উল্টোপথে হাঁটছে শেয়ারবাজার

আবু আলী
২৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:০৪
শেয়ার :
উল্টোপথে হাঁটছে শেয়ারবাজার

দেশের শেয়ারবাজার ২০১০ সালে ধসের পর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। দীর্ঘদিন ধরে সংকটে থাকা শেয়ারবাজার নিয়ে প্রত্যাশা তৈরি হয় অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর। কিন্তু সংকট আরও বেড়েছে। বাজারে ঘন ঘন দর পতন হচ্ছে। লেনদেনের পরিমাণ কমে গেছে। সংস্কার উদ্যোগের মাধ্যমে অর্থনীতির কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি দৃশ্যমান হলেও শেয়ারবাজার যেন উল্টোপথে হাঁটছে। বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরি হচ্ছে না।

জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগে চরম সংকটে ছিল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। আমদানি ব্যয় মেটাতে না পারায় ভোগ্যপণ্য ও রপ্তানির কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হচ্ছিল। দেশের চলতি হিসাবের ব্যাপক ঘাটতি ছিল। এসব ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। রেমিট্যান্স ব্যাপক বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমছে। ব্যাংকগুলোতে সুশাসন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে উন্নতি হয়নি শেয়ারবাজারের।

চলতি মাসে বিশ্বব্যাংক এক প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দিয়েছে যে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০২৬ অর্থবছরে ৪.৮ শতাংশে উন্নীত হবে, যা তার আগের বছরের ৪ শতাংশের চেয়ে বেশি। এর পর ২০২৬-২৭ অর্থবছরে এটি আরও বেড়ে ৬.৩ শতাংশে পৌঁছাবে। এ থেকে স্পষ্ট যে গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশের অর্থনীতি গতি ফিরে পাচ্ছে। তবে পুঁজিবাজার এগোচ্ছে না। আগে যে অবস্থানে ছিল, সেখানেই ঘুরপাক খাচ্ছে।

জানা গেছে, শেয়ারবাজারে ভালো শেয়ারের বড় অভাব রয়েছে। দীর্ঘদিনের অভিযোগ, বিনিয়োগের মতো শেয়ার এখানে নেই। জানা গেছে, ২০০৭ সালের গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ২৬টি কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে মূলধন উত্তোলন করে। বিগত ১৫ বছরে গড়ে অন্তত ১০টি কোম্পানি ব্যবসা মূলধন উত্তোলন করে তালিকাভুক্ত হয়েছে। বিগত ১৪ মাসের বেশি সময়ে নতুন কোনো কোম্পানির আইপিওর মাধ্যমে মূলধন উত্তোলনের অনুমোদন দিতে পারেনি নতুন কমিশন। ফলে দেড় বছর ধরে আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলন একদম বন্ধ, যার কারণে নতুন শেয়ারের জোগান শূন্য।

জানা গেছে, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধমে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। পাঁচ বছর মেয়াদে তিন দফায় পূর্ণ মেয়াদ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মাধমে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করলেও ওই বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের বেশি সময় মেয়াদে প্রায় ২০০ কোম্পানির মূলধন উত্তোলন করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এসব মূলধন উত্তোলনে আইন ভেঙে আইপিও, বিশেষ বিশেষ গ্রুপকে সুবিধা দেওয়া ও কারসাজি হলেও ব্যবস্থা না নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

জানা গেছে, চলতি বছরের মে মাসে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি কয়েকটি সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোতে (এমএনসি) থাকা সরকারি শেয়ার অফলোড ও দেশীয় বড় বড় কোম্পানিকে তালিকাভুক্তি করা এবং বড় বড় কোম্পানি যাতে ব্যাংক ঋণ নেওয়ার বদলে পুঁজিবাজারে বন্ড বা শেয়ার ছেড়ে পুঁজি সংগ্রহে আগ্রহী হয়, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। তবে এসব নির্দেশনার পরও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।

ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, আমাদের বাজারে ভালো শেয়ারের অভাব রয়েছে। পুরনো যেসব শেয়ার ভালো ছিল সেগুলোর পারফরম্যান্স খারাপ হয়ে গেছে। এ ছাড়া সুদের হার বৃদ্ধিতে বড় প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। আর সহজলভ্য মার্জিন ঋণে অনেক বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়েছে। তিনি বাজারে ভালো শেয়ার সরবরাহের পরামর্শ দিয়েছেন।