‘আমি ড্রেসিংরুমের স্বৈরাচার নই’

স্পোর্টস ডেস্ক
১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৪:৩৫
শেয়ার :
‘আমি ড্রেসিংরুমের স্বৈরাচার নই’

সাম্প্রতিক সময়ে নানা বিতর্কের মুখে পড়েছেন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। জুনিয়রদের শারীরিকভাবে নির্যাতন থেকে শুরু করে সিনিয়রদের ক্যারিয়ার নষ্ট করার অভিযোগ-সব মিলিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে তার নেতৃত্ব। সমালোচনা যত বেড়েছে, ততই বেড়েছে তার ওপর নজরদারি।

বর্তমানে ইনজুরির পুনর্বাসনে থাকা জ্যোতি বিকেএসপিতে বসে ক্রিকবাজকে দিয়েছেন খোলামেলা সাক্ষাৎকার। শান্ত কিন্তু দৃঢ় কণ্ঠে তিনি উত্তর দিয়েছেন সব অভিযোগের-ড্রেসিংরুমের ‘একনায়ক’ ট্যাগ থেকে শুরু করে সাবেক সিনিয়রদের সঙ্গে দূরত্ব এবং আসন্ন ভারত সিরিজকে সামনে রেখে দল পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জ পর্যন্ত।

আপনার রিহ্যাব কেমন চলছে?

খুব ভালো চলছে। এনসিএল খেলিনি, পুরো মনোযোগই রিহ্যাবে ছিল। বোর্ডকে আগেই জানিয়েছিলাম যে বিশ্বকাপের পরে কিছুদিন খেলব না। তিন–চার মাস ধরে ইনজুরিতে ভুগছি, তবে বিশ্বকাপের গুরুত্বের কারণে খেলেছিলাম। মুম্বাইয়ে ডাক্তাররা পরীক্ষার পর জানালেন চার থেকে ছয় সপ্তাহ বিশ্রাম দরকার। পাশাপাশি আপার–বডি ওয়ার্ক, এন্ডুরেন্স ট্রেনিং, জিম এবং সুইমিং করতে হবে। শেরপুরে এগুলো সম্ভব না, তাই বিকেএসপিতে থাকার অনুরোধ করেছি যেন রিহ্যাবের পাশাপাশি এনসিএলও দেখতে পারি।

এই ইনজুরি কি আপনার বিশ্বকাপ পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলেছে?

হ্যাঁ, বিশ্বকাপটা আমার পক্ষে যায়নি। আমি সবসময় ধারাবাহিক। কোয়ালিফায়ারে সব ম্যাচে রান করেছি, আগের সিরিজেও তাই। কিন্তু এবার কঠোর পরিশ্রম করেও নিজের মান ধরে রাখতে পারিনি। আমি যদি নিজের মত ব্যাট করতে পারতাম, হয়তো আরও দুটি ম্যাচ জেতা সম্ভব হতো।

দলনায়ক হিসেবে আপনাকে ‘একনায়ক’ বলা হচ্ছে-জবাব কী?

আমি কখনোই স্বৈরাচারী নই। ড্রেসিংরুমে সবারই একটি জায়গা আছে-আমারও আছে। হ্যাঁ, অধিনায়ক হিসেবে আলাদা সম্মান পাই, কিন্তু সুযোগ–সুবিধা ও আচরণ সবার জন্য সমান। কে এসব বলছে, কেন বলছে জানি না। কিন্তু এখন স্পষ্ট-পেছনে কারা আছে। সবাই আমাকে ভালোবাসবে, এমন আশা করি না। আমি জানি আমি দলের জন্য কী করছি।

জাহানারা আলম ও রুমানা আহমেদ বলেছেন আপনি তাদের দল থেকে বাদ দেওয়ার পেছনে ছিলেন-আপনার বক্তব্য?

এই অভিযোগ বহুদিন ধরে শুনছি-যে নাকি আমি তাদের বাদ দিয়েছি কারণ তারা পারফর্মার বা নেতৃত্বের দৌড়ে ছিলেন। প্রথমত আমাকে কি কেউ বলতে পারে ‘সিন্ডিকেট’ কী? ২০১৫ সাল থেকে জাতীয় দলে খেলছি, কখনো এমন কিছু দেখিনি। ড্রেসিংরুমে সবাই আপনার ঘনিষ্ঠ হয় না, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আমি কীভাবে কাউকে বাদ দেব? আমি কি সিলেক্টর?

২০২৩ সালে অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগে পর্যন্ত আমি নির্বাচনী প্যানেলে ছিলামই না। এগারোজন কী হবে, তা অন্য খেলোয়াড়দের মতো আমিও ম্যাচের দিন জানতে পারতাম। স্কোয়াড নিয়েও আমার সঙ্গে কোনো আলোচনা হতো না। বোর্ড চাইলে এটি যাচাই করতে পারে।

নিউজিল্যান্ড সফরের সময় এক ম্যাচে সালমা আপু আমাকে বলেছিলেন, ‘তুই আমাদের বসিয়ে দিয়েছিস।’ আমি বলেছিলাম, ‘আপু, আমি নিজেও এগারো জানি না, আমার কোনো হাত নেই।’ তিনি বলেছিলেন, ‘তাহলে তুই কি কেবল টস করার জন্যই অধিনায়ক?’-এরকম কথা শুনতে হয়েছে আমাকে।

আপনার আর সিনিয়রদের সম্পর্ক ভেঙে গেল কেন?

সালমা আপু আমার আইডল। তাকে দেখেই ক্রিকেটে এসেছি। তাদের সঙ্গে খেলতে পারা ছিল স্বপ্ন। কিন্তু যখন আমাকে অধিনায়ক করা হলো, তখনই সমস্যা শুরু। শুনেছি-একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগেই কয়েকজন সিনিয়র সিদ্ধান্ত নেন যে তারা একজন জুনিয়রের অধীনে খেলবেন না। কোচিং স্টাফের শর্তে পরে তারা খেলেছিলেন। তাদের সমস্যা ছিল-আমি জুনিয়র হয়েও অধিনায়ক হয়েছি। মূল বিষয়টি গ্রহণযোগ্যতার।

আপনার পারফরম্যান্স কি তাদের মধ্যে হিংসা তৈরি করেছিল?

সম্ভব। ২০১৮ পর্যন্ত আমাকে মিডল অর্ডারে খেলানো হতো, যদিও ওপরে ব্যাটিং করার সামর্থ্য ছিল। ভারতীয় কোচেরা এসে প্রশ্ন করেছিলেন কেন আমি এত নিচে ব্যাটিং করি, তারপর আমাকে ওপরে তুলে দেন এবং আমি নিয়মিত রান করতে থাকি। মিডিয়া মনোযোগ বাড়ার পর হয়তো বিরক্তি বাড়ে।

জুনিয়রকে গালাগালি বা মারধরের অভিযোগ-সত্যি কি?

এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কেবল একজন এ কথা বলেছে। মাঠে তাড়াহুড়োর সময় আমি হয়তো বলি, ‘বলটা তুললে না কেন?’ ‘স্টাম্পে দাও’-এগুলো স্বাভাবিক। কিন্তু গালাগালি? তা আমার স্বভাবেই নেই। আমি কি মানসিকভাবে অস্থির? দল ব্যবস্থাপনা তো আছে-আমি যদি কাউকে মারি, তারা জানবে না? অস্ট্রেলিয়ায় ফোন করে অভিযোগ করতে হবে?

২০২২ এনসিএলে মুর্শিদাকে চড় মেরেছি-এ অভিযোগও মিথ্যা। আমরা ভিন্ন দলে ছিলাম, কথা–বার্তাই খুব কম হতো। কী প্রমাণ আছে?

শ্রীলংকায় মারুফার সঙ্গে কী হয়েছিল?

ঘটনাটি ভুলভাবে প্রচার করা হচ্ছে। পাকিস্তান সিরিজ থেকে মারুফার উঁচু ক্যাচ ধরায় সমস্যা হচ্ছিল। সে আমার সেরা ফিল্ডারদের একজন। তাকে বারবার বলেছি আলাদা করে ক্যাচিং প্র্যাকটিস করতে। ম্যাচেও সে গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্যাচ ফেলে দেয়। তার হাত ব্যথা পেয়েছে ভেবে তাকে বিশ্রামে পাঠিয়েছি। দূর থেকে চিৎকার করতে হয়েছে, তাই সে কষ্ট পেয়েছিল। পরে সে নিজেই বলেছে-সে কেঁদেছিল ক্যাচ না ধরতে পারার হতাশা থেকে, আমার কারণে নয়।

ভারত সিরিজের আগে দলকে আবার একত্র করা কতটা কঠিন হবে?

খুবই কঠিন। প্রথমত, বিশ্বাসের সংকট তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয়ত, সিনিয়র–জুনিয়রদের বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। তবে বিশ্বকাপের সময়ে আমরা একসঙ্গে ছিলাম, পরস্পরকে সমর্থন করেছি। ভালোবাসা বা সম্মান কখনো জোর করে পাওয়া যায় না। আমি তা অর্জন করছি-এবং যাদের সঙ্গে খেলছি, তারা তা অনুভব করছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব দূর হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।