শুভ ও মারুফের উদ্যোগে ক্যাম্পাসে সাশ্রয়ী খাবার

সানজিদা জান্নাত পিংকি
১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:১১
শেয়ার :
শুভ ও মারুফের উদ্যোগে ক্যাম্পাসে সাশ্রয়ী খাবার

ক্যান্টিনের সমস্যা গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে বহুদিনের। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীরা ভুগছেন উচ্চমূল্যের খাবার, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও সীমিত বিকল্পে। এই দীর্ঘদিনের সমস্যার উত্তরণ ঘটিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই তরুণ শিক্ষার্থী, যারা পড়াশোনার পাশাপাশি করেছেন সাশ্রয়ী, নিরাপদ এবং শিক্ষার্থীবান্ধব খাবারের ব্যবস্থা, যা ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসে বেশ সাড়া ফেলেছে।

কুয়াকাটার সাগরপারে বেড়ে ওঠা ছেলে শুভ। বাবার ছোট্ট খাবারের দোকান, গৃহিণী মায়ের যত্নে গড়া সংসার আর তিন ভাইবোনের মধ্যে তার একমাত্র শিক্ষিত হওয়াকে এক ধরনের ভারী দায়িত্বের সঙ্গে অর্থের সীমাবদ্ধতা ছড়িয়ে আছে ছোটবেলা থেকেই তার চোখের সামনে। মোজাম্মেল হাওলাদার শুভ পড়াশোনা করছেন ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস অনুষদে। ক্যাম্পাসে এসেই দেখেছেন উচ্চমূল্যের খাবার ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। অর্থসংকটে সারাদিন না খেয়ে থাকার অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি অনুভব করেছেন- নিজে কিছু করে শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ, বাজেট-ফ্রেন্ডলি খাবারের ব্যবস্থা করা যায় কিনা। অনুমতির পথে একাধিক বিঘ্ন আসে। প্রশাসনের অনুমতি বারবার চেষ্টায়ও মেলেনি। কিন্তু তিনি হতাশ হননি। ছাত্রসংসদের সহায়তায় অবশেষে ক্যাম্পাসের ভেতরে চালু হয় তার কার্ট- ‘শুভর ক্যান্টিন’।

প্রতিদিন নিজে রান্না করে শিক্ষার্থীদের কাছে ৩৫ টাকায় ভর্তা-খিচুড়ি পৌঁছে দেন এই শিক্ষার্থী। ক্লাস-ল্যাবের পাশাপাশি এই কাজ চাপের হলেও শুভ সহযোগিতা পাচ্ছেন অনেকেরই। শুভর ক্যান্টিন কেবল খাবারের জন্য নয়, এই উপার্জনের অংশ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়াশোনার খরচে যাবে। পড়াশোনা শেষ হলে তিনি চান কার্টটি তারই মতো কোনো একজন শিক্ষার্থীকে হস্তান্তর করতে, যেন বেঁচে থাকে ‘শুভর ক্যান্টিন’।

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিক্যুলার বিভাগের ছাত্র মারুফ হাসান তার ছোট্ট উদ্যোগে চালু করেছেন ‘খুদে ঘর’। এই তরুণের গল্পটা একটু ভিন্ন। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা চলাকালেই মাথায় আসে বাজেট-ফ্রেন্ডলি এবং নিরাপদ খাবার সরবরাহ করার উদ্যোগ। নিজেও যে এই সমস্যার মুখোমুখি, তা ছিল মূল প্রেরণা।

তার শুরুটাও সহজ ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে অনুমতি না থাকায় প্রথমে বাইরে ফুড কার্ট খোলেন মারুফ। সেখানেও স্থায়ী হতে পারেননি। কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি। ছাত্রসংসদের উদ্যোগে ক্যাম্পাসের ভেতরে ফুড কার্ট স্থাপনের অনুমতি পেয়ে শুরু করেন নতুন যাত্রা। প্রতিদিন নিজের রান্না করা মাংস-খিচুড়ি তার মূল আকর্ষণ, যা মাত্র ৪৫ টাকায় শিক্ষার্থীদের মনে জায়গা করে নিয়েছে।