রাজস্ব আহরণে ভাটায় চাপে আর্থিক খাত
লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে রাজস্ব আহরণ করতে পারছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ফলে সংকুচিত হয়েছে আর্থিক খাত। বিষয়টি আঁচ করে আগেভাগে বাজেটের ওপর কাঁচি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। চলতি অর্থবছরের প্রথম সম্পদ কমিটির বৈঠকে ২০ হাজার কোটি টাকার বাজেটের কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জানিয়েছে, দুর্বল রাজস্ব আহরণ, আর্থিক খাতের ঝুঁকি ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে এখনও বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আহরণে যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা বাস্তবিকভাবে অর্জন করা সম্ভব নয়। তাঁদের মতে, লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর একমাত্র কার্যকর উপায় হলো কর ফাঁকি কঠোরভাবে রোধ করাতে হবে।
এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের হালনাগাদ চিত্রে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) শুল্ক-কর আদায়ে ঘাটতি ১৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গত জুলাই-অক্টোবর সময়ে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় ১ লাখ ১৯ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা। এ সময়ে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ১৭ হাজার ২১৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর এনবিআরকে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকার শুল্ক-কর আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
আলোচ্য সময়ে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি হয়েছে আয়কর খাতে। চার মাসে ঘাটতি হয় ৯ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা। এই খাতে আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৪৭ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। এ সময়ে আদায় হয়েছে ৩৭ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা।
আমদানি খাতে চার মাসে ৪১ হাজার ৫০৭ কোটি টাকার লক্ষ্যের বিপরীতে আদায় হয়েছে ৩৪ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। এই খাতে ঘাটতি হয়েছে ৬ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। গত জুলাই-অক্টোবরে ভ্যাট বা মূসক আদায়েও লক্ষ্য পূরণ হয়নি। এই খাতের লক্ষ্য ছিল ৪৮ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। ভ্যাট আদায় হয়েছে ৪৬ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা। এ সময়ে এই খাতে ঘাটতি ১ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা।
এনবিআরের কর্মকর্তা বলেছেন, ব্যবসা-বাণিজ্য শ্লথগতি থাকায় রাজস্ব আদায় তুলনামূলক কম হয়েছে। তবে বছরের শেষ দিকে রাজস্ব আদায়ে গতি বাড়বে। তাঁরা বলেন, করের আওতা বৃদ্ধি, কর পরিপালন নিশ্চিতকরণ, কর ফাঁকি প্রতিরোধ এবং ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব পুনরুদ্ধার করার কাজ করছে এনবিআর।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, চলতি বাজেটে রাজস্ব আয়ের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রার পরও কর-জিডিপির অনুপাত ৮-৯ শতাংশের কম থাকবে। এ জন্য কর ব্যবস্থার অটোমেশনে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। অন্যথায় বছর শেষে আবারও বিশাল অঙ্কের রাজস্ব ঘাটতি তৈরি হবে, যা মূলত বাজেটের ভারসাম্যকে ঝুঁকির দিকে ঠেলে দেবে বলে মনে করেন তাঁরা।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন
আইএমএফ আরও জানিয়েছে, রাজস্ব ও আর্থিক খাতের সমস্যা মোকাবিলায় সাহসী নীতি গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি, যাতে টেকসই আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করে শক্তিশালী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধার করা যায়। ঝুঁকিও এখনও প্রবল। বিশেষ করে যদি নীতি প্রণয়নে বিলম্ব হয় কিংবা অপর্যাপ্ত নীতি গ্রহণ করা হয়, তাহলে ঝুঁকি থাকবে।