দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে সিরিজ সমতায় শেষ করল দ. আফ্রিকা

স্পোর্টস ডেস্ক
২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:৪৯
শেয়ার :
দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে সিরিজ সমতায় শেষ করল দ. আফ্রিকা

পাকিস্তানের আশা ভাঙতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিশেষ কষ্ট করতে হয়নি। মাত্র পাঁচ বলেই ফিরিয়ে দেন বাবর আজমকে, ৯ রানের ব্যবধানে হারায় আরও চার উইকেট এবং এক সেশনের মধ্যেই ৬৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করে সহজেই জয় তুলে নেয় প্রোটিয়ারা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা ৪০৪ (মুথুসামি অপরাজিত ৮৯, স্টাবস ৭৬, রাবাদা ৭১, আসিফ ৬–৭৯) এবং ৭৩/২ (মার্করাম ৪২, রিকেলটন অপরাজিত ২৫)। পাকিস্তান ৩৩৩ (মাসুদ ৮৭, শাকিল ৬৬, মহারাজ ৭–১০২) এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩৮ (বাবর ৫০, হারমার ৬–৫০)।

এই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার অফস্পিনার সাইমন হারমার নেন ৬ উইকেট-যার মাধ্যমে তিনি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১০০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ইতিহাসে চতুর্থ দক্ষিণ আফ্রিকান বোলার হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জন করেন তিনি।

৮ উইকেটের জয়ে সিরিজে সমতা ফেরায় দক্ষিণ আফ্রিকা। যা বর্তমান বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা রক্ষায় তাদের প্রথম জয়। অন্যদিকে পাকিস্তানের জন্য এটি ঘরের মাঠে টস জিতে খেলা অবস্থায় প্রথম পরাজয়, বিশেষ করে স্পিনবান্ধব উইকেটে জেতার ধারার পর এমন হার তাদের জন্য বড় ধাক্কা।

দিনের দ্বিতীয় বলেই বাবর আজম অনসাইডে হালকা টোকায় ২০২২ সালের পর নিজের প্রথম ঘরোয়া টেস্ট ফিফটি পূর্ণ করেন। কিন্তু সেটিই হয়ে ওঠে তার ইনিংসের শেষ বিন্দু-তিন বল পর হারমারের সামান্য নিচু হয়ে আসা অফস্পিনে প্যাডে আঘাত পান বাবর, যা থেকেই শুরু হয় পাকিস্তানের ধস।

হারমারের দুর্দান্ত নিয়ন্ত্রণে পাকিস্তানের ব্যাটাররা একে একে আত্মসমর্পণ করেন। মোহাম্মদ রিজওয়ান অতিরিক্ত এগিয়ে এসে ব্যাটে-প্যাডে লেগে বল তুলে দেন শর্ট লেগে, আর সেই ক্যাচেই হারমারের উইকেটসংখ্যা পৌঁছে যায় ৯৯৯-এ।

এরপর হাজারতম উইকেটটি আসে নোমান আলিকে আউট করে-অসাধারণ ফ্লাইটে দেওয়া বলটি পড়ে হঠাৎ লাফিয়ে উঠে বাইরের প্রান্ত ছুঁয়ে উইকেটকিপার কাইল ভেরেইনের হাতে জমা হয়। আকাশের দিকে মুখ তুলে গর্জে ওঠেন হারমার-যেন রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামকে জাগিয়ে তোলার আহ্বান।

পাকিস্তানের ব্যাটিং বিপর্যয় এরপর আরও প্রকট হয়। শাহিন শাহ আফ্রিদি ও সালমান আগা রান নেওয়ার চেষ্টায় বিভ্রান্ত হয়ে রায়ান রিকেলটনের সরাসরি থ্রোতে রান আউট হন শাহিন—১০৫/৫ থেকে মুহূর্তেই দল নেমে আসে ১০৫/৮-এ। এ সিরিজে তাদের মিডল ও লোয়ার অর্ডারের এমন ভাঙন একাধিকবার দেখা গেছে।

শেষ দিকে আগা কিছুটা প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও কেশভ মহারাজের ইনসুইং আর্ম বল তার ইনিংসের ইতি টানে। এরপর সাজিদ খান রান নিতে গিয়ে স্টাম্পড হন ভেরেইনের হাতে।

৬৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকা শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক। এইডেন মার্করাম চার মেরে শুরু করেন, রিকেলটনও দ্রুত ছন্দে ফেরেন। পাকিস্তানের তিন স্পিনারকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করেও থামানো যায়নি রানরেট। লাঞ্চের আগেই জয় নিশ্চিত হয়ে যায়।

নোমান আলি শেষ মুহূর্তে দুটি উইকেট নিয়ে সামান্য সান্ত্বনা পান-মার্করাম ও ট্রিস্টান স্টাবসকে ফিরিয়ে দেন তিনি। কিন্তু পরের ওভারেই রিকেলটন লং-অফের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেন দক্ষিণ আফ্রিকার জয়।

পূর্বের টেস্ট শেষে পাকিস্তান অধিনায়ক শান মাসুদ বলেছিলেন, টস হেরে গেলেও প্রতিযোগিতামূলক থাকতে তারা কেমন খেলার পরিকল্পনা করবে। কিন্তু এই টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকা যেন সেই পরিকল্পনাই নিখুঁতভাবে বাস্তবায়ন করে দেখাল—চার দিনে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রেখে জয় ছিনিয়ে নিল তারা।