মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কায় সুদের হার বহাল থাকবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
২০ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৬
শেয়ার :
মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কায় সুদের হার বহাল থাকবে

চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, মূল্যস্ফীতি এবং বৈদেশিক খাতের সার্বিক পর্যালোচনা শেষে নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর্থিক খাতের এই নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আশঙ্কা করছে যে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও পবিত্র রমজান মাসের কারণে ভোক্তা চাহিদা বৃদ্ধি পাবে, যা সাময়িকভাবে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি কমিটির (এমপিসি) রিভিউ মিটিংয়ে মাসের শুরুতে অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকেই সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ওই সভার কার্যবিবরণী (নোটিং) প্রকাশ করা হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে হারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে স্বল্প মেয়াদে ঋণ দেয়, সেটাই হচ্ছে নীতি সুদহার।

জানা যায়, ওই সভায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের বর্তমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, চ্যালেঞ্জগুলো এবং পূর্বাভাস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতির বর্তমান অবস্থা, আসন্ন রমজান ও জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ব্যাংকিং খাতের মুদ্রা ও তারল্য পরিস্থিতি, নীতি সুদহারের অবস্থা, বহিঃস্থ খাত থেকে সৃষ্ট চাপ এবং বিনিময় হার পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়।

কমিটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বাজারের সুদের হার, বৈদেশিক মুদ্রা ও মুদ্রানীতির প্রভাব বিশদভাবে বিশ্লেষণ করে। তাদের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে, মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমছে এবং সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশে নেমে এসেছে, যা এমপিসি ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে দেখছে। তবে কিছু অঞ্চলে খাদ্যপণ্যের সরবরাহজনিত সমস্যার কারণে দাম কিছুটা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

বৈঠক সূত্রে আরও জানা যায়, আন্তঃব্যাংক কলমানি ও রেপো রেট সামান্য হ্রাস পেয়েছে। এ ছাড়া সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ফলে সুদের ওপর চাপ কিছুটা কমেছে, যা আর্থিক খাতে স্বস্তি এনেছে। তবে বেসরকারি খাতের ঋণ বৃদ্ধির গতি এখনও ধীর। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের কারণে ঋণের চাহিদা কমে যাওয়া এর অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

বৈদেশিক খাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি মাঝারি হলেও আমদানি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। রমজান উপলক্ষে জরুরি পণ্যের এলসি মার্জিন শিথিল করার কারণে আমদানি বৃদ্ধি স্বাভাবিক বলে কমিটি মনে করে। একই সময় রেমিট্যান্স প্রবাহও গতিশীল ছিল।

তবে কিছু ঝুঁকিও চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আবহাওয়াজনিত কারণে আমন ধানের সম্ভাব্য ক্ষতি, জাতীয় নির্বাচন, আসন্ন রমজান। এ ছাড়া সম্ভাব্য নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণার প্রভাবে মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা বাড়তে পারে। তাই সব দিক বিবেচনা করে এমপিসি সিদ্ধান্ত নেয়, বর্তমান নীতি সুদহার ১০ শতাংশে অপরিবর্তিত থাকবে। এর পাশাপাশি এসডিএফ হার ৮ শতাংশ এবং এসএলএফ হার ১১ দশমিক ৫ শতাংশ থাকবে।

কমিটি আরও জানিয়েছে, প্রকৃত নীতিগত সুদহার ৩ শতাংশে পৌঁছানো পর্যন্ত কঠোর মুদ্রানীতি অব্যাহত থাকবে, যাতে সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকে এবং মূল্যস্ফীতি আরও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।