প্রকৌশলীর কাজ করেন সার্ভেয়ার মোরশেদ
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার সার্ভেয়ারের দায়িত্বে রয়েছেন মোহাম্মদ মোরশেদ। এই উপজেলায় এলজিইডি প্রকৌশলীর অধীনে চারজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী থাকলেও সার্ভেয়ার মোরশেদকে দিয়ে করানো হয় তাদের কাজের তদারকি। উপজেলা প্রকৌশলী জয়শ্রী দে’র বিশ্বস্ত হিসেবে ৮০ শতাংশ কাজ মোরশেদ একাই তদারকি করেন। মূলত তদারকির নামে ঠিকাদারদের কাছ থেকে উৎকোচ লেনদেনই তাদের প্রধান কাজ। নানা অজুহাতে ঠিকাদারদের কাছ থেকে ঘুষ নেন জয়শ্রী দে। আবার আলাদা করে মোরশেদকেও দিতে হয়। শতভাগ কাজ বুঝে নেওয়ার ফাঁদে জয়শ্রী-মোরশেদের ঘুষবাণিজ্যে অতিষ্ঠ হয়ে অনেক ঠিকাদার কাজ ছেড়ে দিয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, জয়শ্রী দে’র বিশ্বস্ত ক্যাশিয়ার হওয়ায় উপ-সহকারী প্রকৌশলীর কাজ করানো হয় সার্ভেয়ার মোরশেদকে দিয়ে। বিশেষ সুবিধার কারণে উপজেলার শতকরা ৮০ শতাংশ কাজের তদারকির দায়িত্ব পান সার্ভেয়ার মোরশেদ। বাকি ২০ শতাংশ কাজ চার উপ-সহকারী প্রকৌশলী করেন। যা সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত।
এতে কাজের গুণগত মান সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদাররা দীর্ঘদিন ধরে আপত্তি জানালেও আমলে নিচ্ছেন না নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান আলী।
ঠিকাদারদের মতে, চট্টগ্রামের অন্যান্য উপজেলার মতো হাটহাজারী উপজেলার সড়ক উন্নয়নেও ব্যাপক কাজ চলছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের অধীনে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি কাজের বরাদ্দ থেকে ৫ পার্সেন্ট কমিশন হাতিয়ে নিচ্ছেন উপজেলা প্রকৌশলী। ওই টাকা তিনি সরাসরি না নিয়ে মোরশেদের মাধ্যমে নেন। এর পর মোরশেদকে দিতে হয় আলাদা ৩ পার্সেন্ট কমিশন। আবার কাজ শুরু হলে জয়শ্রী দে ও মোরশেদ সাইট পরিদর্শনের নামে একাধিকবার গাড়ি ভাড়া, আপ্যায়ন বিল নেন ঠিকাদারদের কাছ থেকে। বিশেষ করে কার্পেটিং ও আরসিসি ঢালাইয়ের সময় টাকা হাতিয়ে নিতে বেড়ে যায় মোরশেদের তৎপরতা। আবার কাজ শেষ হলেও শতভাগ শেষ হয়নি বলে ঠিকাদারদের হয়রানি করে মোরশেদ। তখন তাদের কমিশন না দিলে বিল নিয়ে নানা টালবাহানা শুরু হয়। এ সময় আরেক দফা উৎকোচ দিতে হয় জয়শ্রী-মোরশেদকে। এভাবে প্রতিটি কাজের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ টাকা তারাই নিয়ে নেন।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
জানা গেছে, শতভাগ কাজের নামে জয়শ্রী-মোরশেদ ঠিকাদারদের কাছ থেকে কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছেন বরাদ্দের টাকা। যা জেনেও চুপ চট্টগ্রাম জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসান আলী। ঠেকিয়ে রেখেছেন সার্ভেয়ার মোরশেদের বদলিও।
ঠিকাদারদের অভিযোগ, জয়শ্রী দে আগে ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক এমপি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের দাপট দেখিয়ে অনিয়ম করতেন। বর্তমানে এক উপদেষ্টার ক্ষমতা দেখিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি করছেন। হাতিয়ে নিচ্ছেন উন্নয়ন বরাদ্দের টাকা। এতে নিঃস্ব হচ্ছেন ঠিকাদাররা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ঠিকাদার জানিয়েছেন, এলজিইডির কাজে জয়শ্রী-মোরশেদ ছাড়াও আরও কয়েকটি টেবিলে ঘুষ দিতে হয়। তবে এ জুটি দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে উন্নয়ন বরাদ্দের টাকা গিলে খাচ্ছেন। তদের অনিয়মে অতিষ্ঠ হয়ে হাটহাজারীর বাইরের অনেক ঠিকাদার কাজ নিচ্ছেন না। এসব অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে যাওয়ার পর মোরশেদকে দুবার বদলি করা হয়। কিন্তু চট্টগ্রাম জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান আলী নিজের স্বার্থে তার বদলি ঠেকিয়ে রেখেছেন।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
উপজেলা প্রকৌশলী জয়শ্রী দে’র দাবি, শতভাগ কাজ বুঝে নেওয়ার কারণে কিছু ঠিকাদার তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। ঠিকাদারদের দাবি, শতভাগ কাজ বুঝে নেওয়ার পরও ঘুষ দাবি করা হয়। তারা বলেন, সরকারি কাজ করে ঠিকাদাররা তো ঘর থেকে টাকা এনে দেবে না। সার্ভেয়ার মোরশেদের বিষয়ে বলেন, মোরশেদ ভালো কাজ বোঝে। তিনি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। এ ছাড়া তাকে কাজ তদারকির দায়িত্ব দেওয়ার জন্য প্রধান প্রকৌশলীর অনুমোদন আছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মোরশেদ আমাদের সময়কে বলেন, আমি আসলে বুঝাইতে পারব না, কেন যে এসব বলছে মানুষ? যখন শতভাগ কাজ আদায় করতে যাব তখনই বিভিন্ন ধরনের এলিগেশন আনে। একটা পক্ষ তাদের স্বার্থ হাসিল না হওয়ায় এসব করছে। বারবার ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন। আর জয়শ্রী দে’র কমিশন উত্তোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো ভুয়া এবং মিথ্যা কথা। আমি কেন তার টাকা নিতে যাব। ওরকম কিছুতে আমি জড়িত নই।
এ বিষয়ে কথা বলতে নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান আলীর মোবাইলে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম