বিনিয়োগ দ্বিপাক্ষিক ইস্যুতে নতুন অধ্যায়ের আশা

সৌদি আরব যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা

আরিফুজ্জামান মামুন
২৪ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
বিনিয়োগ দ্বিপাক্ষিক ইস্যুতে নতুন অধ্যায়ের আশা

সৌদি আরবের যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমানের আমন্ত্রণে আগামী ২৭ থেকে ২৯ অক্টোবর রিয়াদে অনুষ্ঠিতব্য ফিউচার ইনভেস্টমেন্ট ইনিশিয়েটিভের (এফআইআই) নবম সংস্করণে অংশ নিতে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনি ২৬ অক্টোবর রাতে ঢাকা থেকে রওনা হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তিন দিনব্যাপী এই বৈশ্বিক সম্মেলনের কেন্দ্রবিন্দু হবে রিয়াদের কিং আব্দুল আজিজ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টার, যেখানে ড. ইউনূস মূল অধিবেশনে বক্তৃতা করবেন।

এ সফরকে বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুযোগ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। কারণ ২০১৭ সালের পর এবারই প্রথমবারের মতো কোনো বাংলাদেশি সরকারপ্রধানকে এফআইআই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বিশ্ব বিনিয়োগ, উদ্ভাবন এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনায় বাংলাদেশের নেতৃত্ব তুলে ধরার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ অঙ্গনে দেশের নতুন অবস্থান তৈরি করতে পারে এই সফর।

এই সফরে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস সৌদি যুবরাজ বিন সালমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য পুনরায় ভিসা চালু করা নিয়েও আলোচনা হতে পারে তাদের বৈঠকে। সরকারি সূত্রগুলো বলছে, এই সফর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ সহযোগিতা, টেকসই উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অংশীদারত্বের দিগন্ত উন্মোচন করবে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই সম্মেলনে অংশগ্রহণকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ড. ইউনূসের উপস্থিতি বাংলাদেশের উদ্ভাবন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মডেল এবং টেকসই উন্নয়নের অভিজ্ঞতা বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরবে বলে আশা করা হচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তারা মনে করেন, এটি বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আহ্বানের ক্ষেত্র তৈরি করবে। বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, কৃষি প্রযুক্তি, ডিজিটাল উদ্ভাবন ও এসএমই খাতে বিনিয়োগের নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক অর্থনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ যে রূপান্তরের পথে, সেই বার্তা দিতে সক্ষম হবে এই সফর। প্রফেসর ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা ধারণা ও টেকসই উন্নয়ন চিন্তাধারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এরই মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। ফলে তার অংশগ্রহণ বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে শুধু রাজনীতিক নয়, উন্নয়ন কূটনীতির ক্ষেত্রেও নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত করবে।

তাদের মতে, প্রধান উপদেষ্টার সৌদি সফর শুধু ফিউচার ইনভেস্টমেন্ট ইনিশিয়েটিভে অংশগ্রহণেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এটি দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার পথও প্রশস্ত করতে পারে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে, এই সফরের মাধ্যমে সৌদি আরবের সঙ্গে বিনিয়োগ ও শ্রম সহযোগিতার নতুন অধ্যায় শুরু হবে।

গত জুলাইয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ড. আবদুল্লাহ জাফর বিন আবিয়াহ সৌদি যুবরাজের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার হাতে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণপত্র তুলে দেন। সে সময় দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বাড়ানো নিয়েও আলোচনা হয়। এফআইআইয়ের নবম সংস্করণে অংশ নেবেন বিশ্বের প্রভাবশালী অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও নীতিনির্ধারকরা। তাদের মধ্যে রয়েছেন সৌদি আরবের জ্বালানিমন্ত্রী প্রিন্স আব্দুল আজিজ বিন সালমান, পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের গভর্নর ও সৌদি আরামকো চেয়ারম্যান ইয়াসির আল-রুমাইয়ান, চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হান ঝেং, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. এনগোজি ওকোনজো-ইওয়েলা, টোকিওর গভর্নর ইউরিকো কোইকে, যুক্তরাজ্যের রাজকোষের চ্যান্সেলর রাচেল রিভস, রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে এবং সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা।

এ ছাড়া গুগল, অ্যালফাবেট, সিটি গ্রুপ, ব্রিজওয়াটার অ্যাসোসিয়েটস, স্ন্যাপ ইন্কসহ বিশ্বের শীর্ষ করপোরেট নেতাদের মধ্যে থাকছেন রুথ পোরাট, ড. এরিক শ্মিডট, জেন ফ্রেজার, রে ডালিও এবং ইভান স্পিগেল। এফআইআইকে বলা হয় বিশ্ব অর্থনীতি ও প্রযুক্তি খাতের ‘ডাভোস অব দ্য ডেজার্ট’, যেখানে আগামী দশকের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা নির্ধারণ হয়।

এ বছর সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘দ্য কি টু প্রসপারিটি: আনলকিং নিউ ফ্রন্টিয়ার্স অব গ্রোথ’, যেখানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, উদ্ভাবনী প্রযুক্তি, কর্মসংস্থান ও বৈশ্বিক সহযোগিতা নিয়ে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা হবে। এখানে ড. ইউনূস একজন ‘কি-নোট স্পিকার’ হিসেবে বক্তব্য রাখবেন। ফিউচার ইনভেস্টমেন্ট ইনস্টিটিউটের ওয়েবসাইটে তাকে ‘বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে এবং তিনি নির্বাচিত বক্তাদের অন্যতম। ওয়েবসাইটে তাঁকে নোবেলজয়ী সমাজ উদ্যোক্তা ও টেকসই বিনিয়োগ ধারণার প্রবর্তক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, প্রধান উপদেষ্টার সফরসূচি মূলত ২৭ থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত। বাদশা সালমানের সঙ্গে কল-অন বৈঠক ছাড়াও শ্রম ও বিনিয়োগ ইস্যুতে আলোচনার পরিকল্পনা রয়েছে। রিয়াদভিত্তিক ফিউচার ইনভেস্টমেন্ট ইনিশিয়েটিভ ইনস্টিটিউট একটি অলাভজনক সংস্থা, সৌদি আরবের সার্বভৌম সম্পদ তহবিল (পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড) এটি প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রতিষ্ঠানটি বৈশ্বিক পর্যায়ে গবেষণা, নেতৃত্ব উন্নয়ন, উদ্ভাবন ও টেকসই বিনিয়োগ বিষয়ে কাজ করে। প্রতিবছর এফআইআই সম্মেলনে বিশ্বজুড়ে রাষ্ট্রনেতা, শিল্পোদ্যোক্তা, নীতিনির্ধারক ও অর্থনীতিবিদরা অংশ নিয়ে বৈশ্বিক বিনিয়োগের নতুন দিকনির্দেশনা নিয়ে আলোচনা করেন।