সেনা কর্মকর্তারা ট্রাইব্যুনালে হাজির না হলে বিজ্ঞপ্তি : প্রসিকিউটর তামিম
আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুমের অভিযোগের দুই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পরোয়ানাভুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের আজ বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা না হলে তাঁদের বিষয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। গতকাল মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
প্রসিকিউটর বলেন, গুমের অভিযোগে যাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, তাঁরা যদি হাজির হতে চান, তা পারেন বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁদের গ্রেপ্তার করে হাজির করতে পারে। ট্রাইব্যুনাল চাইলে তাঁদের জামিন দিতে পারেন, তাঁরা যদি জামিন চান এবং জামিনের গ্রাউন্ড থাকে অথবা ট্রাইব্যুনাল তাঁদের কারাগারে প্রেরণ করতে পারেন। যদি তাঁদের জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন, তাহলে কারা কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে তাঁদের কোন কারাগারে রাখবে।
গাজী মোহাম্মদ এমএইচ তামিম বলেন, যদি ওনারা (সেনা কর্মকর্তারা) হাজির না হন অথবা তাঁদের হাজির করা না হয়, তা হলে তাঁদের বিষয়ে দুটি জাতীয় পত্রিকায় (বাংলা ও ইংরেজি) বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে এবং তারিখ নির্ধারণ করা হবে, তাঁদের হাজির করার জন্য। তিনি জানান, গ্রেপ্তারের বিষয়ে প্রসিকিউশনের কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে ট্রাইব্যুনালের কাছে কোনো তথ্য থাকলে আগামীকাল (বুধবার) জানানো হতে পারে যে, কীভাবে/কোথায় আছে। ফেসবুকে এবং বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় খবর আছে, যেটা আপনারা জানেনÑ কিন্তু তাঁদের অথরিটি এ বিষয়ে এখনও কিছু বলেনি।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে আনা হবে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর বলেন, আপনারা জানেন সাবেক বিচারপতি, সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক সেনা কর্মকর্তাসহ বহু আসামিকে ট্রাইব্যুনালে আনা হচ্ছে। ট্রাইব্যুনালের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর আসামি কে, তা দেখা হয় না।
এর আগে গত ৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিরোধী লোকদের গুম করে র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) ও জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেন্টারে (জেআইসি) সেলে বন্দি রেখে নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ দুই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান করে ৩০ জনকে আসামি করা হয়। চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এসব অভিযোগ আমলে নেন। একই সঙ্গে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভিন্ন মতাদর্শের লোক কিংবা রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক, লেখক-সাংবাদিকদের তুলে নিয়ে গোপন বন্দিশালায় রেখে নির্যাতনের বীভৎস বর্ণনা তুলে ধরেন। শুনানি শেষে গুম সংক্রান্ত দুটি অভিযোগ আমলে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। পরে অভিযোগ আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।
গুম সংক্রান্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই অভিযোগের একটিতে শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য আসামিরা হলেনÑ শেখ হাসিনার সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ, র্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেন, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম, তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, র্যাব কর্মকর্তা কেএম আজাদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কামরুল হাসান, মাহবুব আলম, আবদুল্লাহ আল মোমেন, সারোয়ার বিন কাশেম, খায়রুল ইসলাম, মশিউর রহমান জুয়েল ও সাইফুল ইসলাম সুমন।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম
র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে অপহরণ-গুম, নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধে ১৭ জনের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেন্টারে (জেআইসি) গুমের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেক মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়। তারা হলেনÑ শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) লে. জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আকবর হোসেন, সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অব.) সাইফুল আবেদিন, লে. জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, সাবেক ডিজি লে. জেনারেল তাবরেজ শামস চৌধুরী, সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক, মেজর জেনারেল তৌহিদুল ইসলাম, মেজর জেনারেল সরওয়ার হোসেন, মেজর জেনারেল কবির আহাম্মদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিকী ও লে. কর্নেল (অব.) মখসুরুল হক। এর মধ্যে চারজন সেনা কর্মকর্তা এখনও কর্মরত রয়েছেন। তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংশোধিত আইন অনুযায়ী তাঁরা কোনো পদে থাকতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।