দুই স্তরের টেস্ট ভাবনা বাতিল, ফিরছে ওয়ানডে সুপার লিগ
দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় থাকা দ্বি-স্তর বিশিষ্ট টেস্ট ক্রিকেটের পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত বাতিলের পথে। বরং আগামী টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্র (২০২৭–২০২৯) থেকে সব ১২টি পূর্ণ সদস্য দেশকে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে আইসিসি ওয়ার্কিং গ্রুপ। পাশাপাশি ফেরানো হতে পারে বন্ধ হয়ে যাওয়া ওয়ানডে সুপার লিগও।
দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত আইসিসির সর্বশেষ ত্রৈমাসিক সভায় এসব সুপারিশ তুলে ধরে রজার টুজের নেতৃত্বাধীন ওয়ার্কিং গ্রুপ। ধারণা করা হচ্ছে, শিগগিরই আইসিসি বোর্ডের অনুমোদনের মাধ্যমে প্রস্তাবগুলো কার্যকর হবে।
স্বস্তি ‘দ্বিতীয় সারির’ দেশগুলোর
দুই স্তরের টেস্ট ক্রিকেটের প্রস্তাব বাতিল হওয়ায় বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দেশগুলো স্বস্তি পেতে পারে। কারণ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে এ দলগুলোকে থাকতে হতো দ্বিতীয় স্তরে, ফলে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো শীর্ষ দলের সঙ্গে টেস্ট খেলার সুযোগ হতো সীমিত।
বছরের পর বছর ধরে পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে উন্নয়ন-অবনমন পদ্ধতিতে টেস্ট ক্রিকেটে দুটি স্তর চালুর চিন্তা হচ্ছিল। সাম্প্রতিক সময় সেই আলোচনা জোরদার হলেও শেষ পর্যন্ত আর্থিক ও প্রতিযোগিতামূলক ভারসাম্যের জটিলতায় সেটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বড় তিন দলের (ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া) কোনোটি যদি নিচের স্তরে নেমে যেত, তবে তা আইসিসির বাণিজ্যিক কাঠামোর জন্য বড় ধাক্কা হতো— এ আশঙ্কাই শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত বদলে দিয়েছে।
আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ড যুক্ত হতে পারে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে
বর্তমানে ১২টি টেস্ট খেলুড়ে দেশ থাকলেও টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেয় ১০টি দল। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০২৭ সালের জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া চক্রে আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডকেও অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। আগের মতোই প্রতিটি দলের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক টেস্ট খেলার বাধ্যবাধকতা থাকবে, যদিও সেই সংখ্যা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
আয়ারল্যান্ড আর্থিক সংকটে টেস্ট আয়োজনের সক্ষমতা হারাতে বসেছে, তবুও আইসিসি আপাতত অতিরিক্ত অর্থ সহায়তার পরিকল্পনা করেনি।
ফিরছে ওয়ানডে সুপার লিগ
একই সঙ্গে ওয়ানডে ফরম্যাটেও বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলেছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া ওয়ানডে সুপার লিগ আবারও ফিরতে পারে ২০২৮ সাল থেকে, যা ২০৩১ বিশ্বকাপের যোগ্যতা নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে।
২০২০ সালে চালু হওয়া লিগটি ২০২৩ বিশ্বকাপের পর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। নতুনভাবে শুরু হলে আগের মতো ১৩ দলই থাকবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
বিশ্বকাপ ফরম্যাটে স্থিতাবস্থা
ওয়ানডে বিশ্বকাপে দল বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই। ২০১৯ ও ২০২৩ আসরের মতোই ২০২৭ এবং ২০৩১ বিশ্বকাপ হবে ১৪ দল নিয়ে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও আপাতত ২০ দলেরই থাকছে, যদিও অনেক সহযোগী দেশ ভবিষ্যতে দলসংখ্যা বাড়িয়ে ২৪ বা ৩২ করার দাবি জানিয়ে যাচ্ছে।
নতুন বাছাই পদ্ধতির প্রস্তাব
সহযোগী দেশগুলো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাই পদ্ধতি পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের দাবি— অলিম্পিক বা অন্যান্য বৈশ্বিক আসরের মতো র্যাঙ্কিংভিত্তিক সীমিতসংখ্যক দল সরাসরি বিশ্বকাপে খেলবে, আর বাকিদের যেতে হবে বৈশ্বিক বাছাইপর্বে। এতে ছোট দেশগুলো বড় দলের বিপক্ষে খেলার বেশি সুযোগ পাবে, যা তাদের ক্রিকেটীয় উন্নয়ন ও আর্থিক স্থিতিশীলতায় সহায়ক হবে।
এই বৈশ্বিক বাছাই পদ্ধতি চালুর লক্ষ্য ২০২৮ বিশ্বকাপ থেকেই।
টি-টেন এখনো স্বীকৃত নয়
টি-টেন ক্রিকেটকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি আইসিসি।
সব প্রস্তাব ও পরিবর্তন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে আগামী ফেব্রুয়ারির আইসিসি সভায়।