চট্টগ্রাম বন্দরে অচলাবস্থার শঙ্কা
পরিবহন মালিক-শ্রমিকের ধর্মঘট স্থগিত হলেও চট্টগ্রাম কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কর্মবিরতি চলছে। আরও ছয় দিন এ কর্মসূচি চলবে। এর পর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে সংগঠনটি। ফলে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ার পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর অচল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন ট্যারিফ স্থগিতে এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছে চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার ফোরাম। এই সংগঠনের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল থেকে ৪ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন শুরু করেছে চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন। সাত দিনের মধ্যে ট্যারিফ সমস্যার সমাধান না হলে বন্দর অচল করে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছে পোর্ট ইউজার ফোরাম। ফলে দেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড চট্টগ্রাম বন্দর যে কোনো সময় অচল হয়ে পড়তে পারে। এ জন্য সরকারের উচিত নতুন ট্যারিফ বাস্তবায়ন থেকে সরে আসা।
এদিকে নতুন ট্যারিফ শিডিউলে পণ্যবাহী গাড়ি ও সিঅ্যান্ডএফ কর্মচারীদের গেটপাস ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে প্রাইম মুভার, ট্রেইলার মালিক ও সিঅ্যান্ডএফ শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে গতকাল কার্যত অচল হয়ে পড়ে বন্দর।
গতকাল সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া কর্মবিরতির ফলে বন্দর থেকে সব ধরনের পণ্য ও কনটেইনার আনা-নেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। কোনো ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যান বন্দরে প্রবেশ করেনি। দুপুরে পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান। বন্দরে গাড়ি প্রবেশ ফি আগের মতো ৫৭ টাকা বহাল থাকবে বলে আশ্বাস দিলে ধর্মঘট স্থগিত করেন পরিবহন মালিকরা।
বৈঠক শেষে চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক সাংবাদিকদের জানান, গত শনিবার থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লরি ও ট্রেইলার চলাচল বন্ধ ছিল। ফলে আমদানি-রপ্তানির পণ্য পরিবহন হয়নি। বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। সরকারি অনুমোদনে জারি করা এ গেজেট বন্দর প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে কোনো রকম কারেকশন কিংবা বন্ধ করতে পারে না। তার পরও পরিবহন শ্রমিকদের বিষয়টা বিবেচনা করে, চেয়ারম্যানসহ বন্দরের সদস্যরা সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত শুধু যানবাহন খাতে যে ট্যারিফ বাড়ানো হয়েছে সেটা স্থগিত থাকবে। আমরা চবক বোর্ডের সিদ্ধান্ত নিয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাব। প্রস্তাব অনুমোদন হয়ে এলে আপনারা জানতে পারবেন কী সিদ্ধান্ত হয়েছে। আপাতত তা স্থগিত থাকবে। শ্রমিক ও মালিক প্রতিনিধিরা কাজে ফিরবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
আন্তঃজেলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মজুমদার মানিক আমাদের সময়কে বলেন, চেয়ারম্যান আগের হারে প্রবেশ ফি নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন এবং নতুন বর্ধিত ফি স্থগিত থাকবে বলে জানিয়েছেন। সেই প্রেক্ষিতে আমরা ধর্মঘট স্থগিত করেছি। বিকাল ৫টা থেকে পরিবহন শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন।
এদিকে নতুন বর্ধিত ট্যারিফ স্থগিত না করলে ৪ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করবেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম সাইফুল আলম। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, সিঅ্যান্ডএফ কর্মচারীদের গেটপাস ফি ১২ টাকা থেকে এক লাফে ১১৫ টাকা করা হয়েছে, যা অযৌক্তিক। আমাদের ১৩ হাজার কর্মচারী বর্ধিত ফি দিয়ে বন্দরে প্রবেশ করতে চায় না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার ফোরামের সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছি। এই সময়ের মধ্যে বর্ধিত ট্যারিফ স্থগিত না করলে বন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে আমরা বাধ্য হব।
সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কেউ যোগাযোগ করেনি জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন কর্মবিরতি শুরু করেছে। আরও সংগঠন এতে যুক্ত হবে। সাত দিন পর আমরা আবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করব।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক পরিচালক শাহেদ সরওয়ার বলেন, গত তিন দিনে ব্যবসার অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। পরিবহন মালিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহার হলেও এখন আবার সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কর্মচারীরা কর্মবিরতি করছে। এতে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্লো হয়ে যাবে। ফলে ধীরে ধীরে বন্দর অচলাবস্থার দিকে চলে যাবে।
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ বলেন, বন্দর ট্যারিফ বাড়ানোর আগে ভালোভাবে সার্ভে করেছে বলে মনে হয় না। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলে বাড়ানো দরকার ছিল। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের কর্মবিরতির কারণে আমদানি-রপ্তানিতে প্রভাব পড়বে। কারণ সিঅ্যান্ডএফ ক্লিয়ারেন্স না পেলে পণ্য জাহাজে বা গাড়িতে উঠানো যাবে না।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে মোট ৫৯ হাজার কনটেইনার রাখার জায়গা রয়েছে। গতকাল ছিল ৪৪ হাজার ৫৭৭ টিইইউস (টুয়েন্টি ফুট ইক্যুয়েভেলেন্ট ইউনিট)। আগের দিন ছিল ৪৬ হাজার ৩০ টিইইউস। জেটিতে মোট জাহাজ ছিল ১৬টি। এর মধ্যে কনটেইনারবাহী ১১টি ও সাধারণ কার্গো জাহাজ ৫টি।
বেসরকারি ডিপো মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সচিব রুহুল আমিন শিকদার আমাদের সময়কে জানান, পণ্য পরিবহন একদিন বন্ধ থাকায় খুব বেশি কনটেইনার বেসরকারি ডিপোগুলোতে জমেনি। তবে দীর্ঘায়িত হলে রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার জমে যেত। ১৯টি ডিপোতে গতকাল পর্যন্ত ৮ হাজার ৪০০ টিইইউস রপ্তানি কনটেইনার, ৭ হাজার ৭০০ আমদানি কনটেইনার এবং ৬৩ হাজার খালি কনটেইনার রয়েছে। শনিবার ৪৬৩ রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার বন্দরে পাঠানো হয়েছে এবং ৩৭০ টিইইউস আমদানি পণ্যের কনটেইনার বন্দর থেকে ডিপোতে আনা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম