রোমাঞ্চকর জয়ে এগিয়ে গেল পাকিস্তান

স্পোর্টস ডেস্ক
০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১১:০৪
শেয়ার :
রোমাঞ্চকর জয়ে এগিয়ে গেল পাকিস্তান

ফয়সালাবাদে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে নাসিম শাহ ও আবরার আহমেদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২৬৩ রানে গুটিয়ে দেয় পাকিস্তান। শুকনো ও সমতল ব্যাটিং উইকেটে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ শুরু থেকেই নিজেদের হাতে রাখে স্বাগতিকরা এবং শুরুতে ১৫ ওভারেই ৮৭ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়ে ম্যাচের গতি নিজেদের দিকে টেনে নেয় তারা।

তবে মধ্য ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনাররা লড়াইয়ে ফেরে, পাকিস্তানের রানের গতি কিছুটা কমে যায়। সদ্য অধিনায়কত্ব হারানো মোহাম্মদ রিজওয়ান (৫৫) ও সালমান আগা (৫৩) ধীরে ধীরে দলকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যান, কিন্তু শেষদিকে নাটকীয় বিপর্যয়ে প্রায় হাতছাড়া হতে বসে ম্যাচ। শেষ পর্যন্ত মোহাম্মদ নওয়াজের ছক্কায় ভর করে শেষ ওভারে দুই উইকেট হাতে রেখে জয় নিশ্চিত করে পাকিস্তান-যে জয়টি আসলে আরও সহজেই আসতে পারত।

শেষ ১২ ওভারে ৭ উইকেট হাতে রেখে মাত্র ৬৯ রান দরকার ছিল পাকিস্তানের। তখন রিজওয়ান ও আগা ৯১ রানের জুটি গড়েছেন, জয় সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছিল। কিন্তু করবিন বোশের এক বলে রিজওয়ান ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ারে ক্যাচ তুলে দিলে শুরু হয় ধস।

হুসেইন তালাত ও আগা ধীরে খেলে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আনলেও, তালাত ধীর গতির বলে ভুল করে মিড-অফে লিন্ডের হাতে অসাধারণ ক্যাচ তুলে দেন। এরপর লিন্ড বল হাতে ফিরে এসে বল ঘুরিয়ে নাওয়াজ হাসানকে স্টাম্প করান।

এরপর আগাও ডোনোভান ফেরেইরার দুর্দান্ত ক্যাচে বিদায় নিলে ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়। শেষ ৭ বলে দরকার ছিল ১০ রান—এই সময় নওয়াজের ব্যাট থেকে আসে সোজা ছক্কা, যা কার্যত জয় নিশ্চিত করে দেয় পাকিস্তানের।

স্কোর সমান হওয়ার পর নওয়াজ আউট হলেও, নাসিম শাহর পায়ে লেগে আসা এক বল থেকে লেগ-বাই নিয়ে পাকিস্তান দৌড়ে জয় ছিনিয়ে নেয়—যেন ম্যাচের অপ্রত্যাশিত জটিলতাই প্রতিফলিত হলো সেই মুহূর্তে।

শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। ফখর জামান ও সাইম আয়ুব মিলে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনারদের টেক্কা দেন। প্রথম ১৫ ওভারেই তারা প্রয়োজনীয় রানরেট ছাপিয়ে যান। কিন্তু ফেরেইরা ও ফোরচুইনের স্পিন আক্রমণেই খেলা ঘুরে যায়।

ফেরেইরা প্রথমে আয়ুবকে আর্ম বল দিয়ে বোল্ড করেন, দুই ওভার পর ফখরও লং-অন-এ ক্যাচ তুলে দেন। ফোরচুইন এরপর বাবর আজমকে (৭) এলবিডব্লিউ করেন—একটি বল যা ব্যাটসম্যান ও বোলার—দুজনের কাছেই স্পষ্ট সিদ্ধান্ত ছিল।

রিজওয়ান ও আগা আগের মতোই শান্তভাবে খেলে পাকিস্তানকে আবার ম্যাচে ফেরান। তাদের ঘূর্ণায়মান স্ট্রাইক রোটেশন দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের তাল কেটে দেয়, এবং তারা অতিথিদের মতো মাঝের ওভারে উইকেট হারানোর ভুল এড়ায়।

এই সিরিজে দুই দল মিলিয়ে ছয়জন অধিনায়ক পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু প্রতি ম্যাচেই টস জিতেছে পাকিস্তান। এবারও টস জিতে ফয়সালাবাদের দলটি বোলিং নেয়।

অভিষেক হওয়া লুয়ান-দ্রে প্রিটোরিয়াস ও অভিজ্ঞ কুইন্টন ডি কক দারুণ সূচনা এনে দেন। দুইজনই শাহিন ও নাসিমকে শুরুতে আক্রমণ করে রান তুলতে থাকেন। প্রিটোরিয়াস আঘা সালমানকে কভার দিয়ে ছক্কা মারেন, আর ডি কক আবরারকে লং-অফের ওপর দিয়ে পাঠান বাউন্ডারিতে।

১৬তম ওভার পর্যন্ত তারা ৯৮ রানে পৌঁছে যান। কিন্তু আয়ুবের এক বলে প্রিটোরিয়াস ক্যাচ দিলে ভাঙে জুটি। এরপরও ডি কক হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন, কিন্তু নাসিম শাহর পরিবর্তিত লাইন ও অ্যাঙ্গেলে চিপ করে নিজের স্টাম্পে লাগান—যা থেকে পাকিস্তান আবার ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয়।

এরপরই আইয়ুব ডি জর্জির উইকেট নিলে ধস শুরু হয়। সিনেতেম্বা কেশিলে ও অধিনায়ক মেথিউ ব্রিটজকে কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও, নওয়াজ ও আবরারের স্পিনে ভেঙে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার নিচের ব্যাটিং লাইনআপ।

আবরার এক ওভারে দুই উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিকের কাছাকাছি চলে আসেন, যদিও শেষ বলে ইনসাইড এজে বেঁচে যান ব্যাটসম্যান।

শেষদিকে বোশ ৪১ রানের একটি ছোট জুটি গড়লেও, দলের স্কোর থেমে যায় ২৬৩ রানে—যা শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট হয়নি।

সংক্ষিপ্ত ফলাফল

দক্ষিণ আফ্রিকা: ২৬৩ (৪৮.৫ ওভার)

প্রধান রান: প্রিটোরিয়াস ৫০, ডি কক ৫৩, বোশ ৩৫*

পাকিস্তানের বোলার: আবরার আহমেদ ৩/৪৭, নাসিম শাহ ২/৩৯, নওয়াজ ২/৪৪

পাকিস্তান: ২৬৪/৮ (৪৯.৫ ওভার)

প্রধান রান: মোহাম্মদ রিজওয়ান ৫৫, সালমান আগা ৫৩, ফখর জামান ৩৪

দক্ষিণ আফ্রিকার বোলার: বোশ ২/৪৮, ফোরচুন ২/৪২

ফলাফল: পাকিস্তান জয়ী ২ উইকেটে

সিরিজে: পাকিস্তান ১-০ তে এগিয়ে