বিদেশিদের হাতে মালিকানা নয়, কেবল পরিচালনা
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে বন্দর বা টার্মিনালের মালিকানা দেওয়া হচ্ছে না। বিদেশিদের হাতে কেবল পরিচালনার দায়িত্বই যাবে, মালিকানা নয়। এ বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের সব টার্মিনাল, জেটি, ইয়ার্ড ও অন্য স্থাপনার একক মালিকানা বন্দর কর্তৃপক্ষেরই থাকবে। লাইসেন্সধারী হিসেবে কেবল অপারেটর নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে, যা সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও জনবান্ধব।
রবিবার রাতে বন্দর সচিবের সই করা এক বিবৃতিতে আরও বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দরের কোনো টার্মিনালের মালিকানা আগে কখনো বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে দেওয়া হয়নি এবং ভবিষ্যতেও এমন কোনো পরিকল্পনা নেই। বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে সবার সহযোগিতা কামনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি সংবাদ পরিবেশনে দায়িত্বশীলতা ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশি কোম্পানির হাতে গেলে দেশীয় কর্মীদের চাকরি ঝুঁকিতে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার নেতারা। তাদের অভিযোগ, সরকারের আগাম প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বন্দর শুল্ক ৪১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তারা হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার যদি এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে, তবে বাম দলগুলো তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবেÑপ্রয়োজনে আবার গণ-অভ্যুত্থান ঘটবে।
গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর
পল্টনসংলগ্ন জিপিও মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা। চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার প্রতিবাদে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় অভিমুখে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শুরু করে সংগঠনগুলো। পরবর্তী সময়ে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের দিকে রওনা দিলে জিপিও মোড়ে পুলিশ বাধা দেয়। তখন সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন নেতারা।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বক্তারা অভিযোগ করেন, বর্তমানে সরকার চট্টগ্রামের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল এবং মোংলা বন্দর কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যেই ডিপি ওয়ার্ল্ড নামের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকার চুক্তি করতে চায়। বক্তাদের দাবি, এই প্রতিষ্ঠান অতীতে যেসব দেশের বন্দর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পেয়েছে, সেখানে নানা অনিয়ম ও বিতর্কের অভিযোগ রয়েছে।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, বিদেশি সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থ রক্ষার্থে সরকার একের পর এক গণবিরোধী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। এরই অংশ হিসেবে সরকার ঘোষণা করেছে, চট্টগ্রামের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল এবং মোংলা বন্দর কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়া হবে এবং ডিসেম্বরের মধ্যেই সেই চুক্তি সম্পাদন তারা করতে চায়। শেখ হাসিনার সরকার ভারতের স্বার্থ রক্ষা করত। সে কারণেই তাকে উচ্ছেদের জন্য গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু সরকার বাংলাদেশকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কাছে ইজারা দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। তার অংশ হিসেবে বন্দর ইজারা দেওয়ার চক্রান্ত করা হচ্ছে।
সরকারকে হুশিয়ার করে বজলুর রশীদ বলেন, এখনও সময় আছে। দেশবিরোধী চুক্তি থেকে ফিরে না এলে এই সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। প্রয়োজনে সরকারের বিরুদ্ধে আরেকটি গণ-অভ্যুত্থান হবে। আগামী ৮ নভেম্বর বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চাসহ অপরাপর বামপন্থি দল ও সংগঠনগুলো চট্টগ্রামে সমাবেশ করবে বলে জানান তিনি। এর পরও সরকার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যমুনা ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেওয়া হবে। প্রয়োজনে হরতাল, অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
সমাবেশে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, বাম গণতান্ত্রিক দলগুলোর একজন নেতাকর্মী জীবিত থাকতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিক্রি হতে দেওয়া হবে না।
গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু বলেন, ডিপি ওয়ার্ল্ড বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বন্দর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পেয়েছিল, সেখানে তাদের অনেক বদনাম হয়েছে। যে দেশের বন্দরে মার্কিন সেনাবাহিনী যায়, সেই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বলতে কিছু থাকতে পারে না। এই কারণে বাম দলগুলো ডিপি ওয়ার্ল্ডের বিরোধিতা করছে। ডিসেম্বর মাসে যে চুক্তি করার কথা, যদি সেই চুক্তির সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে না আসে, তা হলে বাম দলগুলো এবং সাম্রাজ্যবিরোধী সব শক্তি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে রক্ষা করবে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ফ্যাসিবাদীবিরোধী বাম মোর্চার সমন্বয়ক ও গণমুক্তি ইউনিয়নের সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন আহম্মদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলী, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক হারুনার রশিদ ভূঁইয়া, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ। উপস্থিত ছিলেন সিপিবি নেতা আব্দুল্লাহ ক্বাফী রতন ও রুহিন হোসেন প্রিন্স।
এর আগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশে বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের সমন্বয়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, বঙ্গোপসাগর আজ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের যুদ্ধক্ষেত্রের মহড়া দেওয়ার জায়গা হিসেবে তৈরি হচ্ছে। আর বাংলাদেশকে সেই যুদ্ধক্ষেত্রের পটভূমি তৈরি করছে বর্তমান ইউনূস সরকার।
বাসদের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের দেওয়ার মধ্য দিয়ে দেশের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব নানা ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়বে। এই সরকারের সেই এখতিয়ার নেই।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন