সিলগালা করা ভল্ট ভেঙে আগ্নেয়াস্ত্র লুটের শঙ্কা
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো হাউসের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড থেকে রক্ষা পেয়েছিল স্ট্রং হাউসের ভল্টে রাখা জিনিসপত্র। অগ্নিকাণ্ডের পর বিভিন্ন সংস্থার উপস্থিতিতে স্ট্রং রুম সিলগালা করা হয়। তবে সিলগালা করা ওই স্ট্রং রুমের তালা ভেঙে মূল্যবান জিনিসপত্র ও স্পর্শকাতর ডকুমেন্ট নিয়ে গেছে দুর্বৃত্ত চক্র। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য আমদানি করা বিপুলসংখ্যক আগ্নেয়াস্ত্রও স্ট্রং রুমে ছিল, এসব অস্ত্র খোয়া যাওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। ঘটনাস্থল থেকে তালা কাটার সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে এবং আলামত সংগ্রহ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক দল।
বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা জানান, কার্গো আমদানি কমপ্লেক্সের স্ট্রং রুমের ভল্টে সাধারণত মূল্যবান জিনিসপত্র এবং জরুরি কাগজপত্র রাখা হয়। আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় নথি, শুল্কসংক্রান্ত কাগজপত্র ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক দলিলপত্র রাখা হয়। এ ছাড়া বেশি মূল্যবান কিছু আমদানি করা পণ্য সাময়িকভাবে ভল্টে রাখা হয়। সাধারণত সোনা, হীরা ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ উচ্চমূল্যের ও সহজে বহনযোগ্য পণ্য নিরাপত্তার জন্য রাখা হয়ে থাকে। সেখান
থেকে পণ্য বের করতে হলে কয়েকজনের স্বাক্ষর লাগে। কয়েক স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকে বলেই স্ট্রং রুম বলা হয়।
ভল্ট ভেঙে লুটপাটের ঘটনায় গত ২৮ অক্টোবর বিমানবন্দর থানায় জিডি করেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সহকারী ব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) মো. জামাল হোসেন। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, বিমানবন্দরের কার্গো আমদানি কমপ্লেক্সের স্ট্রং রুমের মালামাল ২৪ অক্টোবর বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার নেয়ামূল, বিমানের জিএম কার্গো নজমুল হুদা, এনএসআইর অতিরিক্ত পরিচালক ফিরোজ রব্বানীসহ অনেকের উপস্থিতিতে ইনভেন্ট্রি শেষ করা হয়। এরপর সব মালামাল ভল্টে রেখে সবার উপস্থিতিতে বিমান সিকিউরিটির প্রতিনিধির স্বাক্ষরসহ শিকল দিয়ে তালা লাগিয়ে ভল্ট সিলগালা করা হয়েছিল। ২৭ অক্টোবর রাত ৯টা ৫০ মিনিটে পুলিশ সদস্য, আনসারসহ সর্বশেষ সিলগালা দেখে এসেছিলেন তিনি। পরের দিন সকাল ৭টা ৭ মিনিটে বিমান নিরাপত্তা শাখার ডিউটি অফিসার জাহাঙ্গীর আলম খানের মাধ্যমে জানতে পারেন, স্ট্রং রুমের ভল্টের তালা লাগানো নেই। বিষয়টি ডিজিএম সিকিউরিটিকে জানিয়ে বিমানবন্দরে আসেন তিনি। ডিজিএম সিকিউরিটিও বিমানবন্দরে আসেন। বিমান নিরাপত্তা ডিউটি অফিসার জাহাঙ্গীর আলম খান ও ডিজিএম সিকিউরিটি উভয়ে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যসহ স্ট্রং রুমের ভল্টের কাছে গিয়ে দেখতে পান কোনো তালা লাগানো নেই।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
জিডির তদন্ত করছেন বিমানবন্দর থানার এসআই এসএম মাইনুল ইসলাম। তিনি গতকাল রাতে আমাদের সময়কে বলেন, আমরা ঘটনার তদন্ত করছি। কার্গো হাউসের আশপাশের সিসি ক্যামেরা পুড়ে গেছে। ফলে সিসি ক্যামেরা থেকে তেমন কোনো তথ্য পাইনি। আমরা সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি। তদন্তের পর ঘটনার বিস্তারিত জানা যাবে।
বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ১৮ অক্টোবর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর বিমানবন্দরের কার্গো হাউস কড়া নিরাপত্তায় রয়েছে। স্পর্শকতার স্থানে সাধারণ মানুষের চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমন নিরাপত্তার মধ্যেই সুরক্ষিত স্ট্রং ভল্টের তালা কেটে লুটপাট করা হয়েছে। সুপরিকল্পিতভাবে একটি শক্তিশালী চক্র এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ওই কর্মকর্তারা মন্তব্য করেন।
বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাসলিমা আক্তার বলেন, কার্গো হাউসের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের। আমরা শুধু গেটের দায়িত্ব পালন করি। মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি করেছে। আমরাও তদন্ত করছি।
স্ট্রং রুম পরিদর্শন করা একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগুনে স্ট্রং রুমের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। গত ২৪ অক্টোবর পরিদর্শনের সময় সেখানে আগ্নেয়াস্ত্র ও মেশিনারিজসহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল অক্ষত অবস্থায় ছিল। আমদানি করা অস্ত্রের কিছু অংশ সরকারি সংস্থা খালাস করে নিয়ে গেছে। তবে কিছু অস্ত্র ভল্টেই ছিল। এখন আগের তালিকার সঙ্গে তদন্তের পরের তালিকা মিলিয়ে দেখে নিশ্চিত হতে হবে যে, কী পরিমাণ মালামাল খোয়া গেছে।