৭ দিনে মূলধন কমেছে ৩১ হাজার কোটি টাকা

আবু আলী
১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৫৪
শেয়ার :
৭ দিনে মূলধন কমেছে ৩১ হাজার কোটি টাকা

দেশের শেয়ারবাজারে দীর্ঘ দিন ধরেই রক্তক্ষরণ চলছে। এর মধ্যে আবারও অব্যাহত দরপতনের মুখে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। বাজারে একদিকে তারল্য প্রবাহ কমছে, আরেক দিকে আসছে না নতুন বিনিয়োগ। গত সাত দিনে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে ৩১ হাজার কোটি টাকা। আর প্রধান সূচক কমেছে ৩০৭ পয়েন্ট। আলোচ্য সময়ে লেনদেনে খরা দেখা দিয়েছে। বাজার বিশ্লেষকরা জানান, বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। প্রতিদিন শেয়ারের মূল্য কমতে থাকায় তাঁদের লোকসান এমন পর্যায়ে নেমেছে যে, বিনিয়োগকারীরা আর লোকসান নিতে পারছেন না। ফলে শেয়ারবাজারে চলছে নীরব রক্তক্ষরণ।

জানা গেছে, শেয়ারবাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের হতাশা বহুকালের। মাঝেমধ্যে কিছু ঘটনা নতুন আশা তৈরি করে বটে; কিন্তু আশাহত হতেও সময় লাগে না। ফলে এখনও কারসাজি ও অনিয়মের বৃত্ত ভেঙে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজার। মুনাফার আশায় এসে উল্টো পুঁজি হারিয়ে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, শেয়ারবাজারে উত্থান-পতন থাকবেই। কিন্তু আমাদের বাজারে সূচকের পতন চলছেই। মনে হয় কোনো অভিভাবক নেই। এ বিষয়ে

ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমেদ রশিদ লালী আমাদের সময়কে বলেন, অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ না হলে শেয়ারবাজার ঘুঁরে দাঁড়াবে না। গত কয়েক দিন আগে এনবিআর থেকে নোটিশ দেওয়া হয়, যেসব বিনিয়োগকারী ৫০ লাখ টাকার বেশি মুনাফা করেছেন, তাঁদের তথ্য দিতে হবে। এতে বাজার প্রথমে ধাক্কা খায়। এরপর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পাঁচ ব্যাংক একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত হয়। সেখানে বিনিয়োগকারীদের বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এরপর গত কয়েক দিন সরকারের মধ্যে টানাপড়েন তৈরি হয়। এতে বাজার তৃতীয়বারের মতো ধাক্কা খায়। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের দুঃসময়ে ঘন ঘন হস্তক্ষেপ হলে বাজারে আস্থার সংকট তৈরি হয়। এ জন্য পুঁজিবাজারে অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। এতে বাজারে গতি ফিরবে। তবে বাজার ভুল প্লে হলে সেটি বিএসইসি আইনি ব্যবস্থা নেবে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গতকাল সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। ডিএসইর মতো অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম কমেছে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। ফলে এ বাজারটিতেও মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে।

গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মধ্য দিয়ে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। আর লেনদেনের শেষদিকে ঢালাও দরপতন হয়।

এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে দাম বেড়েছে মাত্র ৩৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের। বিপরীতে দাম কমেছে ৩২৮টির। আর ৩৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২২টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে ১২৮টির দাম কমেছে এবং ২০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া একটি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে ৭৯টির দাম কমেছে।

ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৮০ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১১৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৬৭ পয়েন্টে নেমে গেছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৮৭ কোটি ৬২ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৬০৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এ হিসেবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ১১৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

লেনদেনে শীর্ষে ছিল ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩২ কোটি ৭১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিংয়ের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৬ কোটি ৭২ লাখ টাকার। ১৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ।

এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছেÑ ফারইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডাইং, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট, এপেক্স ফুটওয়ার, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স এবং সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল।

অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৬৮ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৮৫ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৩৮টির এবং ১৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা।