মতানৈক্যের মধ্যেই আজ সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান
জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কারে প্রস্তুত জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫। আজ শুক্রবার বিকালে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে সনদে আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর করা হবে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আমন্ত্রণে সংলাপে অংশ নেওয়া বিএনপিসহ ৩০টি দলের এতে স্বাক্ষর করার কথা রয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা সনদে স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত। কিন্তু শেষ মুহূর্তে জুলাই আন্দোলনের অন্যতম অংশীদার জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) স্বাক্ষর না করার কথা জানিয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যমান সংবিধানের চার মূলনীতি ও স্বাধীনতার ঘোষণা বাদ দেওয়াসহ ৭টি কারণ উল্লেখ করে সনদে স্বাক্ষর না করার ঘোষণা দিয়েছে বাম ধারার ৪টি দল। গণফোরামও জানিয়েছে, তারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না। আর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার কথা বললেও স্বাক্ষর করার বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। দলগুলোর এমন মতানৈক্যের মধ্যেই রাষ্ট্র সংস্কারের সুপারিশ ও অঙ্গীকারনামা সংবলিত জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সব দলের নেতাদের কাছে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ঐতিহাসিক মুহূর্তে সবার উপস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হবে। আমরা আশা করছি, সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরবর্তী ধাপে উপনীত হতে পারব। তবে কোনো দল যদি মনে করে পরে স্বাক্ষর করবে, তাও করতে পারবে। তিনি আরও বলেন, জুলাই আন্দোলন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে পরবর্তী সংস্কার ও রাজনৈতিক সনদ প্রণয়নে এনসিপির অবদান আছে। তাই কমিশন আশা করছে, এনসিপি জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আসবে এবং স্বাক্ষর করবে।
সব দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করলে সনদের ভবিষ্যৎ কী? এমন প্রশ্নে আলী রীয়াজ বলেন, এটি হাইপোথিক্যাল (অনুমানমূলক) বিষয়। সনদে স্বাক্ষর করাটা একটা ডকুমেন্ট। বাম দলগুলো জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
সনদে যা থাকছে
জুলাই সনদের পটভূমি ব্যাখ্যা করে সংস্কারযজ্ঞ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম তুলে ধরার পর সংস্কারের ৮৪ দফা তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো কী অঙ্গীকার করছে, তা উল্লেখের পর রাখা হয়েছে স্বাক্ষরের স্থান।
৪০ পৃষ্ঠার জুলাই সনদে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের যে ৮৪ দফা, তার মধ্যে ৪৭টি বিষয়কে ‘সংবিধান সংশোধন সাপেক্ষে সংস্কার’ এবং বাকি ৩৭টি বিষয়কে ‘আইন/অধ্যাদেশ, বিধি ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সংস্কার’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সংস্কারের ১৭টি বিষয়ে পূর্ণ ঐকমত্যের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাকি ৬৭টি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কেউ কেউ বিরোধিতা করে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে।
জুলাই সনদে সংবিধান সংস্কার করে বাস্তবায়িত বিষয়ের মধ্যে বাংলার পাশাপাশি অন্য ভাষার স্বীকৃতি, বাংলাদেশি নাগরিক পরিচয়, সংবিধান সংস্কারের বিধান, সংবিধান বিলুপ্তি ও স্থগিতকরণ ইত্যাদির অপরাধের অনুচ্ছেদ বাতিল এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিধানে পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি বদলে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি’ করা হয়েছে। সব সম্প্রদায়ের সহাবস্থানের বিধান সংযুক্তি, মৌলিক অধিকারের তালিকা সম্প্রসারণ, উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের গোপন ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব সুনির্দিষ্টকরণ, রাষ্ট্রপতির অভিশংসন প্রক্রিয়ায় সংশোধন এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে মামলার বাদী বা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সম্মতি নেওয়ার বিধান যুক্ত করার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত অংশে প্রধানমন্ত্রী পদে এক ব্যক্তির সর্বোচ্চ ১০ বছর থাকার সীমা, প্রধানমন্ত্রীর দলীয় প্রধানের পদে না থাকা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার গঠন প্রক্রিয়া, কার্যাবলি ও মেয়াদ প্রভৃতি বিষয়ে সংবিধান সংশোধন করা হবে। একই ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গঠন বিষয়ে ৩০টি দল ও জোট একমত পোষণ করলেও প্রধানমন্ত্রী পদে দলীয় প্রধানের থাকা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ও গঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের ভিন্নমত ও নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে। আইনসভা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করার ক্ষেত্রে ২৫টি রাজনৈতিক দল একমত পোষণ করেছে। পাঁচটি দল নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। নিম্নকক্ষে প্রাপ্ত ভোটে উচ্চকক্ষ গঠনের যে প্রস্তাব জাতীয় ঐকমত্য কমিশন করেছে, তাতে ২৪টি রাজনৈতিক দল একমত। এতে নোট অব ডিসেন্ট আছে বিএনপিসহ ৭টি রাজনৈতিক দলের। উচ্চকক্ষের গঠন, সদস্য নির্বাচন পদ্ধতি ও এখতিয়ার অংশে উচ্চকক্ষের দায়িত্ব ও ভূমিকা, উচ্চকক্ষের সদস্যদের যোগ্যতা ও অযোগ্যতা, জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব একশ জন করা, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নির্বাচন, ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার এবং আন্তর্জাতিক চুক্তি আইনসভায় অনুমোদনের বিষয় যুক্ত করা হয়েছে।
সবশেষে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সাত দফা অঙ্গীকারনামা থাকছে রাজনৈতিক দল ও জোটের জন্য। অঙ্গীকারনামার শেষ দফায় বলা হয়েছেÑ জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত যেসব সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য সেগুলো কোনো প্রকার কালক্ষেপণ না করে দ্রুততম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
স্বাক্ষরে প্রস্তুত বিএনপি
জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত রয়েছে বিএনপি। এ উপলক্ষে সরকার কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
জামায়াত-এনসিপি
জুলাই সনদ চূড়ান্ত করা হলেও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে ভিন্নমত বিদ্যমান। সাংবিধানিক সংস্কারে গণভোটে একমত হলেও ভোটের সময় ও পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। বিএনপিসহ অধিকাংশ দল চাইছে সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট। জামায়াত ও এনসিপি জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি জানিয়েছে। তাই আজকের স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে দল দুটির অংশ নেওয়া অনিশ্চিত।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, প্রয়োজনীয় যে সব সমস্যা এখনও নিষ্পত্তি হয়নি, তার যে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে, সেগুলো আলোচনার ভিত্তিতে সমাধানের কোনো সুযোগ যদি আমরা দেখি, তাহলে আমাদের এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যাওয়ার ব্যাপারে আপত্তি থাকবে না। আমরা আমন্ত্রণ পেয়েছি। কিন্তু আমরা চিন্তা করছি, আমরা কালকে কী ভূমিকা রাখব।
এদিকে জুলাই সনদে সই করা না করার প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান স্বচ্ছ করেছে এনসিপি। গতকাল বৃহস্পতিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার জন্য তিনটি দাবি জানিয়েছেÑ এক. জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগেই প্রকাশ করতে হবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া ‘জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়’ অনুসারে সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জারি করবেন। জুলাই সনদের বৈধতার উৎস হতে হবে জুলাই গণঅভ্যুত্থান; দুই. জুলাই সনদের ৮৪টি সংস্কারের বিষয়ে গণভোট হবে। এতে নোট অব ডিসেন্টের আলাদা কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। গণভোটের প্রশ্ন কী হবে তা আগেই চূড়ান্ত করতে হবে এবং তা রাজনৈতিক দলগুলোকে দেখাতে হবে এবং তিন. গণভোটের মাধ্যমে জনগণ যদি জুলাই সনদের পক্ষে রায় দেয়, তবে নোট অব ডিসেন্টের কোনো কার্যকারিতা থাকবে না; গণভোটের রায় অনুযায়ী আগামী নির্বাচিত সংসদ তাদের ওপর প্রদত্ত সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে সংবিধান সংস্কার করবে এবং সংস্কারকৃত সংবিধানের নাম হবে ‘বাংলাদেশ সংবিধান, ২০২৬’। এসব বিষয় নিশ্চিত না করে জুলাই সনদ সই করা হলে তা জনগণের সঙ্গে ‘ছলচাতুরি’ করা হবে বলে মনে করছে এনসিপি।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া এতে স্বাক্ষর করা হবে মূল্যহীন। এটি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা অনুষ্ঠানের অংশীদার হবো না।
স্বাক্ষর করছে না ৪টি বাম দল ও গণফোরাম
জুলাই সনদে সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্কসবাদী), বাংলাদেশ জাসদ স্বাক্ষর করবে না বলে জানিয়েছে। গতকাল বিকালে রাজধানীর মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সনদের পটভূমিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে উপস্থাপিত না হওয়া, রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির পরিবর্তন, ১৫০ (২) অনুচ্ছেদ বাতিলের যে প্রস্তাব সনদে উল্লেখ রয়েছে, তা সংশোধন না হলে এই চার দলের পক্ষে সনদে স্বাক্ষর করা সম্ভব নয়। এছাড়া গণফোরামও স্বাক্ষর না করার কথা জানিয়েছে।
এদিকে দীর্ঘ আট মাসের আলোচনা শেষে আজ জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় হবে জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষর গ্রহণ অনুষ্ঠান। সংসদের দক্ষিণ প্লাজার সিঁড়ির মাঝামাঝি তৈরি করা হয়েছে স্বাক্ষর মঞ্চ। মঞ্চ তৈরির পাশাপাশি জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় সাজসজ্জা করা হয়েছে। সনদে স্বাক্ষর করবেন দেশের ৩০টি রাজনৈতিক দলের ৬০ জন প্রতিনিধি। ইতোমধ্যে দলগুলো তাদের প্রতিনিধিদের নাম কমিশনের কাছে পাঠিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়াও সনদে স্বাক্ষর করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ও সদস্যরা। প্রায় তিন হাজার অতিথিকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিভিন্ন গণ-অভ্যুত্থানের ওপর বিভিন্ন প্রদর্শনীর আয়োজন থাকছে।
আয়োজন প্রসঙ্গে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, জুলাই সনদ স্বাক্ষরই আমাদের সবচেয়ে বড় আয়োজন। সেখানে এ বিষয়ে একটি ডকুমেন্টারি দেখানো হবে। এদিকে জুলাই সনদ সই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এ সময় কোনো প্রকার ড্রোন ওড়ানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
প্রেক্ষাপট
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রথম ধাপে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও বিচার বিভাগ মিলিয়ে মোট ৬টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। গত বছরের অক্টোবরে এসব কমিশন কাজ শুরু করে। গত ফেব্রুয়ারিতে কমিশনগুলো তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব সরকারের কাছে জমা দেয়। কমিশনগুলোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে জুলাই সনদ প্রণয়নের লক্ষ্যে গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সাত সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যক্রম শুরু করে ঐকমত্য কমিশন। ছয় মাস মেয়াদের কমিশন ১৫ আগস্টের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারায় তৃতীয় দফায় আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
কমিশন সূত্র জানিয়েছে, সরকারের কাছে কমিশনগুলোর দেওয়া প্রস্তাবগুলোর মধ্য থেকে ১৬৬টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব নিয়ে প্রথম পর্বে ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে পৃথক সংলাপ করে কমিশন। আওয়ামী লীগ (কার্যক্রম স্থগিত) ও জাতীয় পার্টিসহ ৩০টি নিবন্ধিত দল এতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়নি। দ্বিতীয় পর্বে ২০টি মৌলিক সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ২ জুন থেকে ৩০টি দল ও জোটের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ শুরু করে কমিশন। এটি ৩১ জুলাই শেষ হয়। দুই পর্বের আলোচনায় ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়। দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ চূড়ান্ত করে কমিশন। এরপর সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে তৃতীয় দফায় সংলাপ শুরু হয় এবং ৮ অক্টোবর তা শেষ হয়। কিন্তু এ সময়কালে কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে পারেনি কমিশন। গত ১৪ অক্টোবর সনদের চূড়ান্ত অনুলিপি রাজনৈতিক দলগুলোকে পাঠায় কমিশন। সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে কমিশন।
এ বিষয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, কমিশন মনে করে জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়া প্রয়োজন। এ জন্য কমিশনের মেয়াদকালে বাস্তবায়নের পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা দেবে কমিশন। আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যেই সরকারের কাছে সুপারিশ পাঠাবে কমিশন এবং সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে বলে কমিশন আশাবাদী।
সবাইকে ঐতিহাসিক মুহূর্তের অংশ হওয়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন
জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সবাইকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস। পাশাপাশি সব টিভি ও অনলাইন গণমাধ্যমকে এ অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। এক বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই সনদ প্রত্যেক বাংলাদেশির জন্য। আমাদের রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা জাতিগত পার্থক্য সত্ত্বেও আমরা এক ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে একসঙ্গে দাঁড়িয়েছি। আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, বাসায় অথবা বাইরে চলমান, আপনার দোকানে, কারখানায়, মাঠে, খেলার মাঠেÑ এ ঐতিহাসিক মুহূর্তের অংশ হোন। এটি আমাদের একসঙ্গে উদযাপন করার সময়।
গতকাল রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আমন্ত্রণ পেয়ে উচ্ছ্বসিত খালেদা জিয়া
জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত হয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ তথ্য দিয়েছেন ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। তাঁরা দুজন গতকাল রাতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার হাতে অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত জন্য কমিশনের মেয়াদকালে বাস্তবায়নের পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা দেবে কমিশন। আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যেই সরকারের কাছে সুপারিশ পাঠাবে কমিশন এবং সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে বলে কমিশন আশাবাদী।
আমাদের সময়/ এইচও