রিট চলাকালে বন্দর নিয়ে চুক্তি, হাইকোর্টের অসন্তোষ
চলমান রুল শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় বিদেশিদের কাছে হস্তান্তর করা হবে না বলে অ্যাটর্নি জেনারেলের আশ্বাসের পরও এ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। গতকাল বুধবার বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ারের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি চলাকালে আদালত এ অসন্তোষ প্রকাশ করেন। একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ জুলাই এই রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। শুনানি শেষে আদালত এই রুলের পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল দিন ধার্য করেছেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ।
চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়ার বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলের বিষয়ে গতকাল এই শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে দেশের নিরাপত্তা প্রশ্ন জড়িত। নিরাপত্তা ইস্যুর কারণেই বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, এমনকি সেনাপ্রধান এই বন্দর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বিদেশিদের দেওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। চুক্তি প্রক্রিয়া বাতিল করে রুল যথাযথ ঘোষণা করার আর্জি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশিদের দিলে রেভিনিউ বাড়বে না বরং কমবে। কারণ রেভিনিউর বিরাট অংশ বিদেশে চলে যাবে।
শুনানি চলাকালে আটর্নি জেনারেল কথা দেওয়ার পরও চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ায় আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
এর আগে গত ১৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল রুল শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিদেশিদের কাছে হস্তান্তর করা হবে না বলে আদালতকে আশ্বস্ত করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। সেদিন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম বলেন, আমরা আবেদন জানিয়েছিলাম রুল শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত যেন নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের কাছে হস্তান্তর না করা হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান আদালতকে আশ্বস্ত করেছেন রুল শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিদেশিদের কাছে হস্তান্তর করা হবে না।
গত ৩০ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল দেন। একই সঙ্গে যে কোনো অপারেটরকে এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব (নিযুক্ত) দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতি অনুসারে ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক পাবলিক বিডিং (দরপত্র আহ্বান) নিশ্চিত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের পক্ষে সংগঠনটির সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসাইন এই রিট করেন। নিউমুরিং টার্মিনালে সবই আছে, তবু কেন বিদেশির হাতে যাচ্ছে’ শিরোনামে গত ২৬ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়। এ প্রতিবেদনসহ এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে রিটটি করা হয়।
সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে : ১২ দলীয় জোট : অন্যদিকে অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ও দ্রুততার সঙ্গে চট্টগ্রামসহ দেশের সব বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার’ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ১২ দলীয় জোট। গতকাল এক বিবৃতিতে জোটের শীর্ষ নেতারা বলেন, ‘অস্বাভাবিক দ্রুততায় বিদেশি কোম্পানির কাছে কনটেইনার টার্মিনাল তুলে দেওয়া দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে ও এটি জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি। বাংলাদেশের বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ায় দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।
বিবৃতিতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী বিষয়ে এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না। বিগত স্বৈরাচারী সরকার দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে দেশকে একটি তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। গভীর পরিতাপের বিষয় যে বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারও বিগত স্বৈরাচারী সরকারের পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশবিরোধী চুক্তি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। নেতারা অনতিবিলম্বে এই সরকারকে চক্রান্ত থেকে বিরত থাকার উদাত্ত আহ্বান জানান। অন্যথায় দুর্বার গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার হুশিয়ারি দেন।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ১২ দলীয় জোটপ্রধান ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী, ন্যাশনাল লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুর রকিব, ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দলের (পিএনপি) চেয়ারম্যান ফিরোজ মো. লিটন ও নয়া গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি এমএ মান্নান।