সিটি ভার্সিটিতে তাণ্ডব-আগুন আহত শতাধিক
রাজধানীর অদূরে সাভারের আশুলিয়ায় দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ড্যাফোডিল ও সিটি ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে কথাকাটাকাটি থেকে তা রূপ নেয় সংঘর্ষে। গত রবিবার রাতভর সংঘর্ষ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর সিটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে বিভিন্ন যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বেশ কিছু স্থাপনাও ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেনÑ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে জিম্মি করা হয়েছে।
জানা গেছে, রবিবার রাত ৯টার দিকে ‘ব্যাচেলর প্যারাডাইস’ নামের একটি ভবনের সামনে সিটি ইউনিভার্সিটির
এক শিক্ষার্থীর মোটরসাইকেল থেকে থুথু ফেলা হয়। তা ড্যাফোডিলের এক শিক্ষার্থীর গায়ে লাগে। এই নিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কথাকাটাকাটির জের ধরে রাত ৯টার দিকে সিটি ইউনিভার্সিটির প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থী দেশীয় অস্ত্র ও ইট-পাটকেল নিয়ে ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের আবাসিক ভবনে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। শুরু হয় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ।
এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ড্যাফোডিলের হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী সিটি ইউনিভার্সিটির দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ও পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা মাইকিং করে উভয়পক্ষকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানায়। এক পর্যায়ে ব্যারিকেড উপেক্ষা করে রাত সাড়ে ৩টার দিকে সিটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস হামলা চালানো হয়। ভোর ৫টা পর্যন্ত চলে হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ।
আরও পড়ুন:
হরতাল-অবরোধে শীতের পোশাক ব্যবসায় মন্দা
সিটি ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এ সময় তাঁদের ওপর দ্বিতীয় দফায় হামলায় অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত হন। ক্যাম্পাসে পার্কিং করে রাখা বাস, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারে নির্বিচারে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা।
সিটি ইউনিভার্সিটির ফুটবল দলের কোচ কামরুজ্জামান কাজল জানান, তাণ্ডবের হাত থেকে একটি গাড়িও রক্ষা পায়নি। ক্যাম্পাসেও আগুন দিয়ে লুটপাট করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে থাকা মধুমতি ব্যাংকের বুথেও হামলা চালিয়ে লুটপাট করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে দায়িত্বরত কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান জানান, সিটি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে অগ্নিসংযোগের তথ্য পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা সেখানে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তথ্য এখনও জানা যায়নি।
সকালে সিটি ইউনিভার্সিটি ঘুরে দেখা গেছে সর্বত্রই ধ্বংসযজ্ঞ। ক্যান্টিন থেকে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, প্রশাসনিক ভবনÑ কোথাও কিছু অক্ষত ছিল না। প্রশাসনিক ভবনের সামনে থাকা যানবাহনগুলো পুড়ে দাঁড়িয়ে ছিল কঙ্কালের মতো।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
গতকাল সোমবার বিকালে সংবাদ সম্মেলনে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন, সিটি ইউনিভার্সিটি উপাচার্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার মো. লুৎফর রহমান। তিনি জানান, আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ ২০ কোটি টাকা। উপাচার্য বলেন, ড্যাফোডিল থেকে হামলা করতে এসেছিল। আমরাই আক্রমণের শিকার।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির সামনের সড়কে দিনভর ব্যারিকেড দিয়ে অবরুদ্ধ রাখায় ওই অঞ্চলে কার্যত যান চলাচল ছিল বন্ধ। এতে মারাত্মক ভোগান্তির কবলে পড়েন স্থানীয়রাসহ সড়ক ব্যবহারকারীরা।
এদিকে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সামনেও সড়কেও ব্যারিকেড দিয়ে সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে সেখানকার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের। এদিন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। ক্যাম্পাসজুড়ে ছিল থমথমে পরিবেশ। এর মধ্যে সিটি ইউনিভার্সিটিতে হামলায় অংশ নেওয়া আটক বেশ কয়েকজন ছাত্রের একটি ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান জানান, আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর প্রথমে সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা হামলা করেছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় সাধারণভাবেই ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সেখানে গিয়ে পাল্টা হামলা করেছে। সেখান থেকে আমাদের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে জিম্মি করা হয়েছে। জিম্মি শিক্ষার্থীদের আগে মুক্ত করে দিতে হবে। এর পরই সমঝোতার জন্য আলোচনা হতে পারে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
ড. মিজানুর রহমান বলেন, এটি স্পষ্ট যে ঘটনাটি হঠাৎ কোনো উত্তেজনার ফল নয়, বরং পূর্বপরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের ওপর এভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে তাদের কাছ থেকে জোর করে বক্তব্য আদায় করার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, একটি স্বার্থান্বেষী ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী এই পুরো ঘটনার পেছনে কাজ করেছে।