লক্ষ্যমাত্রা থেকে দূরে এনবিআর
অর্থনীতির অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে তুলছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। অর্থনীতিকে সচল রাখার মতো পণ্য আমদানি কমেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে রাজস্ব আদায়ে। শুল্ক-কর আদায় নিয়ে বিপাকে রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে স্বাভাবিকের চেয়ে জিডিপির দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক-কর আদায় বাড়াতে হবে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা, দ্বন্দ্ব-সংঘাতের আশঙ্কায় ব্যবসা-বাণিজ্যে ধীরগতির কারণে রাজস্ব আদায় কমতে পারে।
এনবিআরের সাময়িক হিসাব অনুসারে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-অক্টোবর) শুল্ক, করসহ সব মিলিয়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। এ সময় সব মিলিয়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। ফলে প্রথম তিন মাসে কম আদায় হয়েছে ১৩ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা।
সূত্র জানিয়েছে, আমদানি, ভ্যাট ও আয়কর-এই তিন খাতের মধ্যে কোনোটিতে লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হয়নি। সবচেয়ে বেশি ঘাটতি মূল্য সংযোজন কর বা মূসক বা ভ্যাট খাতে। এ খাতে তিন মাসে ঘাটতি ছিল ৪ হাজার ৯৩১ কোটি টাকা। এ সময়ে ৪৩ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু আদায় হয়েছে ৩৮ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা। অন্যদিকে তিন মাসে আমদানি খাতে ৩৬ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকার লক্ষ্যের বিপরীতে ৩২ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। এ খাতে ঘাটতি ৪ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। আয়কর খাতে লক্ষ্য ছিল ৩৬ হাজার ৬২ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৩১ হাজার ২৫৯ কোটি টাকার। এ খাতে ঘাটতি ৪ হাজার ৮০২ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:
ডেমরায় এক কক্ষে কিশোরী ও যুবকের মরদেহ
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে উচ্চাভিলাষী ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার শুল্ক-কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা আহরণে কাজ করছে এনবিআর। তবে রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়া পুরোপুরি অটোমেশন করা ছাড়া লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয় বলে মনে করেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, করদাতা ও আদায়কারীর মধ্যে সরাসরি দেখা হওয়া বা ফোনে যোগাযোগ হওয়ার মতো মাধ্যম রাজস্ব বৃদ্ধির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। রাজস্ব আদায় বাড়াতে হলে এসব বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘শুধু নতুন আইন করে নয়, বরং পুরো প্রশাসনিক কাঠামো অটোমেশনের আওতায় আনতে হবে।’
সম্প্রতি মিনি করমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় রাজস্ব আহরণ কমবে। দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় যদি অর্থনীতি বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে ভ্যাট আহরণ বাধাগ্রস্ত হবে। আর ব্যবসায়ীরা আমদানি-রপ্তানি কমালে রাজস্ব কমবে। তিনি বলেন, নভেম্বরের পর রিটার্ন জমার সুযোগ থাকলেও কর অব্যাহতি রিবেটসহ নানা সুবিধা পাবে না করদাতারা। নতুন আইন অনুযায়ী জরিমানাসহ রিটার্ন দিতে হবে।
আরও পড়ুন:
আফরোজা পারভীন পেলেন অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ডলার সংকটে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি করা হয়েছে। এতে কমেছে পণ্য আমদানি। ফলে শুল্ক আয় কমেছে। অপরদিকে সব ধরনের পণ্যের দাম আকাশচুম্বী। কিন্তু মানুষের আয় বাড়েনি। বরং ক্ষেত্রবিশেষে কমেছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। আর ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় মানুষের ভোগব্যয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এই নেতিবাচক প্রভাবে কমেছে ভ্যাট আদায়ের হার।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, রাজস্ব আদায়ের চিত্র যা হওয়ার কথা ছিল তাই হয়েছে। চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনযোগ্য নয় মনে করেন তিনি। এটি উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা। ফলে ঘাটতি হওয়ার কথা। ডলারের কারণে আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক বেড়েছে। তবে অর্থনীতিতে স্থবিরতা চলছে। এটি না কাটলে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়। এনবিআর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থ মন্ত্রণালয় প্রতিবছর একটা নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়। সক্ষমতা বিবেচনায় না নিয়ে প্রতিবছর বাড়িয়ে বাড়িয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
আরও পড়ুন:
ডেঙ্গুতে একদিনে ৬ জনের মৃত্যু ভর্তি ৬৪৫