গণ-আকাঙ্ক্ষার দলিলে ঐতিহাসিক স্বাক্ষর
অবশেষে বহুল আলোচিত জন-আকাক্সক্ষার রাষ্ট্র সংস্কারের দলিল ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২৫’ স্বাক্ষরিত হয়েছে। এক বছর ধরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নেতৃত্বে আলোচনা, বিতর্ক, সংযোজন, বিয়োজন, পরিমার্জনের দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে গতকাল শুক্রবার বিকালে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় দেশের ২৪টি রাজনৈতিক দল অঙ্গীকারনামাসহ এই দলিলে স্বাক্ষর করেছে। রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরাও এই রাজনৈতিক সমঝোতার দলিলে স্বাক্ষর করেন। তবে জুলাই আন্দোলনের অন্যতম অংশীদার নিয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বামপন্থি চারটি রাজনৈতিক দল ভিন্ন ভিন্ন কারণ দেখিয়ে স্বাক্ষর অনুষ্ঠান বর্জন করে। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে অংশ নিলেও স্বাক্ষর করেনি গণফোরাম।
সনদে স্বাক্ষরের পর প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো ও ঐকমত্য কমিশন অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। সারা বিশ্বের কাছে এটি উদাহরণ হয়ে থাকবে।
এদিকে গতকাল সকাল থেকেই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আইনি সুরক্ষা, পুনর্বাসনের দাবিতে সংসদ ভবন এলাকায় অবস্থান নেয় ‘জুলাই যোদ্ধারা’। দুপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে দেয়াল টপকে শত শত আহত যোদ্ধা দক্ষিণ প্লাজায় স্বাক্ষর অনুষ্ঠানস্থলে অবস্থান নেয়। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক সনদের পঞ্চম দফায় পরিবর্তন করে পাঠ করে শুনিয়েছেন ঐকমত্য কমিশন। এরপর তাদের সরিয়ে দিতে গেলে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেডও ব্যবহার করে পুলিশ। এ সময় ‘জুলাই যোদ্ধারা’ সংসদ ভবনের বাইরে কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে। সড়কে টায়ার ও কাঠ এবং অনুষ্ঠানের জন্য বাইরে বানানো ছোট ছোট তাঁবু একসঙ্গে করে আগুন ধরিয়ে দেন। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা ছিল বিকাল ৪টায়। তবে ঘণ্টা তিনেক আগে সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চ ঘিরে এই অবস্থান ও সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে অনুষ্ঠানস্থলে আসতে শুরু করে রাজনৈতিক দলের নেতা ও আমন্ত্রিত অতিথিরা। বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠান শুরুর করা থাকলেও বৃষ্টির কারণে বিলম্বিত হয়। সাড়ে ৪টায় ব্যান্ডদলের বাদ্যের তালে মঞ্চে এসে উপস্থিত হন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। অনুষ্ঠান মঞ্চে তার সঙ্গী হন জুলাই সনদ প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা।
৪টা ৩৭ মিনিটে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। সরকারের সংস্কারের ধারাবাহিকতা ও ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম তুলে ধরে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। সূচনা বক্তব্যে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, আমাদের মতের পার্থক্য থাকবে। রাজনীতিতে মতপার্থক্য না থাকলে তা গণতান্ত্রিক হয় না। মতের পার্থক্য থাকবে, পথের পার্থক্য থাকবে, কিন্তু এক জায়গায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আশাবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, যে জাতীয় দলিল তৈরি হয়েছে, তার বাস্তবায়ন ঘটবে। দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন ঘটবে।
ঘড়ির কাঁটার ঠিক ৫টা ৫ মিনিটে প্রথমে রাজনৈতিক দলগুলোর দুজন করে প্রতিনিধি ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ও সদস্যরা স্বাক্ষর
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
করেন। এরপর ৫টা ৭ মিনিটে সনদে স্বাক্ষরের করেন প্রধান উপদেষ্টা। স্বাক্ষরের পরে তারা সনদ উঁচিয়ে ধরে দেখান। এরপর সনদ স্বাক্ষর শেষে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টা।
স্বাক্ষর করেছে ২৪ দল : ১. বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, ২. জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, ৩. লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. নেয়ামুল বশির, ৪. খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, ৫. রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম ও মিডিয়া সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন, ৬. আমার বাংলাদেশ পাটির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, ৭. নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, ৮. জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ ও মহাসচিব মোমিনুল আমিন, ৯. বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, ১০. গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, ১১. জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ও সিনিয়র সহসভাপতি তানিয়া রব, ১২. গণঅধিকার পরিষদের (জিওপি) সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন, ১৩. বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, ১৪. জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমান, ১৫. ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম, ১৬. ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ১৭. জাকের পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ শহীদুল ইসলাম ভুইয়া ও জহিরুল হাসান শেখ, ১৮. জাতীয় গণফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক আমিনুল হক টিপু বিশ্বাস ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মঞ্জুরুল আরেফিন লিটু বিশ্বাস, ১৯. বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল মাজেদ আতহারী ও মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার, ২০. বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম, ২১. ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম (বাবলু) ও মহাসচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ (সেলিম), ২২. জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী ও মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, ২৩. ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল কাদের ও মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী এবং ২৪. আমজনতার দল সভাপতি মিয়া মশিউজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক মো. তারেক রহমান।
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে যারা স্বাক্ষর করেছেন : ১. প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ২. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, ৩. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য মো. আইয়ুব মিয়া, ৪. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, ৫. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, ৬. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং ৭. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।
এ ছাড়া জুলাই শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান এবং শহীদ তাহির জামান প্রিয়র মা শামসী আরা বেগম জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। দর্শক সারিতে দেখা গেছে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁনকেও।
স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানের নেতা, আইনজীবী, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক ও শিক্ষকসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ও বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বিশেষ অতিথিরা।
এদিকে আইনি ভিত্তির নিশ্চয়তা ছাড়া জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করার ঘোষণা দিয়ে গতকাল অনুষ্ঠানে অংশ নেয়নি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ ছাড়া বিদ্যমান সংবিধানের চার মূল নীতিকে বাদ দেওয়া ও স্বাধীনতার ঘোষণা বাদ দেওয়াসহ সাত কারণে সনদে স্বাক্ষর করেনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদের নেতারা। প্রক্লেমেশন অব ইনডিপেনডেন্টস বাদ দেওয়ায় স্বাক্ষর না করার ঘোষণা দিয়েছিল গণফোরাম। সেটি রাখার দাবিও জানিয়েছিল।
গতকাল গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মিজানুর রহমান অনুষ্ঠানে অংশ নিলেও স্বাক্ষর করেনি। যদিও আপাতত স্বাক্ষর না করলেও পরে করার ইঙ্গিত দিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, বৃষ্টির পরে আমরা চূড়ান্ত কপির একটা বই পেয়েছি এবং তারা (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) আমাদের বলেছে যে এটা সংশোধন করা হয়েছে। এখন যেহেতু তারা এটা সংশোধন করেছে, আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরে স্বাক্ষর করব।
প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শনী : প্রধান উপদেষ্টার বক্তৃতা শেষে গত ১৬ বছরের দুঃশাসন, দুর্নীতি, গুম, খুন, শাপলা চত্বরের ও পিলখানা হত্যাকাণ্ড ও জুলাই আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান, জুলাই সনদের ওপর সাত মিনিটের একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন হয়। এর নাম ‘ভবিষ্যতের পথরেখা’। ডকুমেন্টারি প্রদর্শনের পর জুলাই সনদে স্বাক্ষরকারী জাতীয় নেতাদের সঙ্গে কুশলবিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে প্রধান উপদেষ্টা তাদের সঙ্গে মঞ্চের সামনে একটি ফটোসেশনে অংশ নেন।
সনদে যা রয়েছে : জুলাই সনদের পটভূমি ব্যাখ্যা করে সংস্কারযজ্ঞ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম তুলে ধরার পর সংস্কারের ৮৪ দফা তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কী অঙ্গীকার করছে, তা উল্লেখ করার পর রাখা হয়েছে স্বাক্ষরের জায়গা। ৪০ পৃষ্ঠার জুলাই সনদে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের যে ৮৪ দফা, তার মধ্যে ৪৭টি বিষয়কে ‘সংবিধান সংশোধন সাপেক্ষে সংস্কার’ এবং বাকি ৩৭টি বিষয়কে ‘আইন/অধ্যাদেশ, বিধি ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সংস্কার’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সংস্কারের ১৭টি বিষয়ে পূর্ণ ঐকমত্যের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাকি ৬৭টি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কেউ কেউ বিরোধিতা করে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে।
সংশোধনী ও পরিবর্তন : জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগ মুহূর্তে সনদের পঞ্চম দফাতে পরিবর্তন আনার কথা জানিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সংশোধিত পঞ্চম দফায় বলা হয়েছে, ‘গণ-অভ্যুত্থানপূর্ব বাংলাদেশে ১৬ বছরের আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানকালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্যের দ্বারা সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান ও শহীদ পরিবারকে এবং জুলাই আহতদের রাষ্ট্রীয় বীর, আহত জুলাই বীর যোদ্ধাদের যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদান যেমন মাসিক ভাতা, সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন ব্যবস্থা এবং শহীদ পরিবার ও আহত বীর যোদ্ধাদের আইনগত দায়মুক্তি, মৌলিক অধিকার সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করব।’
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন
এ ছাড়া সিপিবিসহ চারটি বামপন্থি দলের আপত্তির পর জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ এ পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর ফলে সংবিধান থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাদ পড়ছে না। গত ১৪ অক্টোবর সনদের অনুলিপি দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। সেখানে বলা হয়েছিল, বিদ্যমান সংবিধানের ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলি-সংক্রান্ত ১৫০ (২) অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হবে এবং এ সংশ্লিষ্ট পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিল সংবিধানে রাখা হবে না। এই সিদ্ধান্তে ৯টি দল একমত ছিল না।
এরপর জুলাই সনদের এই জায়গায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। চূড়ান্ত সনদে বলা হয়েছে, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫০(২) সংশোধন করা হবে এবং এ সংশ্লিষ্ট পঞ্চম ও ষষ্ঠ তফসিল সংবিধানে রাখা হবে না। অর্থাৎ জুলাই সনদ অনুসারে সংবিধানে সংস্কার হলে তাতে সংবিধানের তফসিলে ৭ মার্চের ভাষণ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা থাকবে না। তবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র সংবিধানের তফসিলে থাকবে।
কমিশন সূত্র জানিয়েছে, সংলাপে অংশ নেওয়া ৩০টি রাজনৈদিক দলের মধ্যে স্বাক্ষর না করা কোনো দল চাইলে চলতি মাসে সনদে স্বাক্ষর করতে পারবে। এ ছাড়া গণভোটের মাধ্যমে সাংবিধানিক সংস্কারে একমত হলেও সময় ও পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়নি। এখন বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। আগামী ৩১ অক্টোবর তৃতীয় দফায় কমিশনের বর্ধিত মেয়াদে সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।