চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হীরক জয়ন্তী আজ

রায়হান উদ্দিন, চট্টগ্রাম
১৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৭
শেয়ার :
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হীরক জয়ন্তী আজ

দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের অন্যতম বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রতিষ্ঠার হীরক জয়ন্তী (৬০ বছর) আজ। ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর যাত্রা শুরু করা এই বিশ্ববিদ্যালয় নানা অর্জন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে অবদানের মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ‘শাটল ট্রেনের ক্যাম্পাস’ হিসেবে পরিচিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিকের স্বনামধন্য শিক্ষকদের একজন ছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বর্তমানে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ২ হাজার ৩০০ একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই সবুজ ক্যাম্পাস জীববৈচিত্র্যেও সমৃদ্ধ।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, আজ মঙ্গলবার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একসঙ্গে উদযাপন করবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও স্থাপনাগুলোতে করা হয়েছে আলোকসজ্জা। দিনব্যাপী আয়োজনের মধ্যে রয়েছে র‌্যালি, কেককাটা, আলোচনা সভা, স্মৃতিচারণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

মাত্র আটজন শিক্ষক দিয়ে শুরু হওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থী প্রায় ২৮ হাজার। পাঠদানে আছেন ৯০৬ জন শিক্ষক। ৯টি অনুষদের অধীনে ৪৮টি বিভাগ ছাড়াও রয়েছে ছয়টি ইনস্টিটিউট। শিক্ষার্থীদের জন্য ১৪টি আবাসিক হল ও একটি ছাত্রাবাস আছে, যার মধ্যে ৯টি ছেলেদের এবং পাঁচটি মেয়েদের হল। সব মিলিয়ে আবাসিক সুবিধা পাওয়া যায় প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য। যাতায়াতে রয়েছে শাটল ও ডেমু ট্রেন। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নিয়ে ৩৫ বছর পর চাকসু নির্বাচনের আয়োজন করেছে। চলতি বছর অনুষ্ঠিত হয়েছে ষষ্ঠ সমাবর্তন।

চবি তার নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জন্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আলাদা। কাটাপাহাড়, হতাশার মোড়, দোলা স্মরণী, ঝুলন্ত সেতু, চালন্দা গিরিপথÑ সব মিলিয়ে এক অনন্য পরিবেশ। ঋতু বদলের সঙ্গে ক্যাম্পাসও বদলায় তার রূপ। বসন্তের রঙ, আষাঢ়ের ঝুম বৃষ্টি কিংবা শীতের ঘন কুয়াশাÑ সব মিলিয়ে এই ক্যাম্পাস মুগ্ধ করে সবাইকে।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশ্বতত্ত্ববিদ ও গণিতবিদ অধ্যাপক ড. জামাল নজরুল ইসলাম। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি বিদেশের লোভনীয় চাকরি ছেড়ে ফিরে এসেছিলেন নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ ছাড়া ঐতিহাসিক আবদুল করিম, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ ড. আনিসুজ্জামান, শিক্ষাবিদ আহমদ শরীফ, হুমায়ুন আজাদ, চিত্রশিল্পী রশিদ চৌধুরী, কলামিস্ট আবুল মোমেনও শিক্ষকতা করেছেন এখানে।

দেশের প্রতিটি ক্রান্তিকালে চবি রেখেছে অগ্রণী ভূমিকা। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনÑ সব ক্ষেত্রেই চবি ছিল সক্রিয়। মুক্তিযুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপক্ষে ১৫ জন শিক্ষার্থী জীবন দিয়েছেন। শহীদ মো. হোসেন বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত হন তাঁর বীরত্বের জন্য।

তবে সমস্যাও কম নয়। ১৯৮৮ সাল থেকে শাটল ট্রেন চললেও রেললাইন ঝুঁকিপূর্ণ; বগিগুলো পুরনো। শিক্ষার্থী বাড়লেও যাতায়াতব্যবস্থায় উন্নতি হয়নি। বাড়ছে গাদাগাদি আর ভোগান্তি।