শেয়ারবাজারে লেনদেনে খরা হতাশ বিনিয়োগকারীরা

আবু আলী
২১ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
শেয়ারবাজারে লেনদেনে খরা হতাশ বিনিয়োগকারীরা

দেশের শেয়ারবাজার ফের লেনদেনের খরায় পড়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। দীর্ঘ পতন শেষে গত জুন থেকে শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাস থেকে ফের পতনের ধারায় ফিরে যায়, যা গত কয়েকদিনে নতুন মাত্রা পেয়েছে। এ জন্য রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে সৃষ্ট অস্থিরতার প্রভাবকে বড় করে দেখছেন অনেকে। এর সঙ্গে শেয়ারবাজার সংস্কারসংক্রান্ত ইস্যুও কিছু বড় বিনিয়োগকারীর মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করেছে। বিশেষত মার্জিন ঋণ ইস্যু নিয়ে অস্বস্তি বেশি। এর পাশাপাশি জুনে আর্থিক হিসাব শেষ হয় এমন কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ ঘোষণার সময় ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে নেতিবাচক ধারার আশঙ্কায় কেউ কেউ শেয়ার বিক্রি করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার নীতি নিয়েছেন। ফলে চাহিদা কমে বিক্রির চাপ বেড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারের লেনদেন বর্তমানে যে পর্যায়ে নেমেছে, তাতে বাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী কারও জন্যই তা আশান্বিত হওয়ার মতো না। এই লেনদেনে অনেক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর পরিচালন খরচ তোলা দুঃসাধ্য হয়ে গেছে। অনেক ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক মাস শেষে বাজার থেকে পরিচালন খরচ তুলতে হিমশিম খাচ্ছে। একইভাবে লেনদেন থেকে স্টক এক্সচেঞ্জগুলো যে কমিশন আয় করে তা দিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালন খরচ উঠছে না।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, কয়েকদিনের ধারাবাহিকতায় গতকালও বাজারে বিক্রির আদেশের তুলনায় ক্রয় আদেশ কম ছিল। এতে ডিএসইর সার্বিক লেনদেন আরও কমে প্রায় ৪ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন হয়েছে।

বাজার বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, ডিএসইতে মোট ৩৯৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৩০০টির। বিপরীতে কমেছে ৫৩টির। আর ৪৫টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। দর বৃদ্ধি পাওয়া সিকিউরিটিজগুলোর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরির ১৬৭টি, ‘বি’ ক্যাটাগরির ৭৬টি এবং ‘জেড’ ক্যাটাগরির ৫৭টি শেয়ার ও ইউনিট রয়েছে। অধিকাংশ সিকিউরিটিজের দর বাড়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৬৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেড়ে ৫ হাজার ৪৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের দিন সূচকটির অবস্থান ছিল ৫ হাজার ৪৪ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ১৯ পয়েন্ট

বা ১ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৮১ পয়েন্টে এবং ডিএসইর বাছাই করা ৩০ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ২৮ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৪২ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৯৬৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

ডিএসইতে আগের দিনের চেয়ে গতকাল ৪৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা লেনদেন কমেছে। এদিন মোট ৩৯৪ কোটি ৬৫ টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে। এই লেনদেন চলতি বছর ২৪ জুনের পর সর্বনিম্ন। ওইদিন এক্সচেঞ্জটিতে ৩৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছিল।

দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) গতকাল সবগুলো মূল্যসূচক বেড়েছে। তবে এ বাজারে অধিকাংশ সিকিউরিটিজের দরপতন হয়েছে। সিএসইর সার্বিক সূচক সিএসপিআই ৯ পয়েন্ট বেড়ে ১৪ হাজার ২৮৩ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। আর সিএসসিএক্স সূচকটি ১২ পয়েন্ট বেড়ে ৮ হাজার ৭৯৬ পয়েন্টে উঠেছে। সিএসইতে মোট ২১১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৮৩টির দর বেড়েছে এবং কমেছে ৯৪টির। আর ৩৪টির দর দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল।