মিচেলের দারুণ সেঞ্চুরিতে নিউজিল্যান্ডের রোমাঞ্চকর জয়
ক্রাইস্টচার্চে যেন সবাই লড়াইয়ের বাসে চড়েছিল-ড্যারিল মিচেলও। সপ্তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি করতে গিয়ে তিনি পেয়েছেন কুঁচকির চোট, যার কারণে পুরো দ্বিতীয় ইনিংস ড্রেসিংরুমেই কাটিয়েছেন। তবে তাতে খুব একটা ক্ষতি হয়নি, পা তুলে বিশ্রাম নিতে নিতে তিনি দেখেছেন নিউজিল্যান্ডের রোমাঞ্চকর ৭ রানের জয়।
ম্যাচ জুড়ে দুই গতির পিচে দিক বদলে সিম-সুইংয়ে ব্যাটিং ছিল অত্যন্ত কঠিন। মিচেল শুরুতে স্বাভাবিক থাকলেও পরে লড়াই করতে হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শৃঙ্খলাবদ্ধ বোলিংয়ের সঙ্গে এবং নিজের চোটের সঙ্গেও। সেই পরিস্থিতিতে দলকে ২৬৯ রানে নেওয়া তার ১১৯ রানের ইনিংসকে করেছে বিশেষ।
সেঞ্চুরি পূর্ণ হতেই মিচেলের আবেগ ছিল বিস্ফোরণসম-হেলমেট খুলে উচ্চকণ্ঠে ‘ইয়েস’ বলে চিৎকার, এতটাই যে মাথার শিরাগুলোও যেন স্পষ্ট ফুটে উঠছিল। এমন ধরনের ইনিংস একসময় কেবল কেন উইলিয়ামসন বা রস টেলরের জন্য সংরক্ষিত ছিল। কিন্তু মিচেল ক্রমেই নিজেকে তাদের কাতারেই নিয়ে যাচ্ছেন। তার ১১৮ বলে ১১৯ একটি নিখুঁত উদাহরণ। নিউজিল্যান্ডের কেউই তার অর্ধেক রানও করতে পারেনি, শারফেইন রাদারফোর্ডের ৫৫ ছিল পরের সর্বোচ্চ। তবে হ্যাগলি ওভালের দিনটি দুর্বল হৃদয়ের মানুষের জন্য ছিল না।
টার্গেট তাড়া করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আরও ভুগেছে, আলো জ্বলার পর সাহায্য আরও বেড়ে যায়। কেসি কার্টি ৬৭ বল খেললেও ছিলেন যেন বোলারদের পরীক্ষায় ব্যবহৃত পুতুল-সুইং, সিম, বাউন্স-সবই একসঙ্গে তার ওপর আছড়ে পড়ছিল। প্রথম ১০ ওভারে আসে মাত্র ৩২ রান, পরের ৯ ওভারে ২৭। ৩০ বলের মধ্যে কেবল সাতটি স্কোরিং শট সম্ভব হয়-এটা তখনো মূল বোলাররা নয়, বরং জ্যাকব ডাফি ও জ্যাক ফৌলকসের সময়।
শাই হোপ (৩৭) ও রাদারফোর্ড কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও কিপুর হাত ফসকে যাওয়া সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
তারা ম্যাচে নেমেছিল পাঁচটি পরিবর্তন নিয়ে-তিন স্পিনার বাদ, তিন সিমার যুক্ত। তাদের মধ্যে সেরা ছিলেন ম্যাথিউ ফোর্ড, যিনি সপ্তম ওভারে টানা দুই বলে রাচিন রবীন্দ্র (৪) ও উইল ইয়াংকে (গোল্ডেন ডাক) আউট করে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা তৈরি করেছিলেন।
সেখান থেকেই ম্যাচ বদলে দিতে মিচেল এসে হাতে নেন ইনিংস। অন্য ব্যাটাররা যেখানে ক্রিজে আটকে ছিলেন, ফোর্ডকে জমে উঠতে দিচ্ছিলেন, সেখানে মিচেল দৌড়ে এসে তাকে সামলেছেন, বলের গতি (গড়ে ছিল ১২২ কিমি/ঘণ্টা) সামলাতে ভরসা করেছেন নিজের প্রতিক্রিয়ার ওপর এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ-সাইডওয়ে মুভমেন্টকে নিষ্ক্রিয় করেছেন। উইকেটকিপারকে আপ করে চেষ্টা করলেও কাজ হয়নি।
৩৭ বলে ৩৩ করা মিচেল পরে ৫৬ বলে ৭৭-এ পৌঁছান। এরপর বোলারদের শৃঙ্খলাবদ্ধ বোলিংয়ে কিছু ওভার রান-এ-বলও যেতে পারেনি। বিশেষত রোস্টন চেজ বাতাসকে কাজে লাগিয়ে এমন বোলিং করেন যে, তার ১০ ওভারে আসে মাত্র একটি বাউন্ডারি। রোমারিও শেফার্ড চোটে না পড়লে পরিস্থিতি আরও কঠিন হতে পারত।
নিউজিল্যান্ড যখন ১৯২/৫, তখনই মিচেল দৌড়াতে গিয়ে চোট পান-৭৮ বলে ৯২। বাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েই ব্যাট চালাতে থাকেন। সৌভাগ্য তিনি ছয় ফিটের বেশি শক্তপোক্ত এক ব্যাটার-এভাবে দাঁড়িয়ে থেকেই মারতে মারতে পৌঁছে যান শতকে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ মিচেলকে ১৯ ও ৬৭ রানে দুইবার ক্যাচ তুলে দিতে পারত, কিন্তু চেজ ও সিলস ধরতে পারেননি। কনওয়ের ধৈর্যশীল ৪৯ রানও ইনিংসে বড় অবদান রাখে।
নিউজিল্যান্ডের স্পেশালিস্ট ফাস্ট বোলাররাও কাজ করেছেন অসাধারণভাবে। ম্যাট হেনরি, কাইল জেমিসন ও ডাফি মিলিয়ে (২৯-৪-১৪৬-৪)। অতিরিক্ত বাউন্সে ব্যাটারদের ভড়কে দিয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অলরাউন্ডারদের বোলিং কঠিন কন্ডিশনে যথেষ্ট ছিল না।
শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড ৭ রানে দারুণ জয় তুলে নেয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউজিল্যান্ড ২৬৯/৭ (মিচেল ১১৯, কনওয়ে ৪৯; সিলস ৩-৪১, ফোর্ড ২-৫৫)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৬২/৬ (রাদারফোর্ড ৫৫, জেমিসন ৩-৫২)
ফল: নিউজিল্যান্ড ৭ রানে জয়ী