অগ্নিনিরাপত্তা সনদ নেই, মানা হয়নি বিল্ডিং কোড

সিইপিজেডে কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে

চট্টগ্রাম ব্যুরো
১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
অগ্নিনিরাপত্তা সনদ নেই, মানা হয়নি বিল্ডিং কোড

চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) আগুনে পুড়ে যাওয়া কারখানা ভবনটির অগ্নিনিরাপত্তার কার্যকারিতা ‘সনদ নেই’। অগ্নিনিরাপত্তা সনদের জন্য কর্তৃপক্ষ আবেদন করলেও, পরবর্তী ধাপের কার্যক্রম শেষ করা হয়নি। এ ছাড়া ভবনটি নির্মাণে মানা হয়নি ‘বিল্ডিং কোডের’ নিয়মও। এদিকে আগুনের কারণ অনুসন্ধান ও ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে গঠন করা হয়েছে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার সকালে পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।

ভবনটির অগ্নিনিরাপত্তা সনদ নিয়ে তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এই ভবনের জন্য তারা আবেদন করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী কার্যক্রম করা হয়নি। আবেদন করলে ডিজাইন জমা দিতে হয়। তার পর আমাদের পরিদর্শন কমিটি করা হয়। কমিটির পরিদর্শনে যাচাই-বাছাই করে ডিজাইনের সঙ্গে সামঞ্জ্যসতা দেখা হয়। তার পর এনওসি দেওয়া হয়। এখানে আবেদন হয়েছে কিন্তু বাদবাকি কার্যক্রম হয়নি।

সিইপিজেড এলাকায় ১ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর সড়কের আটটলা ভবনের সাততলার অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড এবং জিহং মেডিক্যাল কোম্পানি নামের দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। অ্যাডামস ক্যাপ নামের প্রতিষ্ঠানে টাওয়েল ও ক্যাপ এবং জিহং মেডিক্যাল সার্জিক্যাল গাউনসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরি করে।

গত বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে লাগা আগুন গতকাল শুক্রবার সকাল ৭টা ২৫ মিনিটের দিকে নিয়ন্ত্রণে আসে বলে ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়। এই ভবনে যখন আগুন লাগে তখন দুপুরের খাবারের বিরতি থাকায় কারখানার শ্রমিকরা বেশির ভাগই তখন ভবন থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন। কারখানার কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগুন জ্বলার সময় ভবনে কোনো শ্রমিক ছিল না। অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

নীতিমালা না মেনে ভবনটির চারটি ফ্লোরে পণ্য গুদামজাত করা হয়েছিল অভিযোগ করে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, ভবনটি মিশ্র ব্যবহারের। প্রথম ৩ তলা অ্যাডামস ক্যাপসের। পরের ৪টা ফ্লোরই ছিল স্টোর। স্টোরের যে প্রিন্সিপাল তা রক্ষা করে করা হয়নি। এখানকার প্রোডাক্টগুলো পুড়ে আরেকটা রাসায়নিক এজেন্টে পরিণত হয়েছে। সেখানে ডাক্তারদের অ্যাপ্রোন, মেডিক্যাল গাউনসহ অনেক কিছু ছিল। এটা রাসায়নিক কারণে পুড়েছে অনেকক্ষণ ধরে।

তাজুল ইসলাম বলেন, ভবনটা দুই দিক থেকে খোলা। বিল্ডিং কোডের যে নিয়ম সেই নিয়ম মেনে করা হয়নি। পাশের ভবনটা ছিল খুবই সন্নিকটে। এটার সেফ গার্ডটা ছিল না। যার কারণে ফায়ার ফাইটাররা ওখানে পজিশন নিতে পারেননি।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর কারখানা ভবনটির পরিস্থিতি জানিয়ে বলেন, এই ভবনটি দীর্ঘক্ষণ ধরে পুড়ছিল। ৮০০ থেকে এক হাজার ডিগ্রি সিসি তাপমাত্রা হলে যা হয়, আরসিসি কলামের স্ট্রেংথ ছেড়ে দিয়েছে। বিশেষ করে পঞ্চম তলা থেকে অষ্টম তলা স্যান্ডউইচ হয়ে ফ্লোরগুলো সব একাকার হয়ে গেছে এবং ভেঙে এটা নিচে পড়েছে। যার কারণে আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য ছিল। দূরত্ব বজায় রেখে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কার্যক্রম করেছি। এতে আমাদের একটু সময় লেগেছে। তবে আমাদের কারও কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে এই ভবনটি ছাড়া আরেকটি ভবনের কিছু ক্ষতি হয়েছে। ভবনটিকে বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে।

অন্য ভবনের যাদের কমপ্লায়েন্স নেই, তারা যেন দ্রুত কমপ্লায়েন্সে চলে সেই পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেন, যাতে করে আর এ ধরনের সম্পদ বিনষ্ট না হয়। এটা শুধু মালিকের না, দেশের ক্ষতি। প্রাণ রক্ষা ও সম্পদ যেন বাঁচে।