দক্ষতা বাড়িয়ে বেকারত্ব হ্রাস করতে হবে
আমরা দেশের মানুষকে কারিগরি ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে দক্ষ করে তুলতে চাই। যাতে তারা পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে সমান তালে চলতে পারে। দক্ষ জনশক্তি আমাদের দেশের উন্নয়ন খাতে অবদান রাখতে পারবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী কাজ করছেন। আমাদের বিদেশের শ্রমবাজারে দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে হবে। গত ১২ বছরে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ৫০০ পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সরকারি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ধারণক্ষমতা ২৫ হাজার থেকে ১ লাখে উন্নীত হয়েছে। ২৬শ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ তলা ভবন, ওমেন ডরমেটরি, ওয়ার্কশপ ও ল্যাব নির্মাণের মাধ্যমে ৪৯টি টেকনিকের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রত্যেক উপজেলায় কারিগরি স্কুলে ও কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ১শ উপজেলায় কারিগরি স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এতে ৬ হাজার ৪০০ শিক্ষক ও কর্মচারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রজন্মের পর প্রজন্মের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে দূরদর্শী অনেক উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আমাদের পরিবেশ, প্রতিবেশ, চাষযোগ্য জমি ও জলাধার রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। অপরিকল্পিত শিল্পায়নের জন্য যাতে কোনো আবাদি জমি নষ্ট না হয়, সেজন্য একশটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিপুলসংখ্যক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে প্রয়োজন শিক্ষা। এ ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এ কারণেই বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকতে উচ্চশিক্ষাকে নতুন করে সাজানোর কথা বলা হয়েছে। দক্ষ মানবসম্পদের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবনপূর্বক যথাযথভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষাব্যবস্থা নতুন করে সাজানো প্রয়োজন এবং তা শুরু করা হয়েছে।
বিশ্বসভ্যতাকে নতুন মাত্রা দিচ্ছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব। এই বিপ্লবের প্রক্রিয়া ও সম্ভাব্যতা নিয়ে ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। আলোচনা হচ্ছে আমাদের দেশেও। এই আলোচনার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে এক ধরনের সচেতনতা তৈরি বাংলাদেশকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের নেতৃত্বদানের উপযোগী করে গড়ে তুলে দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী এবং তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা নিরলস কাজ করছেন।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রযুক্তিগত আলোড়ন সর্বত্র বিরাজমান। এ বিপ্লব চিন্তার জগতে, পণ্য উৎপাদনে ও সেবা প্রদানে বিশাল পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। মানুষের জীবনধারা ও পৃথিবীর গতি-প্রকৃতি ব্যাপকভাবে বদলে দিচ্ছে।
আরও পড়ুন:
বৈষম্যের ছোবলে নারীর শ্রমবাজার
শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন কারিগরি ও অনলাইন প্রযুক্তিগত ডিজিটাল জ্ঞান তৈরি করছে নানা কর্মসংস্থান। শিক্ষা কার্যক্রমকে আরও সহজ করে তুলতে এটুআইয়ের সহযোগিতায় তৈরি করা হয়েছে ‘কিশোর বাতায়ন’ ও ‘শিক্ষক বাতায়ন’-এর মতো প্ল্যাটফর্ম।
বিভিন্ন অনলাইন কনটেন্ট নিত্যনতুন জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি একটি সমৃদ্ধ জাতি গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। ‘মুক্তপাঠ’ বাংলা ভাষায় সর্ববৃহৎ ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম। যেখানে সাধারণ, কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ রয়েছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগিতায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদ্রাসা এবং কারিগরি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করা হয়েছে যা দেশব্যাপী সম্প্রচার করা হচ্ছে। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের মাধ্যমে নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন এবং সহজেই নাগরিকসেবা প্রাপ্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবস্থাপনা, কর্মপদ্ধতি, শিল্প-বাণিজ্য ও উৎপাদন, অর্থনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালনা করার লক্ষ্যে কাজ করছে।
আরও পড়ুন:
ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন মানবজাতি
দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে প্রযুক্তি যেমন করে সহজলভ্য হয়েছে, তেমনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে প্রযুক্তিনির্ভর সেবা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সব নাগরিকসেবা ও জীবনযাপন পদ্ধতিতে প্রযুক্তি হয়ে উঠেছে এক বিশ্বস্ত মাধ্যম।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের মোকাবিলায় বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে জোর দিয়েছে। বাংলাদেশ আগামী পাঁচ বছরে জাতিসংঘের ই-গভর্ন্যান্স উন্নয়ন সূচকে সেরা ৫০টি দেশের তালিকায় থাকার চেষ্টা করছে।
মানুষের মধ্যে এক ধরনের সচেতনতা তৈরি বাংলাদেশকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের নেতৃত্বদানের উপযোগী করে গড়ে তুলে দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে কাজ চলছে। মানুষের তথ্য প্রসারের তীব্র বাসনাকে গতিময়তা দেয় টেলিগ্রাফ, টেলিফোন, বেতার, টেলিভিশন এসবের আবিষ্কার। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে কম্পিউটার ও পরবর্তীকালে তারবিহীন নানা প্রযুক্তি তথ্য সংরক্ষণ ও বিস্তারে বিপ্লবের সূচনা করে। আজকের এই ডটকমের যুগে আক্ষরিক অর্থেই সারা বিশ্ব একটি ‘গ্লোবাল ভিলেজ’-এ পরিণত হয়েছে। আইসিটি বা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি তাই দিনবদলের হাতিয়ার হিসেবে বিশ্বব্যাপী আদৃত হয়েছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রযুক্তিগত আলোড়ন সর্বত্র বিরাজমান। এ বিপ্লব চিন্তার জগতে, পণ্য উৎপাদনে ও সেবা প্রদানে বিশাল পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। মানুষের জীবনধারা ও পৃথিবীর গতি-প্রকৃতি ব্যাপকভাবে বদলে দিচ্ছে।
আরও পড়ুন:
দিকে দিকে মাফিয়াতন্ত্র-২
হীরেন পণ্ডিত : প্রাবন্ধিক ও গবেষক