মার্জিন ঋণ আতঙ্ক পুঁজিবাজারে
দেশের শেয়ারবাজারে একটা সমস্যা কাটতে না কাটতেই হাজির হচ্ছে আরেক সমস্যা, যার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হয় দরপতন। দীর্ঘ পতন শেষে গত জুন থেকে শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল। কিন্তু সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ শেষ না হতেই আবার পতনের ধারায় ফিরে যায়। গত কয়েক দিনে পতনের এই ধারা নতুন মাত্রা পেয়েছে, যা নতুন করে উদ্বেগ বাড়িয়েছে বিনিয়োগকারীদের।
জুনে শেয়ারদরের সঙ্গে লেনদেন বাড়তে দেখে অনেকে আকৃষ্ট হয়েছিলেন নতুন বিনিয়োগে। কিন্তু গত প্রায় সোয়া মাসের দরপতনে তারা ক্ষতির মুখে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে বাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ব্যাপক অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। চলতি দরপতনের জন্য রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে সৃষ্ট অস্থিরতার প্রভাবকে বড় করে দেখছেন অনেকে। এর সঙ্গে শেয়ারবাজার সংস্কারসংক্রান্ত কিছু ইস্যু নিয়েও অস্বস্তি আছে। বিশেষত মার্জিন ঋণ ইস্যু নিয়ে অস্বস্তি বেশি। পাশাপাশি জুনে আর্থিক হিসাব শেষ হয়Ñ এমন কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ ঘোষণার সময় ঘনিয়ে আসায় নেতিবাচক ধারার আশঙ্কায় কেউ কেউ শেয়ার বিক্রি করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের নীতি নিয়েছেন। ফলে চাহিদা কমে উল্টো বিক্রির চাপ বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজার সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না। একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানান, মার্জিন ঋণ বিধিমালা সংশোধনে বিলম্ব করে দরপতনকে দীর্ঘায়িত করছে কমিশন। এটা দ্রুত শেষ করা দরকার। ধারণা করা হচ্ছে, সংশোধিত বিধিমালার কারণে বাজারে তারল্য প্রবাহ কমবে। অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার মার্জিন ঋণের অযোগ্য হবে। ফলে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক অবস্থান নেওয়ার যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ আছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইতে গতকাল রবিবার মোট ৩৯৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৪৪টির। বিপরীতে কমেছে ৩১৪টির। আর ৩৮টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। দর কমা সিকিউরিটিজগুলোর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরির ১৭৫টি, ‘বি’ ক্যাটাগরির ৭১টি এবং ‘জেড’ ক্যাটাগরির ৬৮টি শেয়ার ও ইউনিট রয়েছে।
অধিকাংশ সিকিউরিটিজের দর কমায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৭৫ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৪৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। সূচকটির এই অবস্থান গত ৯ জুলাইয়ের পর সর্বনিম্ন। ওই দিন ডিএসইএক্স সূচকটি ৫ হাজার ৩৫ পয়েন্টে অবস্থান করছিল। এরপর সূচকটির আজকের পয়েন্টের নিচে আসেনি। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ২৪ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২১ শতাংশ
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
কমে ১ হাজার ৬২ পয়েন্টে এবং ডিএসইর বাছাই করা ৩০ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৩০ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫১ শতাংশ কমে ১ হাজার ৯৩৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন গুজব ঘুরপাক খাচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো মার্জিন ঋণ বিধিমালায় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ না দেখার গুজব। কিছু অসাধু ব্যক্তি ও ব্রোকারেজ হাউস নিজেদের স্বার্থে মার্জিন ঋণ নিয়ে এ ধরনের আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। এতে আতঙ্কিত বিনিয়োগকারী প্যানিক সেল দিচ্ছে, যা বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ ছাড়া পাঁচ ব্যাংক একীভূতকরণ, কয়েকটি ব্যাংক বর্হিভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) বন্ধের সিদ্ধান্ত এবং সাম্প্রতিক সময়ের জুন ক্লোজিং কোম্পানিগুলোর খারাপ পারফরম্যান্সের কারণও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
অন্যদিকে গতকাল পেনিক সেলসহ বিভিন্ন কারণে বাজারে বিক্রয় আদেশ বেশি থাকলেও ক্রয় আদেশ ছিল সেই তুলনায় অনেক কম। ডিএসইতে মোট ৪৪২ কোটি ৪০ টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে। এই লেনদেন চলতি বছরের ২৫ জুনের পর সর্বনিম্ন। ওই দিন এক্সচেঞ্জটিতে ৪১৩ কোটি ২১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছিল।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) গতকাল সবগুলো মূল্যসূচকে বড় পতন হয়েছে। এ বাজারে অধিকাংশ সিকিউরিটিজের দরপতন হলেও সার্বিক লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। সিএসইর সার্বিক সূচক সিএসপিআই ১৯৫ পয়েন্ট কমে ১৪ হাজার ২৭৪ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। আর সিএসসিএক্স সূচকটি ১১৪ পয়েন্ট কমে ৮ হাজার ৭৮৪ পয়েন্টে নেমেছে। সিএসইতে মোট ১৭৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৩১টির দর বেড়েছে এবং কমেছে ১৩৪টির। অপরিবর্তিত রয়েছে ১৩টির দর।
পুঁজিবাজার চাঙা করতে আইসিবিকে ১ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার পরিকল্পনা
পুঁজিবাজার চাঙা করতে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) ১ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। আইসিবির তারল্য সংকট কাটাতে এবং শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা আনতে সংশোধিত জাতীয় বাজেটের মাধ্যমে এই অর্থসহায়তা দেওয়া হতে পারে। অর্থ উপদেষ্টাসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা ওয়াশিংটন সফর শেষে দেশে ফিরলেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে পারে। জানা গেছে, গত বছর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছিল আইসিবি। পরে এফআইডি বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংককে জানায়।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম
গত মাসে এফআইডির পুঁজিবাজার বিভাগ অর্থ মন্ত্রণালয়কে এক চিঠিতে জানায়, আইসিবিকে ১০ বছরের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ হিসেবে ১৩ হাজার কোটি টাকা দেওয়া প্রয়োজন, যার মধ্যে প্রথম দুই বছর গ্রেস পিরিয়ড থাকবে। চিঠিতে বলা হয়Ñ আইসিবি পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে তারল্য সংকটে ভুগছে।