লাগামহীন খেলাপি ঋণে আইএমএফের উদ্বেগ
দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের (এনপিএল) লাগামহীন বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সেই সঙ্গে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে জোর তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দলের বৈঠকে এমন তাগাদা দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল দেশের ৪৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক- যেখানে প্রতিটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি, পুনঃতফসিল ও অবলোপন পরিকল্পনা এবং ঋণ আদায়ের অগ্রগতি জানতে চাওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কবির আহমেদের সভাপতিত্বে বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত, বিশেষাষিত ও বেসরকারি খাতের ৪৭টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নেন। তবে মার্জার প্রক্রিয়া থাকা ৫ ব্যাংকে এই বৈঠকে রাখা হয়নি। এ ছাড়া বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কম হওয়ায় তাদেরও ডাকা হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, খেলাপি ঋণ নিয়ে আইএমএফ উদ্বিগ্ন। খেলাপি ঋণ কেন বাড়ল এবং এটা কমিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে চায় আইএমএফ। এর প্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলোর সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে আজ (গতকাল) বৈঠক হয়েছে। এতে খেলাপি ঋণ কমানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে খেলাপি ঋণের বিষয়ে ব্যাংকগুলো কি করছে, তাদের পরিকল্পনা কি, বাংলাদেশ ব্যাংকের কি করার আছেÑ সে বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খেলাপি ঋণের জুনের তথ্য এখনও প্রকাশ করা হয়নি। এর কারণ খেলাপি ঋণের অতিরিক্ত বৃদ্ধি। এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আইএমএফ। তারা খেলাপি ঋণ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে চায়।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, ব্যাংক খাতে প্রধান সমস্যা এখন খেলাপি ঋণ। বৈঠকে এটা কমানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া খেলাপি ঋণ কমানোর পরিকল্পনাও জানতে চাওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর
ব্যাংক খাতে লুকানো খেলাপি ঋণ বের হয়ে আসছে। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ কাগজে-কলমে কম দেখাতে নেওয়া হয়েছিল একের পর এক নীতি। সরকার পরিবর্তনের পর সেই নীতি থেকে সরে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে অস্বাভাবিক গতিতে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই (জানুয়ারি-মার্চ) খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৭৪ হাজার কোটি টাকা। আগের তিন মাসে বেড়েছিল (অক্টোবর-ডিসেম্বর-২০২৪) প্রায় ৬১ হাজার কোটি টাকা। এতে চলতি বছরের মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গত জুন শেষে খেলাপি ঋণ ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। যদিও জুনের তথ্য এখনও আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করা হয়নি।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে আইএমএফ জানতে চেয়েছে, খেলাপি ঋণ কমাতে কী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে এবং এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কতটা অগ্রসর হয়েছে। তাদের এই তাগিদে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৪৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে গতকাল বৈঠক করেছে। এতে ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায়ের অবস্থা, শিথিল নীতিমালার আওতায় খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল ও অবলোপনের অগ্রগতি জানতে চাওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে আগামীতে এই তিনটি বিষয়ে কঠোরভাবে নজর দিতে বলা হয়েছে, যাতে ডিসেম্বরের মধ্যে খেলাপি ঋণ একটি নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়।
জানা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখতে এবং ব্যাংকের ঋণ আদায় নিশ্চিতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ১০ বছরের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দিয়ে সার্কুলার জারি করে। এ সুবিধা পেতে হলে আগামী ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে আবেদন করতে হবে। এর আগে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ পুনর্গঠনে নীতি সহায়তা কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই কমিটির আওতায় চার শতাধিক প্রতিষ্ঠান পুনঃতফসিল সুবিধা পায়।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম
এদিকে গত মাসে খেলাপি ঋণ অবলোপন নীতিমালায় শিথিলতা আনা হয়। এখন থেকে ৩০ দিন আগে নোটিশ দিয়ে মন্দ মানে যে কোনো খেলাপি ঋণ অবলোপন করা যাবে। আগে মন্দ ও ক্ষতিজনক মানের ঋণ ২ বছরের পুরনো না হলে অবলোপন করার সুযোগ ছিল না।