ে যায়। ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বুকে ব্যথা হতে পারে। শীতের জন্য স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়ে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেহের জন্য কতটা ঠাণ্ডা সহনীয়, তা বোঝা কঠিন হয়ে যায় এবং গরম হতে বেশি সময় লাগে- যা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি; বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুদের জন্য। একই সঙ্গে গর্ভবতী ও জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ঝুঁকি একটু বেশি থাকে; হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
স্বাভাবিকভাবে সুস্থ থাকলেও শীতের সময় সাধারণ ঠাণ্ডা, সর্দি, নাক দিয়ে পানি পড়া- এগুলো হতেই পারে। শীতে বাতাস সাধারণত শুষ্ক হয় এবং আমাদের শরীর তখন আর্দ্রতাকে ধরে রাখতে শুরু করে। এই সময় শ্বাসনালিতে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। ফলে শাসনালি সংকুচিত হয়Ñ যেখানে ওই শ্বাসনালিগুলো সরু ও শক্ত হয়ে যায় এবং শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এই সময় হাঁপানি যাদের আছে, তাদের বেশি হয়। তাই আর্দ্রতা ধরে রাখতে হালকা কুসুম গরম পানি পান করা আর গরম জামাকাপড় পরা উচিত। একই সঙ্গে ভিটামিনযুক্ত খাবার খেতে হবে। আর মনে রাখতে হবে, শীতে শরীরের চামড়া শুষ্ক হয়ে যায়। তাই ভ্যাসলিন বা অলিভ অয়েল লাগাতে হবে। স্কিনের রোগ বেশি হয় এই সময়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এ সময় রাইনো ভাইরাস- যা শীতের ভাইরাস নামে বেশি পরিচিত। এই ভাইরাস ঠাণ্ডায় সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই ভাইরাস নাসিকাপথে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং চোখে চুলকানিসহ চোখ লাল হয়ে যেতে পারে। এ ছোটখাটো সমস্যা খুব সহজেই দূর হয়ে যায়। এ ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত হলে ঠাণ্ডাটা লাগে বা জ্বর আসে। দেখা যায়, অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়াই ৭ দিনের মধ্যে অ্যান্টিহিস্টামিন খেয়ে ভালো থাকা যায়। কিন্তু যদি ইনফেকশন থাকে, তা হলে অ্যান্টিবায়োটিক দরকার পড়ে। তবে অবশ্যই তা চিকিৎসকের পরামর্শমতো খেতে হবে।
যাদের আগে থেকেই হাঁপানি রয়েছে অথবা দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুসের সমস্যা (সিওপিডি) রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ খেয়ে যেতে হবে। আর যারা ইনহেলার নেন, তাদেরও ঠিকমতো ব্যবহার করতে হবে।
যাদের সব সময় একটু ঠাণ্ডার সমস্যা লেগেই থাকে বা বছরে এক-দুইবার করে আক্রান্ত হয়, তারা ফ্লু ভ্যাকসিনটি বছরে একটি করে নিতে পারেন। এ শীতের সময় যদি শুরুতেই ব্যবস্থাপনা না নেওয়া হয়, তা হলে শিশু ও বয়স্কদের নিউমোনিয়া হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা দেবে। এ জন্য এখন থেকেই পরিচর্যা করতে হবেÑ যাতে ঠাণ্ডা না লাগে। অসুস্থ হলে অবশ্যই নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করতে হবে।
আরও পড়ুন:
বৈষম্যের ছোবলে নারীর শ্রমবাজার
বদ্ধ জায়গায় থাকলে ঠাণ্ডাটা লাগলে একজনের কাছ থেকে আরেকজনের ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটি ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়। তাই হাঁচি-কাশির সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য হাতের কনুই অথবা রুমাল দিয়ে হাঁচি দেওয়ার পর অবশ্যই হাত ধুতে হবে ভালোমতো। হালকা কুসুম গরম পানি খাওয়াসহ ভিটামিন ‘সি’জাতীয় খাবার খাদ্য তালিকায় বেশি পরিমাণে রাখতে ও বিশুদ্ধ খাবার পানি খেতে হবে।
শীতের সময় বাতাসে ধুলাবালির পরিমাণটা বেশি থাকে। এ জন্য বাইরে বের হলে মাস্ক পরতে হবে। যাদের ডাস্ট এলার্জি আছে, তারা ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখবেন এবং এলার্জিজনিত খাবার পরিহার করবেন।
শীতের সময় রোটাভাইরাস সংক্রমণও দেখা যায়। শীতের মাঝামাঝি ডায়রিয়া রোগ বেড়ে যায়। এ জন্য আগেই সতর্ক থাকতে এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা করতে হবেÑ যেন ফুসফুস ও হার্টের সমস্যা না হয়।
শীতে হাত-পা ফেটে যায়। তাই মোজা থেকে শুরু করে হাত-পায়ের যত্ন নিতে হবে। তেল অথবা ভ্যাসলিন লাগাতে হবে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে হাত-পা ভালোভাবে ময়েশ্চারাইজ করতে হবে।
আরও পড়ুন:
ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন মানবজাতি
বেশি শীত পড়লে মানুষ ঘরের মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ অবস্থায় রাখে। তখন দেখা যায়, কারও ভাইরাস দ্বারা সংক্রমণ হলে একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে পড়ে খুব দ্রুত। তাই যার একটু ঠাণ্ডা-কাশির সমস্যা আছে, তিনি যেন নিজেকে সবার কাছ থেকে আইসোলেশন করে রাখেন।
এই শীতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বদ্ধ ঘরে না থেকে খোলামেলা পরিবেশে থাকা, হাঁটাচলা করা, হালকা ব্যায়াম করা, ভিটামিন ‘সি’জাতীয় খাবার একান্ত আবশ্যক। বাসার আশপাশে একটু হাঁটাচলা করা এবং ঘেমে গেলে অবশ্যই ঘামটা ভালোভাবে মুছে রাখতে হবে- যাতে ঠাণ্ডাটা না বসে যায়।
সকালে কুসুম গরম পানির সঙ্গে মধু খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। হাঁটাচলা করলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। শরীরে কোনো অস্বস্তি অনুভব করলে এবং হাঁচি-কাশিসহ যে কোনো সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে এই শীতে ভালো থাকবেন।
আরও পড়ুন:
দিকে দিকে মাফিয়াতন্ত্র-২
ডা. আয়শা আক্তার : সহকারী পরিচালক, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতাল, শ্যামলী, ঢাকা