বিএনপির নেতাকর্মীরা এখনও আদালতের দ্বারে দ্বারে

রহমান জাহিদ
১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
বিএনপির নেতাকর্মীরা এখনও আদালতের দ্বারে দ্বারে


জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ১৪ মাস পার হলেও বিএনপির অনেক নেতাকর্মী আজও মামলার ভারে নিঃস্ব হয়ে আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত দায়ের হওয়া প্রায় দেড় লাখ মামলা এবং লাখ লাখ আসামির কারণে নেতাকর্মীরা এখনও প্রতিনিয়ত আদালতের বারান্দায় হাজিরা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। আইনজীবীদের মতে, সরকারের অনীহা ও মামলা প্রত্যাহারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে এই নিঃস্বতা আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে, যেখানে যথাযথ আন্তরিকতা থাকলে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে অনেক মামলা প্রত্যাহার হয়ে যেত। এ অবস্থায় নেতাকর্মীদের জীবন এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম আজও প্রভাবিত হচ্ছে।

বিএনপির মামলার তথ্য ও সংরক্ষণ শাখার সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় লাখ মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ৫০ লাখের ওপরে। এর মধ্যে শুধু ঢাকা মহানগরের ৫০ থানায় ২০ হাজার মামলা করা হয়েছে।

বিএনপির নেতাকর্মীদের আইনজীবীরা জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ২০২৩ সালে ঢাকা ও ঢাকা মহানগরীর থানাগুলোর ৯৮ মামলায় ১ হাজার ৫২৫ নেতাকর্মীকে দণ্ডিত করেন। এসব নেতাকর্মীসহ অন্য নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা এখনও তদন্ত চলছে ও বিচারধীন রয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর মামলা প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করার সুযোগ পেলেও অধিকাংশ মামলা এখনও প্রত্যাহার হয়নি। আইনজীবীদের মতে, সরকার আন্তরিক হলে মাত্র তিন মাসের মধ্যে সব মামলা প্রত্যাহার হয়ে যেত।

আইনজীবী মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ৮৪টি মামলার আসামি, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি ১০৩টি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু ২৬৫টি মামলার আসামি। তাঁদের অধিকাংশ মামলা এখনও প্রত্যাহার হয়নি। তিনি জানান, গত ১৩ অক্টোবরও মির্জা আব্বাস ও তাঁর স্ত্রী মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজিরা দিতে আসেন।

দীর্ঘ ১৭ বছরে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশে ভিত্তিহীন মামলা দেওয়া হয়। এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ৩২, সালাহউদ্দিন আহমেদ ৩৫, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান ১৩৪, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ১৮০, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শিমুল বিশ্বাস ১১৯, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ২৫৪টি, হাবিব উন নবী খান সোহেলের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ৪৫১টি মামলা, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদের বিরুদ্ধে ৪১টি, সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর ৪৭টি, সাইফুল আলম নিরবের বিরুদ্ধে ১২৬টি মামলা দেওয়া হয়। যুবদল নেতা ইসহাক সরকারের বিরুদ্ধে দেওয়া হয় ৩৬৫ মামলা।

আইনজীবী ইলতুৎমিশ সওদাগার এনি বলেন, ২২০টি মামলার আসামি স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, বিএনপির সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল ২৫০টি মামলা এবং ছাত্রদলের সাবেক সেক্রেটারি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বর্তমান সদস্য আকরাম হোসেন ১৭১টি মামলার আসামি। কিছু মামলা প্রত্যাহার হলেও তাঁদের অধিকাংশ মামলায় এখনও আদালতে হাজিরা দিতে হয়। তিনি বলেন, মামলা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে সরকারের আন্তরিকতার অভাব দেখা যাচ্ছে। যেখানে মামলা প্রত্যাহার হতে তিন মাস লাগার কথা, সেখানে ১৪ মাস পার হলেও মামলাগুলো এখনও প্রত্যাহার হয়নি।

আইনজীবী মোশারফ হোসেন জানান, বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল সর্বোচ্চ ৬৩১টি মামলার আসামি ছিলেন। তাঁর অধিকাংশ মামলা এরই মধ্যে প্রত্যাহার হয়ে গেছে; বর্তমানে শুধু সাত-আটটি তদন্তাধীন মামলা বাকি আছে।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অফিস সূত্র জানায়, প্রত্যাহারের আবেদন পাওয়া প্রায় ১২ হাজার মামলা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৮০৭টি মামলার প্রত্যাহারের আদেশ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২ হাজারের মতো মামলা আদালতে পৌঁছেছে; বাকিগুলো পৌঁছানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। যেসব মামলা প্রত্যাহার হয়নি, সেগুলো হয়তো এখনও আদালতে পৌঁছায়নি। এ ছাড়া মন্ত্রণালয় থেকে এখনও অনেক মামলায় আদেশ আসা বাকি আছে।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, আমরা মন্ত্রণালয় থেকে আসা প্রত্যাহারের আদেশ আদালতে পাঠাচ্ছি। বিষয়টি চলমান। হয়তো আরও কিছু সময় লাগবে।