আন্দোলনরত শিক্ষকদের ‘লংমার্চ টু যমুনা’ আজ
দাবি আদায়ে রাজপথে টানা অবস্থান করছেন শিক্ষকরা। বাড়িভাড়া ভাতা ২০ শতাংশ, চিকিৎসা ভাতা দেড় হাজার টাকা এবং উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশÑ এই তিন দফা দাবি কেন্দ্র করে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলন গতকাল বুধবার আরও তীব্র রূপ নিয়েছে। চার ঘণ্টা ধরে শাহবাগ মোড়ে অবরোধ শেষে শিক্ষকরা শহীদ মিনারে ফিরে গেছেন। সেখানেই ঘোষণা দিয়েছেন- আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় শুরু হবে ‘লংমার্চ টু যমুনা’।
এ অবস্থায় বাড়িভাড়া ভাতা ৫ শতাংশ বাড়ানো ও তা ন্যূনতম দুই হাজার টাকা করা এবং চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করার অঙ্ক কষছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে শিক্ষকরা তা মানবেন না বলে জানিয়েছেন।
বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে শহীদ মিনারে আয়োজিত সমাবেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী বলেন, ‘আমরা বহুদিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে দাবি জানিয়ে আসছি। এখন সময় এসেছে সিদ্ধান্তের। প্রজ্ঞাপন না এলে আমরা যমুনার উদ্দেশে রওনা হব। প্রশাসনকে অনুরোধÑ আমরা আপনাদের সহযোগিতা করেছি, আপনারাও আমাদের সহযোগিতা করুন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আর কোনো আশ্বাস মানব না। ২০ শতাংশ মানে ২০ শতাংশই। এক শতাংশও কম নয়। চিকিৎসা ভাতা ১,৫০০ টাকা আর উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশের কমে কোনো আপস হবে না। প্রয়োজনে পরীক্ষা স্থগিত থাকবে, শ্রেণিকক্ষ বন্ধ থাকবে।’
দুপুরে শহীদ মিনার থেকে পদযাত্রা শুরু করে শিক্ষকরা শাহবাগ মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। শিক্ষকরা ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগে অবস্থান নেন এবং চার ঘণ্টা ধরে অবরোধ চালান। ফলে রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত মোড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলমের অনুরোধে বিকাল ৫টার আগেই অবরোধ তুলে শহীদ মিনারে ফিরে যান তারা এবং সেখান থেকেই নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
অন্যদিকে শিক্ষকদের এই আন্দোলনের মধ্যেই অর্থ মন্ত্রণালয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে বুধবার দিনভর রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। অতিরিক্ত সচিব দিলরুবা শাহীনার কক্ষে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে যুগ্মসচিব ও উপসচিব পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা অংশ নেন। তবে বৈঠকে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে হিসাব-নিকাশ চলছে। এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি, তবে কাজ শেষ পর্যায়ে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের এক সূত্র জানায়, গত ৫ ও ৮ অক্টোবর এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধির দুটি প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। প্রস্তাব অনুযায়ী, বাড়িভাড়া ভাতা ৫ শতাংশ বাড়ানো এবং ন্যূনতম দুই হাজার টাকার নিশ্চয়তা দেওয়া হতে পারে। সিনিয়র শিক্ষকদের ক্ষেত্রে এই অঙ্ক আরও বেশি হবে। একই সঙ্গে চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা বাড়িয়ে এক হাজার টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাবও বিবেচনায় আছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয় প্রাথমিকভাবে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। এখন ফাইলটি ডি-নথিতে তোলার প্রক্রিয়া চলছে। অর্থ উপদেষ্টার অনুমোদন পেলেই প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।’
তিনি আরও জানান, ‘আগামী ফেব্রুয়ারিতে নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়নের প্রস্তুতি চলছে। তখন বেতন কাঠামো দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যে ধাপে ধাপে ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থ সংকটের কারণে আপাতত ৫ শতাংশ বৃদ্ধিই কার্যকর হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এদিকে শিক্ষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, দাবি ছিল ২০ শতাংশ বৃদ্ধির, তবে সরকারের এই উদ্যোগ অন্তত ন্যূনতম স্বীকৃতি হিসেবে কাজ করবে। অন্যরা মনে করছেন, এটি শিক্ষকদের দীর্ঘ আন্দোলনের প্রতি সরকারের টালবাহানার প্রতিফলন।
অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী বলেন, ‘সরকার যদি আন্দোলনের আগেই প্রজ্ঞাপন দিত, তাহলে আমরা রাজপথে আসতাম না। এখন শিক্ষকরা পিটুনি খেয়েও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই কোনো আশ্বাসে আমরা ফিরব না। প্রজ্ঞাপনই হবে একমাত্র সমাধান।’
টানা চতুর্থ দিনের মতো শহীদ মিনারে অবস্থান করছেন শিক্ষকরা। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা সেখানে এসে যোগ দিচ্ছেন। ব্যানার, ফেস্টুন আর সেøাগানে মুখর হয়ে উঠেছে শহীদ মিনার এলাকা।
দুপুর ১২টায় যমুনা অভিমুখে শুরু হবে তাদের লংমার্চ। অধ্যক্ষ আজিজীর ভাষায়, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে লংমার্চ করব। সময় লাগতে পারে, কিন্তু থামব না। কারণ এটি কেবল টাকার আন্দোলন নয়, এটি আমাদের মর্যাদা ও ন্যায্যতার আন্দোলন।’