দাপুটে জয়ে সিরিজে সমতায় পাকিস্তান
রাওয়ালপিন্ডির ধ্বংসস্তূপ থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে লাহোরে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৯ উইকেটে হারিয়েছে পাকিস্তান। এর ফলে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১-১ ব্যবধানে সমতা ফিরিয়ে আনল পাকিস্তান।
ম্যাচের ভাগ্য প্রায় নির্ধারিত হয়ে যায় প্রথম ১০ ওভারের মধ্যেই, যখন দক্ষিণ আফ্রিকা ৬৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বসে। বাঁহাতি পেসার সালমান মির্জা (মাত্র ষষ্ঠ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে), নাসিম শাহ ও ফাহিম আশরাফের বিধ্বংসী স্পেলে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা পুরোপুরি ব্যর্থ হন। পাকিস্তানের বোলাররা ধীরগতির বলের চমৎকার ব্যবহার করেন, আর দক্ষিণ আফ্রিকা করে বসে একের পর এক বাজে শট।
পুরো ইনিংসে কেবল একজন ব্যাটার-ডেওয়াল্ড ব্রেভিস-২০’এর ঘর পেরিয়েছেন এবং কেবল এক জুটি ২০ রানের বেশি করতে পেরেছে। বেঞ্চে থাকা লুয়ান্দ্রে প্রিটোরিয়াসকে দেখে হয়তো দক্ষিণ আফ্রিকার টিম ম্যানেজমেন্ট আগামী ম্যাচের আগে ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে ভাববে।
অন্যদিকে পাকিস্তান পুরো পরিস্থিতি দারুণভাবে বুঝে খেলে। বোলাররা উইকেটের চরিত্র পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১১০ রানে থামান, এরপর ব্যাটাররা ৪১ বল হাতে রেখেই লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে। ওপেনার সাহিবজাদা ফারহান ও সাইম আইয়ুবের ৫৪ রানের উদ্বোধনী জুটি পাকিস্তানকে এগিয়ে নেয়, এরপর আইয়ুব ও বাবর আজম অপরাজিত থেকে ৫৮ রানের জুটি গড়ে জয়ের কাজ শেষ করেন। এই পথে বাবর আজম হয়ে যান টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।
সিরিজ এখন ১-১ সমতায়, আর সিরিজ নির্ণায়ক ম্যাচ শুরু হবে ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে।
শাহিন শাহ আফ্রিদির পরিবর্তে সুযোগ পাওয়া সালমান মির্জা যেন সেই সুযোগের পুরো সদ্ব্যবহার করেন। ম্যাচের প্রথম বলেই তিনি রিজা হেনড্রিকসকে বাইরে যাওয়া ডেলিভারিতে প্রলুব্ধ করেন, এরপর পরের বলটি ভেতরে এনে লেগ স্টাম্প উড়িয়ে দেন-হেনড্রিকস ফেরেন শূন্য রানে। পরের ওভারে টনি ডি জর্জির প্যাডে টানা দুটি ইনসুইঙ্গার দেওয়ার পর মির্জা হঠাৎ এক শর্ট বল দেন, যা ডি জর্জি মিস করেন। দু’ বল পরই তিনি স্লোয়ার-বাউন্সার দেন, ডি জর্জি পুল করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দেন।
এর মাঝে নাসিম শাহ ধীরগতির বলে কুইন্টন ডি কককে মিড-অফে ক্যাচ করান-কামব্যাকের পর তিন ম্যাচেই বাজে আউট হলেন তিনি। নাসিমের বলে ম্যাথিউ ব্রিটজকে একবার শর্ট থার্ডে ক্যাচ মিস হলেও মির্জা তাকে দ্রুত ফিরিয়ে দেন-আরেকটি কাটার, এবার ব্যাট মিস করে সরাসরি বোল্ড। স্কোর তখন ২৩/৪, মাত্র পাঁচ ওভারে।
ব্রেভিস কিছুটা লড়াইয়ের চেষ্টা করেন ১৬ বলে ২৫ রান করে, তিনটি ছক্কা হাঁকিয়ে। কিন্তু ফাহিম আশরাফের স্লোয়ার শর্ট বল মিস করে কভার পয়েন্টে ক্যাচ দেন। ৮ম ওভারে স্কোর হয় ৪৯/৫। এরপর অধিনায়ক ডোনোভান ফেরেইরা ১০ম ওভারে ফাহিমের শর্ট বলে নিজের স্টাম্পে বল টেনে দেন। দুই ওভার পর জর্জ লিন্ডেও প্রায় একইভাবে আউট-পুল করতে গিয়ে এজ লাগে স্টাম্পে। দক্ষিণ আফ্রিকা তখন ৭৩/৭, শেষ পর্যন্ত ২০তম ওভারে গিয়ে অলআউট হয় ১১০ রানে।
দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারদের কাছে রান করা যেখানে কঠিন মনে হচ্ছিল, সেখানে সাইম আইয়ুব প্রমাণ করেন সেটি ভুল ধারণা। নিজের প্রথম হোম টি-টোয়েন্টি হাফসেঞ্চুরি করেন এক দুর্দান্ত ইনিংসে, চারদিকজুড়ে শট খেলে। সামান্য জায়গা পেলেই আঘাত করেছেন, এমনকি দু’টি সৌভাগ্যবান এজও বাউন্ডারি পায়। নবম ওভারটি ছিল পুরোপুরি তার-বার্থম্যানের একটি বল এজ হয়ে চার, পরেরটি লং-অন দিয়ে ছক্কা, এরপর পয়েন্টের ওপর দিয়ে চার, আর শেষে ‘নো-লুক’ শটে ডিপ স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে ছক্কা। এক ওভারেই ২১ রান তুলে ফেলেন তিনি, জয়ের জন্য বাকি থাকে মাত্র ২৯ রান।
রাওয়ালপিন্ডিতে শূন্য রানে আউট হওয়ার পর বাবর আজমের ওপর প্রত্যাশা ছিল তুঙ্গে-বিশেষত নিজের ঘরের মাঠে। ইনিংসের প্রথম বলেই কভার দিয়ে চমৎকার চার মেরে উচ্ছ্বাস ছড়ান লাহোরে। এরপর দুই ওভার আইয়ুবের ঝড়ে বাবর কিছুটা আড়ালে থাকেন। রোহিত শর্মাকে ছাড়িয়ে যেতে তার প্রয়োজন ছিল তিন রান-১২তম ওভারের শুরুতেই ফেরেইরার বলে এক রান নিয়ে তিনি টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক (৪২৩২ রান) হয়ে যান। স্টেডিয়াম জুড়ে করতালি আর উল্লাসে ভরে ওঠে। দুই ওভার পর আইয়ুব ছক্কা মেরে ম্যাচ শেষ করেন।
রোহিত শর্মাকে তিন রানে পেছনে ফেলে বাবর আজম এখন টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক-আর পাকিস্তান সিরিজে ফিরল নতুন উদ্যমে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান ১১২/১ (সাইম আইয়ুব ৭১*, সাহিবজাদা ফারহান ২৮*)
দক্ষিণ আফ্রিকা ১১০ (ডেওয়াল্ড ব্রেভিস ২৫, ফাহিম আশরাফ ৪-২৩, সালমান মির্জা ৩-১৪)
পাকিস্তান ৯ উইকেটে জয়ী হয়েছে।