ইসলামী ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা ও গভর্নরকে আদালতে তলব
চাকরিচ্যুতি অবৈধ ঘোষণা এবং নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার দাবিতে গতকাল মানববন্ধন করেছেন ইসলামী ব্যাংকের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারা। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন করেন তাঁরা। এ সময় ইসলামী ব্যাংকের নতুন নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করারও আহ্বান জানান চাকরিচ্যুতরা।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুতি অবৈধ ঘোষণা এবং নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়ে চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে ঢাকা পঞ্চম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে একটি মামলা করা হয়। সেই মামলায় ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুতি প্রক্রিয়া অবৈধ ঘোষণা এবং নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন আদালত। সেই সঙ্গে বিবাদীদের আগামী ১৪ জানুয়ারি আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দেন। বিবাদীদের মধ্যে আছেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।
জানা গেছে, আজ ১ নভেম্বর ইসলামী ব্যাংকের নির্ধারিত ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার ও ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার (ক্যাশ) পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। নতুন নিয়োগের এই প্রক্রিয়া স্থগিতের দাবিতে গতকাল চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন ইসলামী ব্যাংকের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারা। এ সময় ব্যানার-ফেস্টুন হাতে চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে সেøাগান দেন তাঁরা এবং নতুন নিয়োগের এই উদ্যোগকে ‘অন্যায়’ ও ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা এসএম এমদাদ হোসাইন। তিনি বলেন, আমরা নিয়ম মেনেই চাকরিতে যোগ দিয়েছিলাম। অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা, পদোন্নতি- সবকিছু পেয়েছি যোগ্যতার ভিত্তিতে। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এখন আবার নতুন করে নিয়োগ দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। সম্পূর্ণ বেআইনি পথে বর্তমান বোর্ড যা ইচ্ছা তাই করছে। আমরা আমাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠানে ফিরে যেতে চাই। তিনি আরও বলেন, নতুন নিয়োগ পরীক্ষায় যাঁরা অংশ নেবেন, তাঁরা আমাদের ভাই-বোন। আপনারা দেখেছেন কীভাবে আমাদের পথে বসানো হয়েছে। আপনাদেরও একই পরিণতি হতে পারে।তাদের পাতা ফাঁদে পা দেবেন না।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন মোক্তার হুসেন রসিদ ও মোহাম্মদ হুমায়ুনসহ অন্য কর্মকর্তারা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হস্তক্ষেপ কামনা করে তাঁরা বলেন, আপনি আমাদের চট্টগ্রামের সন্তান। আপনি দেখেছেন, চট্টগ্রামের সাড়ে পাঁচ হাজার পরিবার আজ চাকরি হারিয়ে চরম মানবিক সংকটে আছে। চট্টগ্রামের ঘরে ঘরে আজ হাহাকার। আমাদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে আপনি কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন বলে আমরা আশাবাদী। আপনার কাছে আমাদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাই।দাবি পূরণ না হলে ভবিষ্যতে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে হুশিয়ারি দেন তাঁরা।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
এর আগে ইসলামী ব্যাংকের চাকরিচ্যুতদের পক্ষ থেকে চাকরিচ্যুত ব্যাংকের রাঙামাটি শাখার সাবেক কর্মকর্তা এসএম এমদাদ হোসাইন ও চট্টগ্রামের হালিশহর শাখার জুনিয়র অফিসার মো. আরফান উল্লাহ ঢাকার পঞ্চম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে একটি রেকর্ড ডিক্লারেশন মামলা দায়ের করেন। মামলার আরজি অনুযায়ী, চলতি বছর আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে ব্যাংকটি ‘যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে এবং শ্রমআইন লঙ্ঘন করে’ প্রায় ৫ হাজার স্থায়ী কর্মীকে বরখাস্ত করেছে। বাদীরা দাবি করেছেন, গণহারে এই বরখাস্ত ছিল স্বেচ্ছাচারী এবং ব্যাংকের আইনি এখতিয়ারবহির্ভূত। তাঁরা এই বরখাস্তকে বেআইনি ঘোষণা, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত এবং বরখাস্ত হওয়া কর্মীদের সম্পূর্ণ বেতন-ভাতাসহ চাকরিতে পুনর্বহালের আদেশ দিতে আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। বাদীরা আরও আবেদন করেছেন, আদালত যেন সব তফসিলি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংককে এই মর্মে নির্দেশনা দেন যে, বরখাস্তের আইনি বৈধতা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংক যেন তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখে।
বাদীদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুম বলেন, আদালত ইসলামী ব্যাংকের শীর্ষ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে আদালতে হাজির হয়ে এই ‘গণবরখাস্ত’ এবং পরিকল্পিত নিয়োগ প্রক্রিয়ার কারণ ব্যাখ্যা করার জন্য সমন জারি করেছেন। তলব করা কর্মকর্তাদের কাছে ইতোমধ্যে নোটিশ পাঠানো হয়েছে এবং তাঁরা সেটি পেয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম