জাতীয় নেতৃত্বের পাদপ্রদীপে উঠে আসেন জিয়া

নজরুল ইসলাম
০৭ নভেম্বর ২০২৫, ১২:২৮
শেয়ার :
জাতীয় নেতৃত্বের পাদপ্রদীপে উঠে আসেন জিয়া

আজ ৭ নভেম্বর, ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের ৫০ বছরপূর্তি। এদিনটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টপরবর্তী সেনা-অভ্যুত্থান ও পাল্টা-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে তৈরি হয়েছিল চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। ৩ থেকে ৬ নভেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত চলেছিল শ্বাসরুদ্ধকর অনিশ্চিত অবস্থা। ৩ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে উচ্চাভিলাষী একদল সেনাসদস্য স্বাধীনতার ঘোষক ও তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সেনানিবাসে বন্দি করে। স্বঘোষিত পদোন্নতি নিয়ে খালেদ মোশাররফ মেজর জেনারেলের ব্যাজ ধারণ এবং সেনাপ্রধানের পদ দখল করেন।

৬ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ বঙ্গভবনে গিয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমদকে গ্রেপ্তার করে মন্ত্রিসভা বাতিল ও জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেন। একই দিনে প্রধান বিচারপতি আবু সা’দাত মোহাম্মদ সায়েমকে দেশের প্রেসিডেন্টের পদে বসান তিনি।

স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে সেনানিবাসে বন্দি করায় দেশের সাধারণ মানুষ ও সিপাহিরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। প্রিয় সেনাপ্রধানকে মুক্ত করতে সিপাহিরা পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তাঁদের সঙ্গে জনতাও ঐক্যবদ্ধ হয়ে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেন।

সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমানের লেখা ‘কিছু স্মৃতি কিছু কথা’ বইয়ে তিনি উল্লেখ করেন, ‘৭ নভেম্বর গোটা দেশজুড়ে ঘটে সৈনিক-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত এক অভূতপূর্ব উত্থান। আর জেনারেল জিয়া সে অভ্যুত্থানের উত্তাল তরঙ্গমালার শৃঙ্গে আরোহণ করে উঠে আসেন জাতীয় নেতৃত্বের পাদপ্রদীপে।’

দিনটিকে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে পালন করছে বিএনপি। দিবসটি উপলক্ষে সারাদেশে আজ থেকে ১০ দিনের কর্মসূচি করছে দলটি। দিবসটি উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বাণী দিয়েছেন।

৭ নভেম্বরের বিপ্লব সম্পর্কে তদানীন্তন দৈনিক বাংলার রিপোর্টে বলা হয়, সিপাহি ও জনতার মিলিত বিপ্লবে চার দিনের দুঃস্বপ্ন শেষ হয়েছে। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়েছেন। ৭ নভেম্বর ভোরে রেডিওতে ভেসে আসেÑ ‘আমি মেজর জেনারেল জিয়া বলছি।’ জেনারেল জিয়া জাতির উদ্দেশে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে যথাস্থানে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। ওই দিন রাজধানী ঢাকা ছিল মিছিলের নগরী। পথে পথে সিপাহি-জনতা আলিঙ্গন করেছে একে অপরকে। সাধারণ মানুষ সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্কের নলে পরিয়ে দেয় ফুলের মালা। এই আনন্দের ঢেউ রাজধানী ছাড়িয়ে দেশের সব শহর-নগর-গ্রামেও পৌঁছে যায়।

৭ নভেম্বরের ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে জিয়াউর রহমানের দৃঢ়ব্যক্তিত্ব, অসীম সাহসিকতা, আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তার কথাও মাহবুবুর রহমান তাঁর বইয়ে উল্লেখ করেন। ঢাকা সেনাসিবাসের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমার মনে পড়ে, ঢাকা সেনানিবাসে তিনি এ সময়ে এক সৈনিক দরবারে এসেছিলেন। মাঠে অস্ত্র উঁচিয়ে উচ্ছৃঙ্খল সৈনিকের ভিড়। চতুর্দিকে মুহুর্মুহু সেøাগানÑ জিয়া ভাই, জিয়া ভাই। ঢাকা সেনানিবাসের আকাশ-পাতাল মুখরিত। পতাকাবাহী গাড়ি রাস্তায় রেখে তিনি হেঁটে সৈনিকদের ঠিক মাঝখানে চলে আসেন। মাইক্রোফোনটা হাতে নিয়ে চিৎকার করে বলতে শুরু করেন, ‘তোমরা সকলে চুপ করো। আমি তোমাদের ভাই নই। আমি তোমাদের সেনাপ্রধান। সাবধানে কথা বলো। সেনা শৃঙ্খলা ভঙ্গ আমি কখনও সহ্য করব না।’ তিনি সকলকে ব্যারাকে যাওয়ার আদেশ দেন। অস্ত্র জমা দিতে বলেন এবং চেইন অব কমান্ডে ফিরে আসতে বলেন।’

মাহবুবুর রহমান তাঁর বইয়ে উল্লেখ করেন, ‘অবাক বিস্ময়ে আমি লক্ষ্য করিÑ মুহূর্তের মধ্যে সমস্ত কোলাহল স্তব্ধ, সৈনিকরা লাইন ধরে সুড় সুড় করে আপন আপন ইউনিটের দিকে ধাবমান। আমার কাছে সেদিন জিয়াকে মনে হয়েছিল তিনি যেন সেই হ্যামিলনের বংশীবাদক, যার বাঁশির সুরে হ্যামিলন নগরীর সকল শিশু-কিশোর যে যেখানে ছিল তাঁর পেছনে পেছনে ছুটে চলেছে।’

বিগত আওয়ামী শাসনামলে ৭ নভেম্বর দিবসটি স্বাচ্ছন্দ্যে উদযাপন করতে পারেনি বিএনপি। স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে সমাদৃত জিয়াউর রহমান বীর উত্তমকে বরং ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার নানা চেষ্টা হয়েছে।

গত বছর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর আবার দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। বিএনপি সরকারের আমলে এদিনটিতে ছিল সরকারি ছুটি। দিবসটি উপলক্ষে আজ থেকে ১০ দিনের কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। এর মধ্যে রয়েছেÑ আজ সকাল ৬টায় বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয়গুলোতে দলীয় প্রতাকা উত্তোলন, সকাল ১০টায় সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীরউত্তমের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে বেলা ৩টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শোভাযাত্রা। এ ছাড়া সারাদেশে বিএনপির উদ্যোগে জেলা ও উপজেলাপর্যায়ে শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। পৃথক দিনে পর্যায়ক্রমে শ্রমিক দল, ছাত্রদল, ওলামা দল, তাঁতি দল, কৃষক দল, জাসাস নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

বিএনপির উদ্যোগে ১২ নভেম্বর বেলা ২টায় বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন জোটসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো নানা কর্মসূচি পালন করছে।