গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করাই হোক অঙ্গীকার

ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান
২৭ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শেয়ার :
গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করাই হোক অঙ্গীকার

শহীদ ডা. মিলন একটি গণতান্ত্রিক চেতনার নাম। ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পুলিশের গুলিতে শাহাদাতবরণ করেন ডা. শামসুল আলম খান মিলন। প্রতিবছর এই দিনে পালিত হয় শহীদ ডা. মিলন দিবস। এ বছর তার ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। দিবসটিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন শহীদ ডা. মিলনের স্মরণে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় গ্রন্থাগারের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে নির্মিত ‘নিঝুম’ স্মৃতিস্তম্ভে এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে ডা. মিলনের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে আসছে। এ বছরও অনুরূপ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

বাংলাদেশের চলমান গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা নস্যাৎ করতে নানা অপতৎপরতা শুরু হয়েছে। সে কারণেই বর্তমান প্রেক্ষাপটে শহীদ ডা. মিলন দিবস বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। যে গণতন্ত্রের জন্য ডা. মিলন জীবন দিয়েছেন সেই গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ধ্বংস করতে চলছে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র এবং অপপ্রচার। দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষার মাধ্যমে শহীদ ডা. মিলনের আত্মত্যাগের মহিমাকে ধরে রাখতে হবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গণতন্ত্রের জন্য আজীবন লড়াই সংগ্রাম করেছেন। একইভাবে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলমান আন্দোলনের ফসল আজকের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা। দেশে গণতন্ত্র বিদ্যমান রয়েছে বলেই বাংলাদেশ বিশে^র উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে তাদের প্রধান টার্গেট গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা। সে কারণেই তারা নির্বাচন কমিশন ঘোষিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ভণ্ডুল করতে চায়। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে তৎপর দেশি চক্র বিএনপি-জামায়াতকে মদদ দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে সেই বিদেশি চক্রের বিরুদ্ধে। বিদেশি ওই চক্রটি সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের কথা বললেও বিএনপি-জামায়াতের নির্বাচনবিরোধী ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড নিয়ে, মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা নিয়ে কোনো কথা বলছে না। উল্টো যারা দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে তাদের বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখানো হচ্ছে। এ থেকেই বোঝা যায়, দেশের গণতন্ত্র আজ কতটা হুমকির মুখে পড়েছে। সব ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হবে। আর এর একটাই উপায় হলো নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সফলভাবে বাস্তবায়ন করা। শহীদ ডা. শামসুল হক খান মিলনের জন্ম ১৯৫৭ সালের ২১ আগস্ট। তিনি ১৯৭৩ সালে এসএসসি এবং ১৯৭৫ সালে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৮৩ সালে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করে চিকিৎসা পেশায় আত্মনিয়োগ করেন। পেশাগত সততা, দক্ষতা, সাংগঠনিক কর্মতৎপরতায় তিনি ছিলেন অতুলনীয়। পেশাজীবীদের কাছে তিনি ছিলেন অত্যন্ত একজন প্রিয় মানুষ। তিনি বিএমএর নির্বাচিত যুগ্ম-সম্পাদক, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ শিক্ষক সমিতির কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ওই মেডিক্যাল কলেজের প্রভাষক ছিলেন। ঘটনার দিন স্বৈরাচার সরকার পতনের জন্য দেশব্যাপী আন্দোলন চলছিল। বিএমএর একটি সভায় যোগ দিতে রিকশাযোগে বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের টিএসসি অতিক্রম করার সময় সন্ত্রাসীরা তার ওপর গুলি চালায় এবং সঙ্গে সঙ্গে তার মৃত্যু হয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে দাফন করা হয়। আর এর কিছুদিন পরই স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতন ঘটে। পরে ২৭ নভেম্বর থেকে শহীদ ডা. মিলন দিবস পালিত হয়ে আসছে। গণতন্ত্র রক্ষায় শহীদ ডা. মিলন দিবস অমর হয়ে থাকবে।

ডা. মিলন গণতন্ত্রের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। সেই গণতন্ত্র আজ বিএনপি-জামায়াত জোট ধ্বংস করার জন্য ধ্বংসলীলায় মেতে উঠেছে। আগুনে পোড়া দগ্ধ মানুষের চিৎকার তাদের কানে পৌঁছায় না। বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরাও চোখ থাকতে অন্ধ হয়ে আসছে। পুর্লিশকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আনসারদের পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করা হয়েছে। হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দেওয়া হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কতিপয় বিদেশি দেখতে পাচ্ছেন না। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর তাদের ষড়যন্ত্রের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এসব কিছুর একটাই লক্ষ্য বর্তমান গণতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকারকে অগণতান্ত্রিক পন্থায় উৎখাত করা। বাংলাদেশের উন্নয়নের গাড়ির চাকা থামিয়ে দেয়া। বিএনপি-জামায়াত জোটের সেই অপতৎপরতাকে চিরতরে বন্ধ করে দিতে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। নির্ধারিত সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অন্ষ্ঠুানের পথে সব বাধা রুখে দিতে হবে। সফল করতে হবে জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন, আর সেটাই হোক শহীদ ডা. মিলন দিবস ২০২৩-এর অঙ্গীকার।


অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান : রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ ও কোষাধ্যক্ষ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়