দুই দিনেই অবিশ্বাস্য সমাপ্তি, হেডের ৬৯ বলের সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়ার লিড
পার্থে মাত্র পাঁচ ঘণ্টার রোমাঞ্চে ইংল্যান্ড শক্ত অবস্থান থেকে ধসে পড়ল চরম বিপর্যয়ে, আর প্রথম অ্যাশেজ টেস্ট রেকর্ড সময়ে দুই দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে গেল। ৮ উইকেটের জয়ে ৫ ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া।
প্রথম দিনে ১৯ উইকেট পতনের নাটকীয়তা ছাপিয়ে গেল দ্বিতীয় দিনের ঘটনাপ্রবাহ। অস্ট্রেলিয়ার দুই পেসার স্কট বোল্যান্ড ও মিচেল স্টার্ক (পুরো ম্যাচে ১০ উইকেট) মধ্য সেশনে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপকে ছিন্নভিন্ন করে সিরিজের প্রথম টেস্ট ঘুরিয়ে দিলেন পুরোপুরি।
অ্যাশেজে প্রথম টেস্টে জয়ের জন্য ২০৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে অস্থায়ী ওপেনার ট্রাভিস হেড খেললেন ৮৩ বলে ১২৩ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। মাত্র ২৮.২ ওভারে লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়া-প্রতি ওভারে ৭-এরও বেশি রান তোলেন ব্যাটাররা। দলে ফিরে আসা মার্নাস লাবুশেনে ৪৯ বলে ৫১* রান করে অপরাজিত থাকেন। শেষ রানটি করেন অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ, আর তাতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে অস্ট্রেলিয়া।
হেড ৬৯ বলে শতক পূর্ণ করেন-অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টেস্টে যৌথভাবে তৃতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি। ইংল্যান্ডের বোলাররা, যারা আগের দিন ছিল ভয়ঙ্কর, আজ ছিলেন দিশাহীন। অফসাইডে হেডের শটমহিমায় মুগ্ধ ছিল প্রায় ৫০ হাজার দর্শক।
উসমান খাজা পিঠের ব্যথায় মাঠের বাইরে যাওয়ায় ওপেন করেন হেড। দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে প্রথমবার ওপেন করে তিনি উপভোগ করেন দায়িত্বটি। অভিষিক্ত করা জ্যাক ওয়েদারাল্ডও কিছুটা স্বস্তিতে খেলতে পারেন, যদিও ২৩ রানে শর্ট বলে আউট হন।
অবশেষে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের জন্য ১৩ রান বাকি থাকতে হেড আউট হন, তবে ততক্ষণে ম্যাচের ভাগ্য নিশ্চিত।
ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৫/১—১০৫ রানের লিড-নিয়ে দৃঢ় অবস্থানে ছিল। সেখান থেকেই বোল্যান্ড শুরু করেন ধস, ১৯ বলে পড়ে ৪ উইকেট।
দ্বিতীয় সেশনে ৯৯ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে অ্যাশেজ পুনরুদ্ধারের স্বপ্নে বড় দাগ লাগল ইংল্যান্ডের। টপ অর্ডারের চারজনই স্লিপে ক্যাচ দেন, আর জো রুট প্রথম ইনিংসের ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে আউট হন স্টার্কের ইনসুইংয়ে।
প্রথম ইনিংসে ০–৬২ দেওয়া বোল্যান্ড এবার নিখুঁত লাইন-লেন্থে ফিরে ডাকেট, পোপ এবং ব্রুককে বিদায় করেন। স্টার্ক গতি তুলতে না পারলেও স্মিথের সঠিক সময়ে তাকে আক্রমণে ফেরানো কাজে দেয়-রুটকে আউট করেন, পরে স্টোকসকে ১১তমবার ফেরান টেস্টে।
ডগেট নিজের টেস্ট অভিষেকে শর্ট বলে ভয় দেখাতে থাকেন এবং ব্রেন্ডন ডগেটের বাউন্সারে জেমি স্মিথ আউট হলে ইংল্যান্ড প্রায় নিশ্চিহ্ন।
কার্স ও অ্যাটকিনসন ৪৭ রানের জুটি গড়ে কিছুটা লড়াই ফেরালেও শেষ পর্যন্ত ডগেটই ইনিংস গুটিয়ে পাঁচ উইকেট তুলেন।
যদিও দিন শুরু হয় অস্ট্রেলিয়ার ১২৩/৯ অবস্থা থেকে। ডগেট–লায়ন ২৬ মিনিট টিকে থেকে ৯ রান যোগ করেন। এরপর কার্স লায়নকে গালিতে ক্যাচ করান-অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসের লিড কমে ৪০ রানে।
ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথম ওভারে স্টার্ক আবারও হ্যাটট্রিক চেষ্টায় নেমে জ্যাক ক্রলিকে শূন্য রানে ফিরিয়ে দেন-পাঁচ বলে প্যাভিলিয়ন, এবং দুটি ইনিংসেই শূন্য। টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবার প্রথম তিন ইনিংসে ওপেনিং জুটির রান শূন্য।
ডাকেট–পোপ কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও বোল্যান্ডের দ্বিতীয় স্পেলে সব ভেঙে পড়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ১৩২ ও ২০৫/২ (হেড ১২৩, লাবুশেনে ৫১*, কার্স ২–৪৪)
ইংল্যান্ড: ১৭২ ও ১৬৪ (অ্যাটকিনসন ৩৭, বোল্যান্ড ৪–৩৩, স্টার্ক ৩–৫৫)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে জয়