দ্বিতীয় সারির দ. আফ্রিকার কাছে পাকিস্তানের লজ্জার হার
দ্বিতীয় সারির দক্ষিণ আফ্রিকান দলের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে একেবারেই হতাশাজনক পারফরম্যান্স উপহার দিল পাকিস্তান। নির্ভুল ক্রিকেট খেলে অতিথিরা ৫৫ রানে জয় তুলে নিয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল।
রিজা হেনড্রিকসের অর্ধশতকের দারুণ ইনিংসের ওপর ভর করে দক্ষিণ আফ্রিকার শীর্ষ তিন ব্যাটার ইনিংসের ভিত গড়ে দেন। মাঝপথে কিছুটা থমকে গেলেও শেষের দিকের তাণ্ডবে তারা স্কোর তোলে ১৯৪ রানে।
জবাবে পাকিস্তানের ইনিংস সব পর্যায়ে ছিল নিষ্প্রভ। দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররা শুরু থেকেই পাকিস্তানকে চেপে ধরেন। করবিন বশ ও স্পিনার জর্জ লিন্ডে নিয়মিত উইকেট তুলে নেন। একদিকে রান রেট বাড়তে থাকে, অন্যদিকে পড়ে উইকেট-এ দুয়ের চাপে পাকিস্তানের পরাজয় আগেই নিশ্চিত হয়ে যায়। ফাঁকা হয়ে যাওয়া রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামে শেষ উইকেট পড়া ছিল শুধু আনুষ্ঠানিকতা।
দক্ষিণ আফ্রিকার শীর্ষ তিন ব্যাটার-রিজা হেনড্রিকস, কুইন্টন ডি কক ও টনি ডি জর্জি-দারুণ শুরু এনে দেন, যদিও তারা কারও প্রথম পছন্দের ব্যাটিং লাইনআপ নয়। ব্যাটিং-বান্ধব উইকেট ও ছোট বাউন্ডারিতে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই হেনড্রিকস নাসিম শাহকে স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকান। এরপর শুরু হয় বাউন্ডারির বন্যা।
ডি কক আউট হলেও ডি জর্জি ইনিংসের গতি থামতে দেননি। পাওয়ারপ্লের শেষ দুই ওভারে প্রায় প্রতি দুই বল পরপরই আসে বাউন্ডারি। সপ্তম ওভারে ডি জর্জির দারুণ কাভার ড্রাইভে ছক্কা হাঁকিয়ে আরও ১৫ রান যোগ হয়। সপ্তম ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর দাঁড়ায় ৮৯-যে রান তুলতে পাকিস্তানের লেগে যায় আরও ছয় ওভার ও হারাতে হয় ছয় উইকেট।
গত বছর টেস্টে অভিষেকের সময় পাকিস্তানের বিপক্ষেই আলোচনায় এসেছিলেন করবিন বশ। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই এবারও ছিলেন পাকিস্তানের দুঃস্বপ্ন। পাকিস্তান সুপার লিগে খেলার চুক্তি ভেঙে আইপিএলে যোগ দেওয়ায় এক বছরের নিষেধাজ্ঞা পান তিনি। ছয় মাস পর পাকিস্তানে ফিরে রাওয়ালপিন্ডিতেই যেন হাসলেন শেষ হাসি।
পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে তিনি বল হাতে আসতেই পাকিস্তান রান তোলার মরিয়া চেষ্টায় ছিল। ঠিক তখনই ফিরে আসা বাবর আজম, যিনি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের পর প্রথম টি-টোয়েন্টি খেলছিলেন। বশের একটি বাউন্সি ডেলিভারি কাটার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ব্যাটের কানায় লেগে বল উঠে যায় কাভারে-বাবর ফিরলেন দ্বিতীয় বলেই শূন্য রানে।
বাবরের ফেরাটা যেমন ব্যর্থ, তেমনই পুরো দিনটিই তার জন্য ছিল দুর্বিষহ-শেষ দিকে তিনি একটি সহজ ক্যাচও ফেলে দেন। কিন্তু তিনিই একমাত্র নয়, পাকিস্তানের বড় তারকারা কেউই আলো ছড়াতে পারেননি।
অধিনায়ক সালমান আগা, যিনি সাম্প্রতিক সময়ে নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে সমালোচনায়, আজও ছিলেন নিষ্প্রভ। পাওয়ারপ্লে শেষে নামা আগা প্রথম ছয় বলে তুলেছিলেন মাত্র দুই রান। এরপর বশের ১৪৪ কিলোমিটার ঘণ্টা গতির ইনসুইংয়ে তার ফাঁপা ব্যাটিংয়ের ইতি ঘটে-এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন দুই রানে।
দুই দলের পারফরম্যান্সে ব্যবধান থাকলেও একটি জায়গায় মিল ছিল-দুই দলের বাঁহাতি স্পিনারদের উজ্জ্বলতা।
দক্ষিণ আফ্রিকার জর্জ লিন্ডে ও পাকিস্তানের মোহাম্মদ নওয়াজ-দুজনই ব্যাটে-বলে ছিলেন কার্যকর। লিন্ডে ইনিংসের শেষ দিকে ১৬তম ওভারে শাহিন শাহ আফ্রিদিকে চারটি চার মেরে ২২ বলে ৩৬ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন।
নওয়াজও সমান কার্যকর ছিলেন বল হাতে। তিনি ভেঙে দেন হেনড্রিকস-ডি জর্জির জুটি, এরপর আউট করেন বিপজ্জনক ডেওয়াল্ড ব্রেভিসকে। শেষ ওভারে অধিনায়ক ডোনোভান ফেরেইরাকে আউট করে শেষ করেন নিজের স্পেল-৩ উইকেট ২৬ রানে।
জবাবে দুজনই আবার আলো ছড়ান। লিন্ডে আগের ওভারগুলোয় মার খেলেও সাইম আয়ুবকে আউট করে পাকিস্তানের আশা নিভিয়ে দেন। এরপর উইকেট নেন উসমান খান ও ফাহিম আশরাফের।
অন্যদিকে নওয়াজ ছিলেন একমাত্র পাকিস্তানি ব্যাটার যিনি কিছুটা লড়াই দেখান। যদিও ম্যাচ তখন প্রায় শেষ, তবু তিনি চারটি চার ও দুটি ছক্কায় ২০ বলে ৩৬ রান করে লিন্ডের ইনিংসের সঙ্গে সমানতা টানেন।
এ ছিল পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার একমাত্র মিল-বাঁহাতি স্পিনারদের পারফরম্যান্স। বাকিটা পুরোপুরিই ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার একতরফা দাপট।