রাজসাক্ষী আবজালুলের জেরা ঘিরে ট্রাইব্যুনালে হট্টগোল
জুলাই আন্দোলনের সময় আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর মামলায় আসামি থেকে রাজসাক্ষী পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শেখ আবজালুল হকের জেরা ঘিরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হট্টগোল হয়েছে। জেরায় একটি প্রশ্ন করা নিয়ে প্রসিকিউশন ও রাষ্ট্রনিযুক্ত আসামিপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়।
গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার পর অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২-এ এই ঘটনা ঘটে। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্য জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। এ দিন সকাল সাড়ে ১০টার পর সাভারের আশুলিয়ায় ছয়জনের মরদেহ পোড়ানোসহ সাতজনকে হত্যার
দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলামসহ ১৬ জন আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া রাজসাক্ষী আবজালুলের জেরা শুরু হয়।
জেরার একপর্যায়ে সাক্ষীকে আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুর রহমান বলেন, গত বছর ৫ আগস্ট থানার কোনো পুলিশ মারা গেছেন কিনা। জবাবে রাজসাক্ষী বলেন, না। তবে একজন মারা গেছেন। তিনি অন্য ইউনিটের। যার তদন্তে ছিলাম আমি। কিন্তু শেষ করতে পারিনি।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
এমন প্রশ্নে আপত্তি জানিয়ে প্রসিকিউশন থেকে বলা হয়, এমন প্রশ্ন এখানে আসবে না। এ নিয়ে প্রসিকিউশনের সঙ্গে আসামিপক্ষের আইনজীবীর প্রায় ঘণ্টাখানেক তর্কাতর্কি চলে। একপর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের হস্তক্ষেপে থামেন তাঁরা। এর আগে গত বুধবার এ মামলায় ২৩ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন আবজালুল।
জবানবন্দিতে গত বছর ৫ আগস্ট থানার সামনে লাশ পোড়ালেও নিজ চোখে দেখেননি বলে জানান তিনি। থানায় অস্ত্র-গুলি জমা দিতে গেলে ১৫ আগস্ট অন্যের মুখে ঘটনাটি শোনেন। অর্থাৎ ৫ আগস্ট লাশ পুড়িয়েছিলেন ওসি সায়েদ ও এএসআই বিশ্বজিৎ। সবশেষ তিনি ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
গত ২১ আগস্ট এ মামলায় ১৬ জন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২। ওই সময় উপস্থিত আটজন আসামির সাতজনই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। তবে দোষ স্বীকার করেন এসআই শেখ আবজালুল হক। একই সঙ্গে রাজসাক্ষী হতে চেয়ে মামলার ব্যাপারে যা জানেন সব আদালতের কাছে বলতে চেয়েছেন। পরে তাঁর দোষ স্বীকারের অংশটুকু রেকর্ড করা হয়। একই সঙ্গে লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজসাক্ষী হওয়ার অনুমতি পান তিনি।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
গত ২ জুলাই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেয় প্রসিকিউশন। পরে এ মামলায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। তাঁদের মধ্যে আটজন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। বাকি আটজন পলাতক।
এ মামলায় গ্রেপ্তার আটজন আসামি হলেন- ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, আবজাল ও কনস্টেবল মুকুল। তবে স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলামসহ আটজন আসামি এখনও পলাতক রয়েছেন।
গত বছর ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ছয়জন তরুণ। এরপর পুলিশ ভ্যানে তাঁদের লাশ তুলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। নৃশংস এ ঘটনার সময় একজন জীবিত ছিলেন। কিন্তু তাঁকেও বাঁচতে দেননি তাঁরা। পেট্রল ঢেলে জীবন্ত মানুষকেই পুড়িয়ে মারা হয়। এ ঘটনায় গত বছর ১১ সেপ্টেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম